জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের এলডি হলে আয়োজিত এ বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া এবং জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যরা কমিশনকে জানান যে, যেসব আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাদের সন্তানরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তা আজও পূরণ হয়নি। বরং বিভিন্ন দপ্তরে তারা নানাভাবে লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তারা জানান, নানা সময়ে নিজেদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলেও অদৃশ্য প্রতিবন্ধকতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

শহীদ পরিবাররা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের একটি আইনি ভিত্তি থাকা প্রয়োজন, একইসঙ্গে তাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টিও জরুরি। এ বিষয়ে উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্যরা একমত পোষণ করেন। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলাই ফাউন্ডেশন এই বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে শহীদ পরিবারবর্গ যে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না এবং বঞ্চনার শিকার হচ্ছেনÑতা তাদের জানা ছিল না। কমিশন আশ্বস্ত করেছে যে, উত্থাপিত সব বিষয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছে দেওয়া হবে।

শহীদ পরিবাররা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা প্রকাশ করার প্রেক্ষিতে কমিশন এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করে। বৈঠকে জুলাই শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া (শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা), মীর মোস্তাফিজুর রহমান (শহীদ মুগ্ধর বাবা), মো. মহিউদ্দীন (শহীদ ইয়ামিনের বাবা), কবির হোসেন (শহীদ জাবির ইব্রাহিম এর পিতা), মোহাম্মদ আবদুল মতিন (শহীদ শাহরিয়ার এর পিতা), মোঃ গোলাম রাজ্জাক (শহীদ রিয়ানের বাবা), মো. গাউছ উল্লাহ (শহীদ আব্দুল্লাহর ভাই), সাইফ আহমেদ খান (শহীদ আব্দুল হান্নানের ছেলে), মো. ওবায়দুল হক, সৈয়দ গাজীউর রহমান (শহীদ মোন্তাসিরে বাবা)।

এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশপত্র শিগগিরই সরকারের কাছে জমা দেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। শনিবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।

গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় শনিবারও জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পর্যালোচনা সভা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জাতীয় সংসদের কমিশন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ঐকমত্য কমিশন জানায়, সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম. এ. মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক এবং ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।

আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। এছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সভায় সনদ বাস্তবায়নের নানা সুপারিশ নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়, পাশাপাশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আগের দিনের অসমাপ্ত আলোচনার ধারাবাহিকতায় আজকের অধিবেশন সম্পন্ন হয়।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ সুপারিশপত্র খুব শিগগিরই সরকারের কাছে জমা দেওয়া যাবে বলেও আশা করছে কমিশন।