জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ষড়যন্ত্রকারীরা সব সময় থাকবে। অতীতেও ছিল। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কাছের লোক যখন আঘাত দেয় তখন আঘাতটা বেশি লাগে। জুলাই হত্যাকারীদের বিচার শেষ না করে যারা নির্বাচনের কথা বলছেন, এখানে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই। জনগণ আর লুটপাটের নির্বাচন চায় না। দিনের ভোট রাতে কিংবা ডামি মার্কা নির্বাচন আমরা আর দেখতে চাই না। এইজন্য আমরা বলছি পুরাতন রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। তা না হলে ফ্যাসিস্ট হাসিনার মতো আবারও কোনো নতুন ফ্যাসিস্ট তৈরি হবে। আর যারাই জুলাই শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতক করবে জাতি তাদের ক্ষমা করবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার চেয়ে ছিলাম, জুলাই গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার দাবি করছি। যারা সংস্কার চাই না তারাই ফ্যাসিস্ট হাসিনা মার্কা নির্বাচন চায়। ইতিহাস সত্য উদ্ঘাটন করে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্যমনি ছিল ছাত্রশিবির।

গতকাল রোববার বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঘোষিত “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-২০২৪” শীর্ষক স্মৃতি লিখন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন-ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মন্জুরুল ইসলাম, ছাত্র শিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, অধ্যাপক মাহফুজ রহমান আকন্দ, শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা সিবগাতুল্লাহ, সাদিক কায়েম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রশিবির সভাপতি এসএম ফরহাদ, শহীদ তাহিরের আম্মু, শহীদ নাসিব হাসান রিয়ান পিতা আব্দুর রাজ্জাক, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, আহত জুলাইযোদ্ধা তাহমিদ হুজাইফা, কওমী মাদ্রাসার ছাত্র জুলাইযোদ্ধা আহমেদ জুবায়ের প্রমুখ। “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-২০২৪” শীর্ষক স্মৃতি লিখন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রাপ্ত হন ৫০জন। এরমধ্যে প্রথম পুরস্কার পান চট্টগ্রামের আশিকুর রহমান, দ্বিতীয় আব্দুর রউফ, তৃতীয় আবরার হাসান রিয়াদ।

এক বছর সময় হলেও জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে চালানো হত্যাকাণ্ডের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, জুলাই গণহত্যার বিষয়ে বিচারিক কাঠামোতেই একটা বছর হয়ে গেছে। সেটা এখনো পর্যন্ত খুব দৃশ্যমান অগ্রগতির দিকে আমরা পৌঁছাতে পারিনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম বড় দায়িত্বের জায়গা হলো, আমাদের যেসব ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবার, যারা অনেক ভাবে এখন অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন, তাদের জন্য পুনর্বাসন করার দরকার। আমাদের আহত জুলাইযোদ্ধা ভাইয়েরা আছেন, অনেকে এখনো পর্যন্ত সুষ্ঠু চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তারা যেতে পারেন নাই। তাদেরকে যেন পরিপূর্ণভাবে সঠিক চিকিৎসা সরকারের তরফ থেকে প্রদান করা হয়।

ডা. তাহের বলেন, সরকারকে বলবো যেখানে যেখানে সংস্কার প্রয়োজন সেখানে সংস্কার করতে হবে। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য, একটি সুস্থ রাজনৈতিক কালচার তৈরির জন্য, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন করার জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌম অটুট রাখার জন্য যা যা করা প্রয়োজন এই সরকারকে তা করতে হবে। তা না হলে শহীদদের কাছে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে ইতিহাস আপনাদের চিহ্নিত করবে।

শহীদ তাহিরের আম্মু বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সন্তান শহীদ হওয়ার কথা বর্ণনা করেন। আবেগে হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করে।

কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্ন দেখছে তরুণ প্রজন্ম। জুলাইয়ে ইতিহাস বিকৃতি করতে না পারে সেজন্য ছাত্র শিবির কাজ করবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সময়ে ছাত্ররা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জুলাই গণহত্যার বিচার এখনও হয়নি। সরকার কে আহ্বান করছি জুলাই গণহত্যার বিচার করতে। জুলাই শহীদদের আশা করে ছিল সবধরনের বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে। আবরার ফাহাদ কে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে ফ্যাসিস্ট ছাত্র লীগ। ১ আগস্ট জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছি।

শহীদ নাসিব হাসান রিয়ান পিতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের বুলেটে শাহাদাত বরণ করে আমার সন্তান। তার বন্ধুের মধ্যে ফারহান ফায়াজ শহীদ হয়। আমার সাহসী ছেলে ৫ তারিখে ফেইসবুক পোস্ট দেয় শহীদ হওয়ার আগে হয়। ‘আজ দেশকে ফ্যাসিস্ট মুক্ত করবো, নয় শহীদ হবো’। আমার ছেলেকে নির্মম ভাবে একের পর এক গুলি করে হত্যা করে সরকারি বাহিনী ও পুলিশ। এই নারকীয় গণহত্যা আর যে এদেশে না হয়।

সাদিক কায়েম বলেন, ২ হাজার শহীদ ও আহত হয়েছে ৪০ হাজার মানুষ। জুলাই ও জুলাইযোদ্দারা আমাদের সম্পদ। জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র রাষ্ট্রীয় ভাবে আইন করে জারি করতে হবে।

ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ।

আহত জুলাইযোদ্ধা তাহমিদ হুজাইফা বলেন, উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার চোখ হারায়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও আমার এখনও বিপ্লবের সুফল ভোগ করতে পারিনি।

আহমেদ জুবায়ের কওমী মাদ্রাসার ছাত্র জুলাইযোদ্ধা বলেন, এই দিনে গত বছর অসংখ্য ভাই শহীদ হয়েছে। শহীদ ভাইদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচার মুক্ত হতে পেরেছি। অসংখ্য মাদ্রাসার ছাত্র শহীদ হলেও আজ মাদ্রাসার ছাত্রদের আজ অবহেলা করা হচ্ছে।

সাবেক সভাপতি মুনঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, জুলাই বিপ্লবে যত পক্ষ শক্তি ছিল এরমধ্যে শিবির সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু দুঃখ নিয়ে বলছি যে জুলাই গণহত্যার বিচার এখনও দৃশ্যমান হয়নি। জুলাই বিপ্লবকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন মহল চক্রান্ত করছে। ছাত্র শিবিরকে এই বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

সিবগাতুল্লাহ বলেন, জুলাই কে জাগ্রত রাখবো ইনশাআল্লাহ।