* একটি দেশকে দাঁড়াতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে ---নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেশ-বিদেশের গবেষক ও বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষকরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস রক্ষায় জাতীয় অঙ্গীকারের আহ্বান জানান। তারা এই সম্মেলনকে একটি ‘জাতীয় অঙ্গীকারে’ পরিণত করার লক্ষে জুলাই বিপ্লবের দলিলপত্র, ভিডিও, ছবি নিয়ে একটি আর্কাইভ গড়ে তোলার এবং স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে জুলাই বিপ্লবের ইতিহাস সত্যনিষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। তারা বলেন আধুনিক বিশে^র নিষ্ঠুর বর্বর জুলাই গণহত্যার বিচার করতে হবে এবং ইতিহাসের অংশ হিসেবে জুলাই ডিক্লারেশন থাকা জরুরি। তারা আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের দমনমূলক শাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করা হয়। গুম ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। নির্বাচন, গণমাধ্যম ও ছাত্র আন্দোলনের কণ্ঠ রোধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা অপকৌশল ব্যবহৃত হয়। আমরা আজ যে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের পতন দেখেছি, সেটার নিষ্ঠুরতা আমাদের বিবেককে সামগ্রিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে। ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি অগণতান্ত্রিক সরকার বাংলাদেশে এক যুগ ধরে ক্ষমতায় ছিল। জুলাই বিপ্লব প্রমাণ করেছে- জনগণই চূড়ান্ত ক্ষমতার উৎস। ভারতসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি এই বিপ্লবের গভীরতা বুঝে উঠতে পারেনি।

গতকাল রোববার ঢাকা শি^বিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে দিনব্যাপী আয়োজিত এ সম্মেলনে তারা এইসব কথা বলেন। অনুষ্ঠিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দেশ-বিদেশের ১৩টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সোসাইটি সংগঠন অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনের শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়। এরপর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ জাহিদুজ্জামান তানভীনের মা বিলকিস জামান ও বাবা শামসুজ্জামান বক্তব্য প্রদান করেন। সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সম্মেলনটির আহ্বায়ক ড. মো. শরীফুল ইসলাম। সম্মেলনে উপস্থাপনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৪০০ টি প্রবন্ধ জমা পড়ে। এরমধ্যে ৬০টি প্রবন্ধ মৌখিক উপস্থাপনের জন্য ৬০টি পোস্টারকে মনোনীত করা হয়েছে। সম্মেলন শেষে টিএসসি অডিটোরিয়ামে ‘লাল জুলাই’ নামক একটি মঞ্চ নাটক উপস্থাপন করা হয়। উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে উপজীব্য করে আজ ২৮ জুলাই সোমবার বিকাল ৩.০০টায় জীববিজ্ঞান অনুষদের কামাল আহমেদ লেকচার গ্যালারিতে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ জনএফ. ডেনিলোইজ, মালয়েশিয়ার পলিটি থিংক ট্যাঙ্কের নির্বাহী চেয়ারপারসন ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ে নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ারসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। ১ম আন্তর্জাতিক জুলাই বিপ্লব ২০২৪ সম্মেলনের আহ্বায়ক ছিলেন অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম এবং অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ।

সমাপনী পর্বে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, মালয়েশিয়ার পার্টি কেডিলান রকইয়াট (পিকেআর)-এর ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নুরুল ইজজাহ আনোয়ার, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত ড. লুৎফে সিদ্দিকী এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বকস্ চৌধুরী।

ঢাকাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটেড থট (আরআইটি) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ যৌথভাবে সম্মেলনটির আয়োজন করে। এতে সহ-আয়োজক হিসেবে অংশ নেয়১৩টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রয়েছে-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব রেজিনা (কানাডা), নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (সিঙ্গাপুর), কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি (যুক্তরাষ্ট্র), দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি, বাংলাদেশ ২.০ ইনিশিয়েটিভ (যুক্তরাজ্য), সোচ্চার (যুক্তরাষ্ট্র), ইনসাফ (বাংলাদেশ), সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (তুরস্ক), সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালিসিস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি (বাংলাদেশ) এবং জাগরণ ফাউন্ডেশন (যুক্তরাজ্য)।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশে আর কখনো যেন ভয় ও নিপীড়নের শাসন ফিরে না আসে। একটি দমন-পীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থার পতনের পর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের দমনমূলক শাসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্রে পরিণত করা হয়। গুম ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। হাজারো রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, ছাত্রনেতা ও সাংবাদিককে অপহরণ, নির্যাতন বা স্থায়ীভাবে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বহু পরিবার আজও জানে না, তাদের সন্তান জীবিত নাকি অচেনা কোন কবরে শায়িত আছে।

