গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য “সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫” নামে একটি আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের মতামতের আলোকে খসড়াটি চূড়ান্ত করবে সরকার। কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রণীত খসড়ায় সাংবাদিকগণ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সহিংসতার শিকার হলে আদালতে অভিযোগ দাখিল করতে হবে। এতে থানায় অভিযোগ দায়েরের বিধান না থাকায় সাংবাদিকরা বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে হয়রানির শিকার হতে পারেন। অপরদিকে এ আইনের অপরাধের ধারাটি জামিনযোগ্য হওয়ায় অপরাধীরা গ্রেফতার হওয়ার পরই আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসবে। আর ভিকটিম সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীর অভিযোগ সত্য প্রমাণ করতে না পারলে তার ভাগ্যে রয়েছে জেল ও জরিমানা। অপরদিকে সংবাদপ্রকাশের জেরে কেউ যদি সংবাদের সোর্স জানতে চাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে তাহলে তাকে শাস্তির আওতায় আনার কোন বিধান নেই খসড়ায়। এসব বিষয়ে সংশোধন করেই আইনটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। অন্যথায় সুরক্ষার পরিবর্তে সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সংগঠনগুলো।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-এর খসড়াটিতে ৬টি অধ্যায় ও ২০টি ধারা রয়েছে। খসড়াটিতে বেশকিছু সংশোধনী জরুরী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যথায় সংশোধনী ছাড়া কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী হুবহু অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। সাংবাদিকতার সুরক্ষার বদলে হয়রানি বাড়তে পারে। আবার তদন্তের দুর্বলতার কারণে সাংবাদিকদের হয়রানির অভিযোগ অসত্য প্রমাণিত হলে উল্টো সাংবাদিকের জেল জরিমানা হতে পারে। এ জন্য অধ্যাদেশ জারি হওয়ার পর বিতর্ক এড়াতে বা নতুন করে উদ্ভূত সমস্যা যাতে সৃষ্টি না হয় এ জন্য অধ্যাদেশ পাসের আগে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের বিচার হয় না। আইনটি এমনভাবে করতে হবে যাতে করে কেউ সাংবাদিকদের হুমকী, ধমকী, হয়রানি ও নির্যাতন করতে সাহস না পায়। আর সাংবাদিকদের বিচার পাওয়ার পথটি সহজ করতে হবে। এ জন্য আইনে থানায় অভিযোগ দায়েরের বিধান করতে হবে এবং সাংবাদিক নির্যাতনের অপরাধ অজামিনযোগ্য করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে নির্যাতনকারীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষার অন্যতম বিষয় হলো কর্মস্থলে নানাভাবে হয়রানি। নিয়োগপত্র না দেয়া, আবার কথায় কথায় চাকরি চলে যাওয়া। মাসের পর মাস বেতন বকেয়া থাকা। ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না করা। এ বিষয়গুলো আইনের মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। পেশাগত সুরক্ষার মধ্যে অবশ্যই এসব বিষয়ে সুরক্ষা দেয়া প্রয়োজন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির(ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ৫ আগস্টের পরও অসংখ্য সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার এখনো তদন্ত শেষ হয়নি। সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কখনো কখনো নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সুরক্ষা আইনে এমন বিধান থাকতে হবে যাতে করে কেউ সাংবাদিকের হয়রানি করতে সাহস না পায়। অভিযোগ থেকে বিচার শেষ হওয়া পর্যন্ত পদ্ধতিটি যাতে সহজ এবং বিনামূল্যে হয়। আর নির্যাতনকারী যেন কঠোর শাস্তি পায়। আইনের এমন বিধান রাখার জন্য তিনি দাবি জানান।

ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, সাংবাদিকগণ পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পদে পদে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন। আইনে এমন কিছু বিধান থাকা প্রয়োজন যাতে করে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ হয়। কেউ যেন কোন সাংবাদিকের গায়ে হাত দেয়ার সাহস না পায়। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় এ বিধানগুলো অনুপস্থিত। দায়সারাভাবে আইন করে লাভ হবে না। সাংবাদিক নির্যাতন অজামিনযোগ্য রেখে কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। তাহলেই এ আইনের সুফল সাংবাদিকরা ভোগ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম মহসিন বলেন, সাংবাদিকদের শারীরিক নিরাপত্তার পাশাপাশি পেশাগত নিরাপত্তা দেয়া প্রয়োজন। ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে সরকারকে জোর দিতে হবে এবং আইনী বিধান করতে হবে। সাংবাদিকদের চাকরির সুরক্ষার বিষয়টি আইনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। আর সাংবাদিক নির্যাতনের আইনটিও কঠোর হওয়া প্রয়োজন। যাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার না হন।

