বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা এখনও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আর এ কারণেই জনগণসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হচ্ছে। ঢাকা জেলাধীন দোহার উপজেলার অন্তর্গত নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি হারুন মাস্টারকে ফজরের নামাজের পর দুর্বৃত্তরা নৃশংসভাবে গুলী করে হত্যার ঘটনায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
এই হত্যাকে অমানবিক, লোমহর্ষক, পৈশাচিক, ন্যাক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত বর্ণনা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, হারুন মাস্টারকে ফজরের নামাজের পর দুস্কৃতিকারিদের কর্তৃক গুলী করে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় প্রমাণ হয় যে, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর’রা এখনও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। হারুন মাস্টারকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দ্বারা গুলী করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনা সেটিরই নির্মম বহিঃপ্রকাশ। এসব সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই।
সন্ত্রাসীদের দমণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কঠোর পন্থা অবলম্বন করার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নইলে সন্ত্রাসীদের দাপটে দেশ আবারো অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও রক্তাক্ত পথ অনুসরণ করে ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আর তাহলেই দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তিনি অবিলম্বে হত্যাকারী দুস্কৃতিকারিদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহবান জানান।
এদিকে অপর এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব গত সোমবার ভোলায় চাঁদার দাবিতে স্বামীকে ব্যাপক মারধর ও স্ত্রীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করার ন্যাক্কারজনক ও কাপুরোষিত ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও দেশে এখনও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে দুস্কৃতিকারিরা। ভোলায় নারীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দুস্কৃতিকারিদের দ্বারা সংঘটিত এ ধরণের বর্বরোচিত ও পশুর চেয়েও হিংস্রতায় গোটা দেশের মানুষ হতভম্ব। নারীর ওপর ধারাবাহিক এ ধরণের পাশবিক নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনায় দেশের নারী সমাজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাই দুস্কৃতিকারিদের কঠোর হস্তে দমণের কোন বিকল্প নেই।
বিএনপিজাতীয় ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা
করে যাচ্ছে ---সালাহ উদ্দিন
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, আমরা তো অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি। অর্থবিল আর আস্থাভোট ছাড়া বাকি বিষয়ে পার্লামেন্ট সদস্যরা স্বাধীন থাকবেন এ বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে।
গতকাল বুধবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের বৈঠক শেষে এ কথা জানান তিনি।
গতকাল আলোচনার বিষয় ছিল সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মধ্যে কি সংশোধনী আনা যায়, এতে বিচার বিভাগকে না রেখে উত্তম কোনো প্রস্তাব আছে কি না? সে বিষয়ে সবার মতামত।
সালাহ উদ্দিন বলেন, নির্বাচনী এলাকা সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে আমি প্রস্তাব করেছিলাম। যেটিতে সবাই ঐক্যমত। আর্টিকেল ১১৯ দেওয়া আছে। তবে নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণ একটি বডি বা বিশেষায়িত কমিশন করা প্রস্তাবে দ্বিমত, আমরা বলেছি, বিশেষায়িত কমিটি করতে হবে। আইন সংযুক্ত করা ক্ষেত্রে আমরা একমত হয়েছি।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রায় পুনর্বহাল, পুনর্বহালের রিভিউ বিচারাধীন অবস্থায় আছে, আশা করি রায় জনগণের পক্ষে যাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রণালীতে দেখা যায়, এটি জুডিশিয়ালি মধ্যে সীমাবদ্ধ। ইমিডিয়েটলি, অবসরপ্রাপ্ত চিফ জাস্টিস দিয়ে শুরু হয়, সর্বশেষ অ্যাপিলড ডিভিশন দিয়ে শেষ হয়। কোনো বিধান দিয়ে একমত না হলে, সর্বশেষ রাষ্ট্রপতিকে করা হয়। পার্লামেন্টে এ বিষয়ে আলোচনা হবে, তবে এখন যদি আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে বলতে পারি, জুডিশিয়ারিকে বাদ রেখে আরও দু- একটি পথ রাখা যায়, যেটা সবার গ্রহণ যোগ্যতা ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ হয় এবং প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক্রমে উপদেষ্টা নিয়োগ হবে। যাদের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় যোগ্যতা থেকে তাদের কনসিডর করা যায়নি।
বলা হয় বিএনপি কারণে সংস্কারে ঐকমত্য হচ্ছে এমন মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জাতির সঙ্গে একটা ঐক্যমতে আসার জন্য নিজ উদ্যোগে আমরা প্রধানমন্ত্রীর জীবদ্দশায় ১০ বছরে বেশি নয়, এ বিষয়ে একমত হয়েছি। যাতে আর কেউ স্বৈরাচার হয়ে না আসতে পারে। একটা ব্যালেন্স যাতে সরকার ব্যবস্থায় হয়। তত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদের ক্ষেত্রে বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে, তিনমাস বা ৯০ দিন। যদি কোনো কারণে বিলম্বিত হয়, আরও এক মাসের একটা বিধান রাখা যেতে পারে সংবিধানে। তবে স্থির থাকতে হবে তিনমাসে, এখানে আমরা আমাদের মতামত দিয়েছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানে তো স্থানীয় সরকার নির্বাচন নেই। নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে দুইটা জিনিস একটি হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন আরেকটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। সেটা এখনো বহাল আছে। তাতে কোনো সংশোধন আসেনি। প্রস্তাব তো যে কেউ দিতেই পারে।