উপদেষ্টা আরো বলেন, নির্বাচন, গণমাধ্যম ও ছাত্র আন্দোলনের কণ্ঠ রোধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা অপকৌশল ব্যবহৃত হয়। কারাগারগুলো ভরে গিয়েছিল অপরাধীদের নয়, দেশপ্রেমিকদের দিয়ে। ফেসবুক পোস্টই ডেকে আনত মাঝরাতের পুলিশি অভিযান। শুধুমাত্র মতপ্রকাশের দায়ে একটি ভালো বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা ছাত্রকে পিটিয়ে আহত কিংবা শহিদ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সন্ত্রাসের হাতিয়ার বানানো হয়েছিল। গুম-খুন হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের ঘটনা। কবি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ছাত্রনেতাদেরকে অপরাধী হিসেবে জেলে ভরা হয়েছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মুক্ত চিন্তায় বাধা দেওয়া হতো।

জুলাই বিপ্লবের প্রথম আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনকে শুধু আলোচনা নয়, বরং একটি ‘সাক্ষ্য প্রমাণে’র প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বিকৃত ইতিহাস থেকে সত্যকে উদ্ধার করতে চাই। যারা নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের পরিবারদের কান্না, বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে গেঁথে থাকা গুলির চিহ্ন এসবই একদিন ন্যায়বিচারের নির্মাণকাজে প্রমাণ হয়ে উঠবে।

উপদেষ্টা তার বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণ করে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবারও সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে। এর শ্রেণিকক্ষগুলো হয়ে উঠেছিল রণকৌশলের কেন্দ্র, ছাত্ররা হয়ে উঠেছিল বিবেকের যোদ্ধা। আমরা বিদেশি গবেষক, অধ্যাপক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ। যারা বিপজ্জনক সময়েও বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। বক্তব্যের শেষে তিনি এই সম্মেলনকে একটি জাতীয় অঙ্গীকারে পরিণত করতে জুলাই বিপ্লবের দলিলপত্র, ভিডিও, ফটো নিয়ে একটি আর্কাইভ গড়ে তোলা, স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে জুলাই ইতিহাস দৈনিক

সম্মেলনের উদ্বোধনী অংশে ‘ইন্ডিয়ান হেজিমোনি এন্ড জুলাই রেভুলিউশন ২০২৪’ শিরোনামে কী-নোট বক্তব্য প্রদান করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, জিওপলিটিক্যাল কৌশল ও আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ ব্যবহার করে ভারত সরকার সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই মাসে জনগণের গণঅভ্যুত্থান সেই ষড়যন্ত্র চূর্ণ করেছে। মাহমুদুর রহমান বলেন, ভারত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি অগণতান্ত্রিক সরকার বাংলাদেশে এক যুগ ধরে ক্ষমতায় ছিল। দিল্লি শুধু হাসিনা সরকারকে টিকিয়ে রাখেনি বরং এই অঞ্চলে ‘রিজিওনাল হেজিমনি’ প্রতিষ্ঠার নীতিতে কাজ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশি জনগণের ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভারতীয় চক্রান্তকে রুখে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লব প্রমাণ করেছে- জনগণই চূড়ান্ত ক্ষমতার উৎস। ভারতসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তি এই বিপ্লবের গভীরতা বুঝে উঠতে পারেনি। ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার শেখ হাসিনার দুঃশাসনকে সমর্থন দিয়েছিল, কারণ তা তাদের আঞ্চলিক কৌশলের অংশ ছিল। তবে তাদের ‘মাইনরিটি কার্ড’ খেলার ব্যর্থতা এবং ষড়যন্ত্রমূলক কূটনীতি এখন দৃশ্যমান।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব কেবল বাংলাদেশের নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য স্বৈরশাসকদের জন্য এক সতর্কবার্তা। গণতন্ত্র কখনোই দীর্ঘ সময় দমন করা যায় না। জুলাই অভ্যুত্থানে ইসলামি বিশ্বের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি আরো বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে ভারত বিদ্বেষী মনোভাব বেড়েছে এটা দিল্লিকে মেনে নিতে হবে। কারণ ভারত হাসিনাকে অগণতান্ত্রিকভাবে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে চেয়েছিল। ভারতকে তার মনোভাব পাল্টাতে হবে।সত্যনিষ্ঠভাবে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।

