গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়ে এক মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা অবশেষে মারা গেলেন ৯০ বছর বয়সী নাসিরউদ্দিন পালোয়ান। রাজধানীর উত্তরার শিপ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বুধবার রাতে মারা যান।
নাসিরউদ্দিনের মৃত্যুর পর বৃহস্পতিবার সকালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাঁর লাশ নিয়ে কাশিমপুর-কোনাবাড়ী আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাঁরা হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে স্লোগান দেন এবং বিচারহীনতার প্রতিবাদ জানান।
নিহতের পরিবারের দাবি, গত ২৭ মে রাত আনুমানিক ১২টার দিকে কোনাবাড়ির জরুন এলাকায় পূর্বশত্রুতার জেরে কিশোর গ্যাংয়ের অন্তত ১৪-১৫ জন সদস্য পরিকল্পিতভাবে নাসির উদ্দিনের বসতবাড়িতে হামলা চালায়। হামলায় নেতৃত্ব দেন স্থানীয় বিএনপি নেতার ছেলে মো. ওয়াসিফ সালিম (২২) ও সালাউদ্দিন মিয়া (৪৬)। তাঁদের নির্দেশে হামলাকারীরা দা, ছুরি, হকি স্টিক, লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ওপর এলোপাতাড়ি হামলা চালায়।
এ হামলায় নিহত নাসিরউদ্দিন ছাড়াও তাঁর বড় ছেলে আক্তার পালোয়ান (৫৪), লুৎফর পালোয়ান (৫০), ছোট ছেলে শাহ আলম পালোয়ান (৪৮), নাতনি শারমিন (২৭) ও নাতি শাহরিয়া (১৭) সহ পরিবারের ৮ জন গুরুতর জখম হন। আহতদের উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নাসিরউদ্দিনের অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য উত্তরার শিপ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ঘটনার পর নিহতের ছেলে মো. শাহ আলম পালোয়ান কোনাবাড়ি থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। এজাহারে নাম উল্লেখ করা ১৫ জন আসামির মধ্যে রয়েছেন—পাভেল (৩০), মিনহাজ শেখ (২৫), ফজলে রাব্বী (২৭), বিপ্লব খান (৪০), সিয়াম (২২), নাওফিল রাব্বী (২৩), রাহিম (১৮), সিহাফ (২৭), হাবিব (৪০), আশিক (২২), জিসান (২৩), নাজমুল (২০), আমির হোসেন (২৬) প্রমুখ। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৪-১৫ জনকে আসামি করা হয়।
কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাচেষ্টা মামলা ছিল। তবে নাসিরউদ্দিনের মৃত্যুর পর আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।” তবে ঘটনার এক মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রভাব ও গ্যাংয়ের সন্ত্রাসের কারণে এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।