কালের পথপরিক্রমায় হিজরী ১৪৪৭ সনের আগমনী প্রতীক পবিত্র মহরমের চাঁদ ভূমন্ডল ও নভোমন্ডলকে উদ্ভাসিত করে তুলেছে। দিগন্তের দিক চক্রবাল জুড়ে নব আলোর রেখায় একটি ইঙ্গিত সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ইসলামী শক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ অত্যাসন্ন। বেঈমানী নাফরমানী ও খোদাদ্রোহী শক্তির বলয় যতই বিস্তৃত ও শক্তিশালী হোক না কেন, তার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং যাবতীয় অনাচার ও অবিচারের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। হিজরী নব বর্ষের এই আবাহনী ইঙ্গিত বিশ্ব মুসলিমের মনে যেমন আশার সঞ্চার করেছে তেমনি তাগুতি ও শয়তানি শক্তির ভিত্তিমূলে ধরেছে কাপঁন। শয়তান ও তার পদলেহী অনুচররা মুসলিম মিল্ল¬াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলমানদের জাতীয় সম্পদকে কুক্ষিগত করার জন্য ষড়যন্ত্রের জাল সবর্ত্র বিস্তার করা হচ্ছে। তাই বলে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন মুসলিম মিল্লাত একবারে বেখবর নয়। কেননা তাদের সামনে রয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দিকনির্দেশণামূলক বাণী। আর মহররম মাস স্মরণ করিয়ে দেয় কারবালার ময়দানে ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের কথা। ১০ মহরমের ঘটনা মুসলমানদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের কথা শিক্ষা দেয়। হিজরী ৬১ সালের ১০ মহররম ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনী নির্দয়ভাবে ইমাম হুসাইন (রা.) ও তার শিশুপুত্রসহ ৭২জন সাথীকে শহীদ করে। হযরত মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদ ইসলামের ইতিহাসে রচনা করেছে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের। এর বিপরীতে ইমাম হুসাইন (রা.) সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করে ইসলামের ইতিহাসে গৌরবজনক অধ্যায়ের রচনা করে অমর হয়ে আছেন। বিশ্ব মুসলিমের জন্য রেখে গেছেন আত্মত্যাগের অনুপম শিক্ষা।
মুহাররম ও আশুরা সর্ম্পকে পবিত্র কুরআনে ও হাদীস শরীফে এ মাস সম্পর্কে যা এসেছে তা হলো, এটা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সময়। কুরআনের ভাষায় ‘আরবাআতুন হুরুম’-অর্থাৎ চার সম্মানিত মাসের অন্যতম এই মাস। এ মাসে রোজা রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘রমযানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সহীহ মুসলিম : ২/৩৬৮)। এর মধ্যে আশুরার রোজার ফজিলত আরো বেশি।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে রমযান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’(সহীহ বুখারী : ১/২১৮)। হযরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমযানের পর আর কোন মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এই প্রশ্ন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট জনৈক সাহাবী করেছিলেন, তখন আমি তার খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘রমযানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও, তবে মুহররম মাসে রাখ। কারণ, এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তাআলা একটি জাতির তওবা কবুল করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য জাতির তওবা কবুল করবেন।’-জামে তিরমিযী ১/১৫৭
অন্য হাদীসে নবী করীম (সা.) বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহীহ মুসলিম : ১/৩৬৭)।
মহররম মাসে পৃথিবীর বহু ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এদিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরত প্রকাশ করেছেন। বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্রে রাস্তা বের করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিরাপদে পার করে দিয়েছেন। আর একই রাস্তা দিয়ে ফেরাউন ও তার অনুসারীদেরকে ডুবিয়ে মেরেছেন। (সহীহ বুখারী : ১/৪৮১)।