গণমাধ্যম সংস্কার নিয়ে কাজ করা সংগঠন জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ায় বেশকিছু সংশোধনী সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে সংগঠনটির আহ্বায়ক প্রবীণ সাংবাদিক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষার জন্য পৃথক আইন প্রণয়ন করা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু খসড়ায় বেশকিছু বিধান রয়েছে, যা সংশোধন করা জরুরী। এর মধ্যে যেমন, থানায় অভিযোগ দাখিলের বিধান, সহিংসতা বা হয়রানির পরিমাণ অনুযায়ী সাজা নির্ধারণ এবং সাংবাদিক নির্যাতনের অপরাধ অজামিনযোগ্য করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বিশেষ আইন করতে গিয়ে যাতে এমন বিশেষ না হয় যে নির্যাতনের পরও সাংবাদিকরা প্রতিকার না পায় বা অভিযোগ করতেই সাহস না পায়। এ জন্য স্বাভাবিক আইনের মতোই বিচারপ্রাপ্তির পথটা সহজ করতে হবে এবং দ্রুত যেন বিচারকাজ সম্পন্ন হয় সে বিধান করতে হবে।

খসড়ার তৃতীয় অধ্যায়ের ধারা: ৮ এ বলা হয়েছে, “ধারা ৮। অভিযোগ দায়ের- (১) পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোন সাংবাদিক/সংবাদকর্মী সহিংসতার শিকার হইলে তিনি এখতিয়ারাধীন কোন প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে লিখিতভাবে বা অনলাইনের মাধ্যমে বা তাহার কোন প্রতিনিধির মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন। (২) উপধারা (১) এ দায়েরকৃত অভিযোগ প্রাপ্তির পর প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত উক্ত অভিযোগটি সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের নিকট প্রেরণ করিয়া মামলা দায়েরের নির্দেশ দিবেন এবং ৩০ (ত্রিশ) কার্য দিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ জারি করিবেন। (৩) যুক্তিসংগত কারণে উপধারা (২) এ উল্লেখিত সময়ের মধ্যে তদন্তকার্য সম্পন্ন করা সম্ভব না হইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত হইয়া বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করিবেন এবং আদালত সহিংসতার শিকার সাংবাদিক/ সংবাদকর্মীর শুনানি গ্রহণ করিয়া তদন্তের জন্য আরও ৩০ (ত্রিশ) কার্য দিবস বৃদ্ধি করিতে পারিবে।”

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, উল্লেখিত ধারায় অভিযোগ দায়েরের জন্য আদালতে যাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমানে কোন সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ আইনের বিধানে থানায় অভিযোগ দায়েরের বিধান না থাকায় পুলিশ সাংবাদিকের কোন অভিযোগ গ্রহণ না করার আশঙ্কা রয়েছে। থানায় অভিযোগ দায়ের করলে সহজে ও বিনা খরচে প্রতিকার পাওয়া যায়। এ জন্য উক্ত ধারায় থানায় অভিযোগ দায়েরের বিধান রাখতে হবে। আর তদন্ত কাজটি সহজ করতে হবে। এখানে অভিযোগ তদন্তের জন্য ৩০ দিনের সময়সীমার কথা বলা হলেও তা বাস্তবে সম্ভব হবে না। আর দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জন্য কোন সময়সীমার কথা বলা হয়নি। তদন্তসহ দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জন্য সময়সীমা বেধে দেয়া প্রয়োজন।

এ জন্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ-এর সংশোধনী প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ধারা: ৮ এর সংশোধিত রূপটি এমন হতে পারে, “৮। অভিযোগ দায়ের।- (১) পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোন সাংবাদিক/সংবাদকর্মী সহিংসতার শিকার হইলে তিনি এখতিয়ারাধীন থানায় অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন অথবা এখতিয়ারাধীন কোন প্রথম শ্রেণির জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে লিখিতভাবে তিনি নিজে বা তাহার কোন প্রতিনিধির মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন। (২) উক্ত অভিযোগ ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী যে কোন তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করে অথবা তদন্ত ছাড়াই ম্যাজিস্ট্রেট উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে ১৮০ কার্য দিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করবেন।”