আমেরিকার স্ট্যাস্ট ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিবিদ জন এফ. ডেনিলোইজ বলেন, জুলাই বিপ্লব কোনো বিদেশী শক্তি বা গভীর রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের ফল নয়। এটি সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব সংগ্রামের ফসল। ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসীদের কাছে প্রমাণ দেয়া কঠিন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ এতে জড়িত ছিল না। আজ পর্যন্ত আমি এমন কোনো প্রমাণ দেখিনি। যদি এমন কোনো প্রমাণ কারো কাছে থাকে আমি সেটা দেখাতে চ্যালেঞ্জ করছি। তিনি আরো বলেন, বিপ্লব সফল হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অস্থিতিশীলতা পরিবেশ ও তথ্য যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছে যা এখনও চলমান রয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। এসময় আমেরিকার প্রশাসন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে তা উল্লেখ করে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে সরকারের যারা দায়িত্বে যারা আসবেন তাদেরকে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে উল্লেখ করে জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে বিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের যথার্থ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ে নুরুল ইজ্জাহ আনোয়ার বলনে, আমি আমার দেশের ক্ষমতাসীন পিপলস জাস্টিস পার্টির ডেপুটি প্রেসিডেন্ট। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমি অনেক প্রেগ্রাম বাতিল করতে হয়েছে। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল জুলাই বিপ্লবের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া। বাংলাদেশের এই জুলাই বিপ্লব থেকে মালয়েশিয়া আইডিয়া নিতে পারবে। কিভাবে জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য জনগণতে সোচ্চার করা যায়। জুলাই বিপ্লব মালয়েশিয়ার জনগণকে নতুন করে ভাবতে শিখাবে। গাজাতেও মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে সেখানে একটি তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দরকার। জুলাই বিপ্লব আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে কিভাবে ফ্যাসিস্ট শাসক থেকে মুক্তি পেতে হয় এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়। জুলাই বিপ্লবে যারা নিতহ হয়েছে তাদের শাহাদাত কামনা করছি এবং যারা আহত হয়েছে তাদের সুস্থতার জন্য দোয়া করছি। মালয়েশিয়াতে ১৯৭৪ ছাত্র আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়েছে যাকে দক্ষিণ এশিয়ার ইতিফাদা বলা হয়। জেন-জি এখানে উপস্থিত, তারা যেমন জুলাই বিপ্লব করেছে তেমনি দেশ গড়তে তরুণদের অন্তভূর্ক্ত করে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। মালয়েশিয়া বড় ক্ষুদ্র ঋণ প্রেগ্রাম আমানা আছে । মানুষের উন্নয়নের জন্য আমাদের পার্টি কাজ করছে।

তিনি বলেন, একটি দেশের জন্য মানুষের বাক-স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা দরকার। একটি দেশকে দাঁড়াতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। নতুন আইডিয়া ডেভেলপ করতে হবে দেশের উন্নয়নের জন্য।

তিনি বলেন, এখানে অনেকেই মালয়েশিয়ার নিউজ দেখেন। আমরা আমাদের রাজনৈতিক দল দেশের জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। দেশের বিপ্লবের পর সাথেই প্রত্যাশা অনুযায়ী সব হয়ে যাবে। এটা সময় লাগে বিপ্লবের পর একটা নেশন বিল্ড করতে। আমরা সবাই আল্লাহ জন্য আমাদের সব আপীল আল্লাহ কাছেই করতে হবে। জুলাই বিপ্লবের পর দেশের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক ডিগনিটি দরকার।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব ছিল জাতির গণজাগরণের একটি অমোঘ মুহূর্ত। এটি কেবল ছাত্রদের প্রতিবাদ ছিল না বরং পুরো জাতির বিবেকের পুনর্জাগরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেই জাগরণের প্রেরণা, কেন্দ্রবিন্দু এবং নেতৃত্বদাতা। আমাদের শ্রেণিকক্ষ হয়ে উঠেছিল রণকৌশলের মঞ্চ, ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছিল ন্যায় ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের দুর্গে। তিনি আরও বলেন, এই সম্মেলন ইতিহাস রক্ষার দায়িত্ব যেমন পালন করছে, তেমনি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গঠনে এক গবেষণাধর্মী ভিত্তিও স্থাপন করছে।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সম্মেলনটির আহ্বায়ক ড. মো. শরীফুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্যে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৪-এর জুলাই বিপ্লব কেবল একটি প্রতিবাদ নয়, এটি ছিল বাংলাদেশের যুবসমাজের একত্রিত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বিষয়ে একাডেমিক আলোচনা ও গবেষণা করার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া যৌথভাবে গবেষণা প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে।

কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে দেশে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উপর গুরুত্বারোপ করেন।