রাজধানীর কুরবানীর পশুর হাট আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। তবে বিক্রি কম, চলছে দাম যাচাই বাছাই। ঈদের বাকী আছে তিনদিন। ঈদের দিন সকালেও কুরবানীর পশু কেনার সুযোগ রয়েছে। তাই হাটগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতাদের মাঝে গা ছাড়া ভাব। শেষ মুহুর্তের দিকে তাকিয়ে সবাই। এবার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন হাট বসিয়েছে স্থায়ী অস্থায়ী মিলে ২১ টি। ঈদের দিনসহ ৫ দিন এসব হাটে কেনাবেচা চলবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শাহজাহানপুর, শনির আখড়া, তেজগাঁও পলিটেকনিক, গাবতলী আর মোহাম্মদপুর বছিলা হাট ঘুরে ক্রেতা, খামারী-ব্যাপারী আর ইজারাদারদের সাথে কথা বলে হাটের এমন চিত্র পাওয়া যায়। তেজগাঁওয়ের ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংলগ্ন অস্থায়ী পশুর হাটের ১ নম্বর কাউন্টার থেকে সামনে খেলার মাঠে ঢুকতে দেখা যায়, একসাথে ৩৪টি গরু বেঁধে রেখেছেন শেরপুরের শফিকুল ইসলাম। শুক্রবার সকালে পৌছালেও এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি হয়নি তার। প্রত্যেকটা গরুই ৭-৯ মণ মাংস হবে। তিনি গরুর দাম হাঁকিয়েছেন তিন থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে এখন পর্যন্ত গরুর দাম উঠেছে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ ১০ হাজার পর্যন্ত। তিনি বলেন, আড়াই লাখ টাকা হলে গরু ছেড়ে দেবেন। আজ বুধবার অফিস শেষে ক্রেতারা হাটে আসবেন। সেদিন একসাথে অনেক গরু বিক্রি হতে পারে। গরুর এই ব্যাপারী বলেন, গত বছর এই হাটে ৭২টি গরু নিয়ে এসেছিলেন। তবে এ বছর দেশের পরিস্থিতির কারণে ঝুঁকি নেননি।

খেলার মাঠের ফটক থেকে আরও সামনে গেলে ছোট ভাইয়ের সাথে গরু নিয়ে বসে আছেন সেনা সদস্য হাবীব। ঈদের ছুটিতে বাড়ি না গিয়ে বাড়ির খামারের গরু বিক্রি করতে তিনি এই হাটে এসে ছোট ভাইয়ের সাথে যোগ দিয়েছেন। হাবীব বলেন, সিরাজগঞ্জের বাড়িতে পারিবারিক খামার আছে। এই খামারের গরু প্রতিবছর ঢাকায় এনে বিক্রি করা হয়। এ বছরও ছোট ভাই ৭ টি গরু নিয়ে হাটে এসেছে। প্রত্যেকটা গরুর ৫-৬ মণ মাংস হবে। গরুর দাম তারা বলছেন দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা। ক্রেতারা ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বলছেন।

এই হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, হাটে পর্যাপ্ত গরু ঢুকেছে। তবে ঈদের আগেরদিন পর্যন্ত গরু আসবে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাটে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। টুকটাক বিক্রিও হচ্ছে। তবে আজ বুধবার রাত থেকেই হাট জমে উঠতে পারে।

মোহাম্মদপুরের বছিলায় কোরবানির পশুর হাটে কুষ্টিয়ার শৈলকুপা উপজেলা থেকে ১৫ টি গরু নিয়ে এসেছেন আবুল কাশেম ব্যাপারী। তিনি জানান, গ্রামের বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনে এনেছেন। বেশির ভাগই দেশি গরু। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম সামান্য বেশি।

বছিলা হাটে গরু নিয়ে আসা আরেক ব্যাপারী নওগাঁর আইজুল মিয়া বলেন, এবার কোরবানির পশুর বাজার এতো সুবিধার মনে হচ্ছে না। গ্রামের পশুর হাট জমজমাট হলেও ঢাকার হাটগুলো জমেনি। দু-একজন হাটে এলেও দাম যাচাই করে ফিরে যাচ্ছেন।

ফরিদ বেপারী সাদা-কালো পাহাড়ের দাম হাঁকাচ্ছেন ৪০ লাখ

সাদা পাহাড় আর কালো পাহাড়। নাম যেমন পাহাড়, দেখতেও তেমন। আসলে পাহাড় নয়, এ দুটি গরুর নাম। দুটির ওজন প্রায় ৬০ মণ। এই জোড়া গরুর দাম ৪০ লাখ টাকা হাঁকাচ্ছেন বেপারী মো. ফরিদ। এমন আরও কিছু বড় সাইজের গরু ঐতিহ্যবাহী গাবতলীর হাটে দেখা গেছে। তবে এত বড় গরুর ক্রেতা নেই বললেই চলে। গত সোমবার রাতে সাদা পাহাড় ও কালা পাহাড়সহ ছয়টি বড় সাইজের গরু নিয়ে এসেছেন তিনি। সবগুলো গরু রাজবাড়ীর আমজাদ ডেইরি ফার্মে লালনপালন করা হয়েছে।