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়ার ৯ নাম্বার ধারায় বলা হয়েছে, “ধারা ৯। অপরাধ ও শাস্তি- কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোন সাংবাদিক/ সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানি করিলে, উহা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি মাত্রা ভেদে অন্যূন ১ (এক) বৎসরের কারাদণ্ড বা অনুর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) বৎসরের কারাদণ্ড বা অন্যূন ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা অর্থ দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”

সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, এই একটি মাত্র ধারায় সকল প্রকার অপরাধের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। আর তাতে এক থেকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা এক লাখ টাকা অর্থ দন্ডের কথা বলা হয়েছে। আদালত অভিযুক্ত আসামীকে কারাদন্ড না দিয়ে শুধু জরিমানা করতে পারবেন। এ ধারায় সহিংসতার পরিমাণের কথা উল্লেখ করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা এমন পর্যায়ে পড়ে যে, গুরুতর আহত হয়ে হাপাতালে ভর্তি হতে হয়, অঙ্গহানি হতে পারে। এমন কী মৃত্যুর মুখোমুখিও হতে পারে। এসব অপরাধের সহিংসতার জন্য এ ধরনের জেল অথবা জরিমানার বিধান খুবই দুর্বল শাস্তি হতে পারে। বিদ্যমান ফৌজদারী অপরাধে দন্ডবিধিতে সহিংতায় আঘাত ও গুরুতর আঘাতের অপরাধে আরো বেশি শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। এ জন্য সহিংসতার ধরন অনুযায়ী এ ধারাটিতে আরো কয়েক প্রকারের শাস্তির বিধান রাখা যেতে পারে।

অত্র অধ্যাদেশের খসড়ার ধারা ৪ ও ধারা ৫ এ সাংবাদিকতার পেশাগত দায়িত্বপালনকালে বাধা প্রদান না করা ও সোর্স জানতে চাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ না করার জন্য বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি এসব ধারা লংঘন করে তাহলে কি ধরনের শাস্তি দেয়া হবে তা ধারা ৯ তে বলা হয়নি। এসব কারণে ধারা ৯ এ শাস্তির বিধানে সংশোধন করা জরুরী।

জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশ-এর সংশোধনী প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, সহিংসতা ও হয়রানির ধরন অনুযায়ী অপরাধের শাস্তির বিধান সম্বলিত ধারা ৯ এর সংশোধিত রূপটি হতে পারে “ ধারা ৯। (১) অত্র আইনের ধারা ৪ ও ধারা ৫ লংঘন করিয়া কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোন সাংবাদিক/সংবাদকর্মীর সংবাদের উৎস প্রকাশ করিতে চাপ প্রয়োগ করিলে অথবা তথ্য সংগ্রহে ও পেশাগত কাজে বাধা প্রদান করিলে, উহা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি ১ (এক) বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবেন। (২) কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোন সাংবাদিক/ সংবাদকর্মীকে প্রাণনাশের হুমকিসহ যে কোন প্রকার ক্ষতি করার হুমকি প্রদান করিলে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করিলে এবং হেনস্থা ও লাঞ্ছিত করিলে উহা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি অন্যূন ১ (এক) বৎসরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনুর্ধ্ব ৩ (তিন) বৎসরের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে এবং তদুপরি ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা পর্যন্ত অর্থ দণ্ডে দণ্ডিত হইবে।

(৩) কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোন সাংবাদিক/ সংবাদকর্মীকে মারধোর করে বা যৌন হয়রানি করে বা সহিংসতা করে বা স্বেচ্ছায় আঘাত করে আহত করিলে অন্যূন ২ (দুই) বৎসরের স্বশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনুর্ধ্ব ৭ (সাত) বৎসরের স্বশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে এবং তদুপরি অর্থ দন্ডে দন্ডিত হইবে। (৪) কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পেশাগত কর্মে নিয়োজিত কোন সাংবাদিক/ সংবাদকর্মীকে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করিলে, দেশীয় অস্ত্র দ্বারা বা কোন বস্তু দ্বারা গুরুতর আঘাত করিলে অথবা বিষাক্ত কোন দ্রব্য প্রয়োগ করে আহত করিলে অন্যূন ৫ (দুই) বৎসরের স্বশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনুর্ধ্ব ১০ (দশ) বৎসরের স্বশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবে এবং তদুপরি অর্থ দন্ডে দন্ডিত হইবে। (৫) হত্যা কিংবা হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত দান অথবা অত্র আইনে উল্লেখ নেই এমন কোন অপরাধ করিলে দন্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযাযী বিচার হইবে।”

