তেহরানে বাংলাদেশের দূতাবাস এখন সরাসরি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাতে ইসরাইলি হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুগুলোর এক কিলোমিটারের ভেতরেই অবস্থান করছে দূতাবাস ভবন। বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো তেহরান মিশনের এক গোপন রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দূতাবাস চ্যান্সারি কমপ্লেক্সের কাছাকাছি অন্তত দুটি সংবেদনশীল স্থাপনা রয়েছে, যার একটি হলো ইরানের একটি পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র। অন্যটি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) স্থাপনা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই দুটি স্থাপনাই ইসরাইলী হামলার লক্ষ্যবস্তু। ফলে এসব স্থাপনার এত কাছে অবস্থান করায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা, স্টাফ, তাদের পরিবার এবং আশপাশে বসবাসকারী কূটনৈতিক ব্যক্তিরা গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই মিশনে কর্মরতদের পরিবারকে শহরের বাইরে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো তেহরানের বাইরে তাদের রাখার মতো উপযুক্ত নিরাপদ আবাসন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন মিশনের এক পদস্থ কর্মকর্তা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে রাষ্ট্রদূত, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারকে তেহরান থেকে তৃতীয় কোনো দেশে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সবার নিরাপত্তাকে। তেহরানে এখন বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত আছেন রাষ্ট্রদূত, দুইজন কর্মকর্তা, পাঁচজন কর্মচারী এবং তাদের পরিবারসহ প্রায় ৪০ জন। এ ছাড়া রেডিও তেহরানে কর্মরত রয়েছেন আরও আটজন বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারÑ মোট ২৭ জন। তেহরানে অবস্থান করছেন আরও ১০ থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী এবং প্রায় ১০ জন পেশাজীবী। সব মিলিয়ে শহরটিতে এখনো শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছে সেগুনবাগিচা। তেহরান ছাড়াও ইরানের অন্যান্য শহরে আরও প্রায় ৬০০ বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। কেউ কেউ সেখানে পরিবার গড়ে স্থায়ী হয়েছেন। এছাড়া ইরানে অবৈধভাবে থাকা আরও প্রায় ৮০০ বাংলাদেশি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছেন। মানব পাচারের ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় ইরানে আরও ৩০০ থেকে ৫০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন, যারা অন্য দেশে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

গত ১৩ জুন ২৮ জন বাংলাদেশির দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা তেহরানেই আটকে পড়েছেন। সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ দূতাবাস জরুরি হটলাইন চালু করেছে। ইরানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য বলা হয়েছে নিচের নম্বরগুলোতে ফোন করতে (হোয়াটসঅ্যাপসহ): +৯৮ ৯৯০ ৮৫৭ ৭৩৬৮, +৯৮ ৯১২ ২০৬ ৫৭৪৫। তেহরানে হামলার বিষয়ে ইসরাইলের হুঁশিয়ারিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়েছে বাংলাদেশ মিশন। ইসরাইলি সেনাবাহিনী তেহরানকে ‘বৈরুত বানিয়ে ফেলার’ ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে এক কর্মকর্তা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ মিশনের ভবন ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তেহরানের পরিস্থিতি সরকার নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে দূতাবাসের কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।