গরুর বেপারী মো. ফরিদ বলেন, গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে এই জোড়া গরু লালনপালন করেছি। এই জোড়া গরু হলো ক্রস জাতের। নিয়মিত খাওয়ানো, গোসলসহ বিশেষ যত্ন করে এই জোড়া গরু বড় করেছি। তিনি আরও বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার কিছুটা বেশি দাম আশা করছি। কারণ গরুর খাদ্যের দাম কিছুটা বাড়তি ছিল। এছাড়া গরু যত বড় হয়, যত্নও তত বেশি করতে হয়। এক জোড়া গরু লালনপালন করতে প্রায় সারাদিনের একটা বড় অংশ তাদের পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে। তাই গরু দুটির ওজনও ভালোই হয়েছে। ফলে ৪০ লাখ টাকা দামের আশা করছি।

ফরিদ বলেন, হাটে এখনো সেভাবে ক্রেতারা আসেনি। যারা আসছেন তারা শুধু দেখছেন, কিন্তু দাম বলছেন না। আমার সবগুলো গরু বড় তাই হয়তো ঈদের শেষ সময়ে বিক্রি হবে। তবে আশানুরূপ দাম না পেলে বিক্রি করব না। তিনি আরও বলেন, আরও যে কয়টা গরু রয়েছে, সবগুলোর ওজনই প্রায় ১৫ মণের একটু কম বা বেশি হবে। তাই সবগুলোর দামই ভালো আশা করছি।

গতকাল হাট ঘুরে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে এখনো প্রচুর গরু আসছে। কিন্তু হাটে সেভাবে ক্রেতা নেই। বেশির ভাগ যারা এসেছেন, গরু দেখাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। হাসিলঘরেও সেভাবে ভিড় দেখা যায়নি।

হাট ইজারাদার পক্ষের মিডিয়া প্রতিনিধি ইয়াহিয়া সামি বলেন, আমরা গরুর বেপারীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে। তবে বৃষ্টির কারণে সেভাবে ক্রেতারা আসতে পারছে না।

শেষ মুহূর্তের দিকে তাকিয়ে খামারিরা

শনির আখড়া পশুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু, ছাগলসহ নানা প্রকার কুরবানির পশু নিয়ে হাজির হয়েছেন খামারিরা। তবে এখনো পর্যন্ত পশু বিক্রি প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছেন তারা। গতকাল দুপুরে হাট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা আসছেন পশু দেখতে ও দাম যাচাই করতে। বেশিরভাগই এখন কোনো পশু কিনছেন না। আর ক্রেতার সংখ্যাও এখনো কম। ক্রেতারা বলছেন, দাম যাচাই করে শেষ দিকে কেনবেন পশু। কারণ অনেকের বাসায় রাখার জায়গা নেই।

হাটে আসা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার পশুর দাম তাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, হাটে কয়েকটা গরু দেখেছি, কিন্তু বাজেটের মধ্যে কিছু পাইনি। এবার গরুর দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন দাম যাচাই করছি। শেষ দিকে কিনবো। কারণ বাসায় রাখার জায়গা নেই।

ইলিয়াস নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, এবার হাটে পশুর সরবরাহ ঠিক আছে। তবুও দামটা বেশি মনে হচ্ছে। দেখি শেষ দিকে কি অবস্থা হয়।

মো. আমান নামের একজন বিক্রেতা বলেন, আমরা নওগাঁ থেকে ২০টা গরু নিয়ে এই হাটে এসেছি। এখনো একটাও বিক্রি হয়নি। মানুষ আসে, দেখে যায় আর দাম জিজ্ঞেস করে। তবে এখন কেউ কিনছে না। তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের মানুষ ঈদের ২ দিন আগে থেকে গরু-ছাগল কেনে। সেজন্য আমরা শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষায় আছি।

আরেক বিক্রেতা হাসেম বলেন, এখানে প্রতি বছরই ঈদের দুই দিন আগে থেকে বিক্রি বাড়ে। এবারও সেই আশাতেই বসে আছি। পশুর বাড়তি দাম হাঁকানোর বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিবছরই পশুর লালন-পালন ব্যয় বাড়ছে। সেজন্য দামও বাড়ছে।