প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে আগামীকাল শনিবার ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে ঢাকায় আসছেন। তিনি ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সফর করবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৩ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দ্বি-পাক্ষিক সফর এটি। এই সফরে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিকে মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে উন্নীত করার বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আল সিয়াম এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের ঐতিহাসিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান আছে, দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে উচ্চ পর্যায়ের নেতারা অব্যাহত সফর বিনিময়ের মাধ্যমে এই সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রথম অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যিক চুক্তি (পিটিএ) ভুটানের সঙ্গে সম্পাদিত হয়েছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার ওপর ভিত্তি করে দুদেশের জনগণ উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো ক্রমেই প্রসারিত হয়েছে। আসন্ন সফরের সম্পর্ক আরও বিস্তৃত ও গভীর করার জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা কীভাবে আরও বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে।

আসাদ আল সিয়াম বলেন, ২২ নভেম্বর সকালে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিনকে যথাযথ মর্যাদায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দরের গার্ড অব অনার গ্রহণ করার পর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন। এরপর দুপুরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একই দিনে প্রধানমন্ত্রী শেরিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন।

তিনি জানান, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আমরা আশা করছি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন, সংস্কৃতি, যুব, ক্রীড়া, শিল্পসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হবে।

বৈঠক শেষে ভুটানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ, ভুটানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং কৃষি সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়গুলো এখনও আলোচনাধীন।

এদিন রাতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী এবং তার প্রতিনিধি দলের সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করা হবে। সেখানে তিনি অংশগ্রহণ করবেন। ২৩ নভেম্বর তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।

তিনি বলেন, এছাড়া বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে পারেন। ২৪ নভেম্বর সকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দুদিনের সফর শেষে থিম্পুর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তাকে বিদায় জানাবেন। দুদেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ কর্তৃক দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করার সুযোগ আছে।