আজ বাংলাদেশে জিলহজ্ব¡ মাসের ৭ম দিবস। তবে সৌদি আরবে জিলহজ্ব¡ মাসের ৮ম দিন। আজ পবিত্র হজ্বে¡র আনুষ্ঠানিকতা শুরু। লাখো কণ্ঠে ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে মক্কা। ইতোমধ্যে হজ¦ পালনের জন্য সৌদি আরবে পৌঁছেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হজযাত্রীরা। হজ¦ পালনের জন্য সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ হাজিরাও মসজিদুল হারামে পৌছেঁছেন। আজকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

সৌদি হজ ও ওমরা বিভাগের মহাপরিচালক ড. মুহাম্মদ আল-কর্নি জানান, বাইরের দেশ থেকে আগত হাজিদের মক্কা পৌঁছার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ হাজিরাও মসজিদুল হারামে পৌঁছাতে শুরু করেছেন।

তিনি সৌদি সংবাদ মাধ্যম আল-আরবিয়া-কে বলেন, গত ৩৬ দিন ধরে বিভিন্ন দেশের হাজিরা মক্কা ও মদিনায় যাতায়াত করেছেন। এই সময় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। এখন অভ্যন্তরীণ হাজিদের আগমন শুরু হয়েছে।

ড. আল-কর্নি আরও জানান, হাজিরা ৮ই জিলহজ সকাল ১০টা পর্যন্ত মক্কায় আগমন করবেন। এরপর প্রায় ১০ লাখ হাজি মিনায় অবস্থান করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৮ই জিলহজ সকাল থেকে ৬,৫০,০০০ হাজিকে সরাসরি মক্কা থেকে আরাফাতে পাঠানো হবে, তাদের আরাফাতে পৌঁছানো নিশ্চিত করা হবে রাত ৩টার আগেই।

তিনি আরও বলেন, মিনায় অবস্থানরত হাজিদের আরাফার ময়দানে পৌঁছাতে তিন ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে মশায়ের ট্রেনে ৩,১৬,০০০ হাজি এবং বহুমাত্রিক পরিবহন ও প্রচলিত যানবাহনে ৭,২০,০০০ হাজিকে পৌঁছানো হবে। এই সমস্ত ব্যবস্থাপনা দেখভাল করছে কেন্দ্রীয় পরিবহন বিভাগ।

এ বছর মোট ২৪,৭০০টি বাস হাজিদের সেবা দেবে, এর বাইরে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ২,৫০০টি অতিরিক্ত বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এগুলো সৌদি সরকারের বৃহৎ প্রস্তুতি ও আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়ের প্রতিফলন, যা গত বছর হজ শেষ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছিল।

গোটা মক্কায় পবিত্র হজ্বের আবহ বিরাজ করছে। মহান আল্লাহ তায়ালার একত্ব ও মহত্বের কথা বিঘোষিত হচ্ছে সারাক্ষণ, সারা বেলা। আল্লাহ তায়ালা এবং বান্দার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের অনন্য আবহে বিরাজ করছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের এক অসাধারণ দৃশ্য। আজ হাজীগণ ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ৪/৫ দিনের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়তে পড়তে মিনা অভিমুখে রওনা হবেন। অনেকে গতকালই মিনায় পৌছেছেন। মিনায় ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করে আরাফার অভিমুখে রওয়ানা হবে। কাল ফজরের নামাজের পর আরাফাত ময়দানে গিয়ে অবস্থান করতে হবে। এ জন্য অনেকে আজ রাতেই আরাফায় চয়ে যাবে।

আজ ৮ জিলহজ্ব¡ হাজীরা ইহরাম বাঁধা অবস্থায় মীনায় গিয়ে অবস্থান করবেন এবং সেখানে যোহর, আছর, মাগরিব ও এশা’র নামাজ আদায় করবেন। রাতে মিনায় অবস্থান করা এবং ৯ জিলহজ্ব¡ ফজরের নামায মিনায় আদায় করা সুন্নত। ৯ জিলহজ্ব আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ফরজ। আরাফার ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকতে হবে। সূর্যাস্তের পর মুযদালিফার উদ্দেশে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুযদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশা’র নামায এশা’র ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সারারাত অবস্থান করবেন। মিনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুযদালিফায় ফজরের নামায পড়ে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।

পবিত্র মক্কা থেকে প্রায় ৯ মাইল পূর্বদিকে একটি পাহাড়ের নাম ‘জাবালুর রহমত’ বা রহমতের পাহাড়। এই পাহাড় সংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রলম্বিত বিরাট প্রান্তরটি আরাফাত প্রান্তর নামে পরিচিত। পাহাড়টি মধ্যম আকৃতির এবং গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত। এর উচ্চতা প্রায় ২০০ ফুট। এই পাহাড়ের পূর্বদিকে প্রস্তরের সিঁড়ি রয়েছে। এর ষষ্ঠ ধাপের উচ্চতা বরাবর আগে একটি উন্নত মঞ্চ ও একটি মিম্বর ছিল। এই মিম্বরে দাঁড়িয়ে প্রতি বছর ৯ জিলহজ্ব¡ আরাফার দিন ইমাম সাহেব খুতবা প্রদান করতেন। এখন আর সেই মঞ্চ ও মিম্বার নেই এবং এখান হতে হজ্বের খুতবাও প্রদান করা হয় না। বরং এখন খুতবা দেয়া হয় মসজিদে নামিরা হতে।

এদিকে গত শুক্রবার পর্যন্ত আকাশ, স্থল ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ জন যাত্রী সৌদি আরবে এসেছেন বলে জানায় দেশটির পাসপোর্টের জেনারেল ডিরেক্টরেট। সাম্প্রতিক বছরগুলোর উপস্থিতির রেকর্ড এবার ভাঙতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।