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়ার ১৩ নাম্বার ধারায় বলা হয়েছে “ধারা: ১৩। আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতা এবং আপোষযোগ্যতা।- এই অধ্যাদেশের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং আপোষযোগ্য হইবে।”

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এ বিধানের বিষয়ে বলেন, এ বিধান সংশোধন না হয়ে অধ্যাদেশ পাস হলে সাংবাদিকদের হয়রানি করলে বা নির্যাতন করলে বা সহিংসতা করার অপরাধে পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান করার সাথে সাথেই জামিনে মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসবে। কেননা অত্র আইনের সকল অপরাধকে উক্ত ধারায় জামিনযোগ্য করা হয়েছে। যার ফলে আসামীরা সাংবাদিক নির্যাতনে আরো উৎসাহিত হবে। সুতরাং এ ধারাটিরও সংশোধন করা জরুরী। এ জন্য ধারা ৯ তে সংহিসতার প্রকারভেদ অনুযায়ী কয়েক দফা শাস্তির বিধান থাকলে, তার মধ্য হতে কম অপরাধের ধারাগুলো জামিনযোগ্য রেখে গুরুতর অপরাধের ধারাগুলো অজামিনযোগ্য রাখা যেতে পারে।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, অত্র আইনের অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে ধারা ১৪ তে বলা হয়েছে, “ধারা ১৪। তদন্ত।- (১) এই অধ্যাদেশের অধীন দায়েরকৃত অভিযোগ ও মামলা সহকারী পুলিশ সুপারের নিন্মে নহে এইরূপ পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত করা হইবে।” র্অথাৎ এ আইনের মামলার তদন্ত সহকারী পুলিশ সুপারের উপরের কর্মকর্তারা করবেন। এতে করে তদন্তে জটিলতা দেখা দিতে পারে। ফৌজদারী অপরাধে সাধারণত পুলিশের এস.আই বা ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তারা তদন্ত করে থাকেন। এ ছাড়াও আদালত প্রয়োজনে সিআইডিসহ অন্যান্য তদন্ত সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে এ বিধানের ফলে তদন্তে সময়ক্ষেপন ও নানা ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য তদন্তের বিষয়টি আরো সহজ করা প্রয়োজন।

সাংবাদিক সংগঠনের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তদন্ত সহজ করার জন্য এ ধারার সংশোধিত রূপটি হতে পারে “ ধারা ১৪। তদন্ত।- (১) এই অধ্যাদেশের অধীন দায়েরকৃত অভিযোগ ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী আদালতের নির্দেশে ক্ষমতাপ্রাপ্ত যে কোন কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত করা যাইবে। প্রয়োজনে প্রেস কাউন্সিল বা কমিশনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমেও তা তদন্ত করা যাইবে। (২) তদন্ত পরিচালনার ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির সকল বিধিবিধান প্রযোজ্য হইবে।”

অত্র অধ্যাদেশের খসড়ার ধারা ১৫তে বলা হয়েছে, “ধারা ১৫। মিথ্যা অভিযোগ করিবার শাস্তি- যদি কোন সাংবাদিক/সংবাদকর্মী অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে এই অধ্যাদেশের অধীন অভিযোগ করিবার আইনানুগ কারণ নাই জানিয়াও আবেদন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড অথবা ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অত্র আইন অনুযায়ী কোন সাংবাদিক প্রভাবশালী কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন প্রকার হুমকী ও হয়রানির অভিযোগ করলে তা যদি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে উক্ত সাংবাদিকের ভাগ্যে জেল ও জরিমানা রয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকি ধমকি, হয়রানি ও নির্যাতন কোন সাধারন মানুষ করে না। প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই এ ধরনের কাজ করে থাকে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। এমন কী প্রভাবশালীরা প্রভাব বিস্তার করে তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করবে। আবার অনেকে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিতে চাইবে না। এক্ষেত্রে যদি এ বিধান থাকে তাহলে নির্যাতিত সাংবাদিকরা ভয়ে অভিযোগ করা থেকেই বিরত থাকবে। কেননা প্রমাণিত নাহলে জেল/জরিমানার ভয় থেকে যায়। এ জন্য এ বিধানটি বাতিল করা প্রয়োজন।