কুরবানির ঈদের তিন দিনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ৫২ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করলেও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আরও দুইদিন এ কাজ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। শনিবার ঈদের দিন সকালে নামাজের পরপরই রাজধানীর অলিতে গলিতে পশু কুরবানি ও মাংস প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়। দুপরের আগেই রাস্তায় জমা পশুবর্জ্য অপসারণে মাঠে নামেন দুই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। সেদিন দুপুরে বর্জ্য অপসারণ কাজ উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছিলেন, সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেওয়া ১২ ঘণ্টার মধ্যেই প্রথম দিনের বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করছেন। ঈদের পর আরো দুই দিন পশু কুরবানি দেওয়ার সুযোগ থাকে। ফলে রবি ও সোমবারও কেউ কেউ কুরবানি দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনও বর্জ্য সরাতে মাঠে থেকেছে।

দক্ষিণের সমাপ্তি ঘোষণা : আনুষ্ঠানিকভাবে কুরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সোমবার বিকালে রাজধানীর ওয়াসা ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসসিসি প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া এ সমাপ্তি ঘোষণা করেন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

প্রশাসক বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে শতভাগ কুরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। তৃতীয় দিনে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে শতভাগ কুরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। তৃতীয় দিন দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ৩১ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার অধিক বর্জ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী ইজরার আটটি পশুর হাটের বাঁশের খুঁটি, ভাসমান ও উড়ন্ত ময়লা ইতোমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। হাটের বর্জ্য সাফ করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানান শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, এ বছর ঈদুল আজহায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মোট ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৪টি পশু কুরবানি করা হয়েছে। প্রথম দিনে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩১৭টি, দ্বিতীয় দিনে ৩১ হাজার ৭৪৫টি এবং তৃতীয় দিনে ১ হাজার ৬৯২টি পশু ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে কুরবানি করা হয়েছে। এই সিটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন ১২ হাজার ৮৫৩ জন কর্মী। ছোট-বড় ২০৭৯টি যানবাহন এবং ৩৪৪টি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে এ কাজে।

কুরবানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে নগরবাসীর মধ্যে প্রায় ৪৫ টন ব্লিচিং পাউডার, ২০৭ গ্যালন (প্রতি গ্যালনে ৫ লিটার) এবং ১ লাখ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করার তথ্য সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন ডিএসসিসি প্রশাসক। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই কুরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ করায় মাঠ পর্যায়ের পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

উত্তরে সাফসুতরো চলছে : রাজধানীর উত্তরাঞ্চল থেকে ঈদুল আজহার তিন দিনে ২০ হাজার ৮৮৯ টন কুরবানির পশু বর্জ্য অপসারণের পর, আরও দুইদিন এ কাজ চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন-ডিএনসিসি। সোমবার ঈদুল আজহার তৃতীয় দিনে কুরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা থাকলেও তা গতকাল মঙ্গল ও আজ বুধবার পর্যন্ত চালিয়ে হবে বলে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন। সোমবার বিকালে গুলশান-২ এ ডিএনসিসি কার্যালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, উত্তর সিটি এলাকায় ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮০টি পশু কুরবানি হয়েছে এবার। এরমধ্যে ৩ লাখ ৫৯ হাজার গরু, ১ লাখের বেশি ছাগল, ৪ হাজার ভেড়া এবং ১ হাজার ৭৬২টি মহিষ।

প্রশাসক বলেন, প্রথম দিনের আগে আমরা এস্টিমেট করেছিলাম এবার প্রায় ২০ হাজার টন ময়লা উৎপাদন করা হবে। সোমবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ২০ হাজার ৮৮৯ টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে, যেটা আমরা কালেক্ট করতে পেরেছি এবং ল্যান্ড ফিলে ডাম্প করতে পেরেছি। প্রথম দিনে রাত ৮টা পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ বর্জ্য আমরা কালেক্ট করতে পেরেছিলাম। তারপরও যেহেতু কুরবানির রাতের বেলা হয়েছে, সে ময়লাগুলো আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বাসা বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে রাস্তায় জড়ো করেছেন। সকালে আমাদের কর্মীরা এ ময়লাগুলো ল্যান্ড ফিলে নিয়ে গেছেন। তারপর গতকাল সন্ধ্যায় ও রাতে কিছু কুরবানি হয়েছে, সেগুলো আজকে সকালে ল্যান্ড ফিলে নিয়েছেন। সেদিক থেকে আমরা বলতে পারি আমাদের যে টার্গেট ছিল ২০ হাজার টন সেটা ফিলআপ হয়েছে।

এখনও বর্জ্য তৈরি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে বিকালেও কিছু কুরবানি হবে, সেগুলো কুরবানি হলে আমি এগুলো কারেক্ট করব। অফিসিয়ালি আমরা ভেবেছিলাম আজকে বর্জ্য কালেকশনের সমাপ্তি ঘোষণা করব, কিন্তু সেটা আমরা কন্টিনিউ করব সমাপ্ত ঘোষণা না করে। আমরা জনগণের সঙ্গেও কথা বলে দেখেছি, যে পাটিগুলোর ওপরে মাংস বানানো হয়, সেগুলোও অনেকে রেখে দেন, একদিন দুইদিন পরেও সেগুলো ডাস্টবিনে পৌঁছান। সেক্ষেত্রে আগামীকাল (মঙ্গলবার) ও পরশু দিনও (বুধবার) বর্জ্যগুলো এসটিএসগুলোতে বা বাড়ির সামনে পাব বলে আমরা আশা করছি। সেক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলমান থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে কুরবানির বর্জ্য অপসারণে সম্পৃক্ত মাঠ পর্যায়ের ১০ হাজার কর্মীসহ অন্যদের ডিএনসিসি ও নগরবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান মোহাম্মদ এজাজ।