স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, চলতি দায়িত্ব প্রদান, বদলী ও প্রেষণের ক্ষেত্রে লাগবে সাত ধরনের তথ্য। তার সাথে লাগবে দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনসহ দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের ছাড়পত্রও। এখন থেকে এলজিইডিতে কোন প্রকার পদোন্নতি-বদলীসহ অন্যান্য কার্যক্রম এসব তথ্য-উপাত্ত ছাড়া করা যাবে না। সংস্থাটির প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা মেনে চলার জন্য প্রধান প্রকৌশলীকে একটি চিঠি দিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ৭ মে উন্নয়ন-১ শাখা থেকে চিঠিটি পাঠানো হয়।
চিঠির বিষয় ছিল, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, চলতি দায়িত্ব, বদলি ও প্রেষণ সংক্রান্ত। তাতে বলা হয়, এলজিইডির কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, চলতি দায়িত্ব, বদলি ও প্রেষণ ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে প্রস্তাবিত কর্মকতাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ, বিভাগীয় মামলা, বর্তমান পূর্ববর্তী কর্মস্থলে চাকরি বৃত্তান্ত, বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন, সার্ভিস রুলস বহির্ভূত কোন কার্যক্রম এবং কোন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা আছে কিনা ইত্যাদি যাচাইয়ান্তে সন্তোষজনক প্রতীয়মান হলে পদোন্নতি, চলতি দায়িত্ব, বদলি ও প্রেষণ ইত্যাদি কার্যক্রম প্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত কর্মকর্তা/কর্মকর্তাগণের অনুকূলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) কর্তৃক প্রতিবেদন গ্রহণ করার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
জানা গেছে, এলজিইডির জনবল কাঠামো (২০২০) অনুসারে বিভিন্ন শ্রেণীর মোট অনুমোদিত জনবল রয়েছে ১৩ হাজার ৩৯৪ জন। তার মধ্যে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত রয়েছেন ১ হাজার ৬৭২ জন। বর্তমানে দুইশর মতো পদ শূন্য রয়েছে। সে মতে, প্রথম শ্রেণীর কর্মরত কর্মকর্তার সংখ্যা ১ জাজার ৪৭২ এর কিছু কমবেশি। প্রথম শ্রেনীর এসব কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেই ওই চিঠির নির্দেশনা পালনের জন্য বলা হয়েছে। এর আগেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন লাগতো। তা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে। এবারই প্রথমবারের মতো সহকারী প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত সাত ধরনের তথ্য যাচাই বাছাই করার নির্দেশনা দিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। এত ভালো মন্দ দুটো দিকই আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এতে করে মূলত: বন্ধ হবে বদলী বাণিজ্য-পদোন্নতি।
অভিযোগ রয়েছে, এলজিইডির সাথে জড়িয়ে আছে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের হাজারো কাহিনী। রয়েছে, প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনাও। সম্প্রতি দেশজুড়ে সংস্থাটির বিভিন্ন কার্যালয়ে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালিয়ে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে, অণিয়ম-দুর্নীতির নথিপত্র জব্দ করেছে।
জানতে চাইলে সংস্থাটির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল হাসান দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের এই চিঠিটির ব্যাপারে ভালোমন্দ কিছু বলবোনা। তবে, কর্মকর্তাদের বদলীর ক্ষেত্রে এই নির্দেশনার ফলে দেরী ঘটবে। মাঠ পর্যায়ের উন্নয়নে এর প্রভাব পড়তে পারে। তিনি বলেন, নির্দেশনা মোতাবেক তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করা হলে বা এর প্রচলন চালু হলে কর্মকর্তাদের মধ্যে জবাবদিহিতাসহ কাজে স্বচ্ছতা আসবে। এখন থেকে পদোন্নতি, বদলী হওয়ার জন্য যা ইচ্ছে তাই করা যাবেনা। আবার এসব তথ্য যাচাই বাছাই করবেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেবেন-তাদের স্বচ্ছতা নিয়েও কথা উঠবে। কারন, এটা বাংলাদেশ। একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পক্ষে টাকার বিনিময়ে সব কিছুই করা সম্ভব, যা আমরা দেখে আসছি বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, তদন্ত সঠিক হতে হবে, দুদকও সঠিকতা যাচাই করে ছাড়পত্র দেবে-তাহলেই নির্দেশনার শতভাগ বাস্তবায়ন হবে। সরকারের পক্ষে এ ধরনের নতুন এক নির্দেশনার প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন।
জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী মো: আব্দুর রশীদ মিয়া দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনাটি পেয়েছি। সে মোতাবেকই কাজ করবো। নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সামনে দিনগুলোতে কাজকর্মে নির্দেশনা মেনে চলবে এলজিইডি। তিনি জানান, এ ধরনের নির্দেশনা আগেও ছিল, তবে সেটি মানা হতো কেবল প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে। এবার নির্দেশনায় নতুন কিছু বিষয় সংযোজিত হলো। এলজিইডি বরাবরই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রতিপালন করে আসছে।