ফুলপরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন পুরুষ ও নারী ভোটাররা। পরিবেশ শান্তিপূর্ণ। কেন্দ্র থেকে সরাসরি ভোট পরিস্থিতি জানাচ্ছেন চ্যানেল উত্তরের সুরের সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম। ছবি তুলছেন দৈনিক ভোরের আলোর পত্রিকার সাংবাদিক। আছেন পর্যবেক্ষক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। হঠাৎ স্লোগান স্লোগানে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কেন্দ্রের আশপাশের পরিস্থিতি। শুরু হয় কেন্দ্র দখলের চেষ্টা। ভোটারদের হুড়োহুড়ি শুরু হয়, এক সময় ফাঁকা হয়ে যায় কেন্দ্র। এমন নির্বাচনি মহড়া হয়ে গেল ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের মাঠে। তখন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবির সহযোগিতা চাইলেন।

সেই মহড়ায় দেখা গেল টহলরত বিজিবি সদস্যদের নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে গাড়ি উপস্থিত, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক করলেন অননুমোদিত লোকজনদের। কিছুক্ষণের মধ্যে লাঠিচার্জ করে কেন্দ্র দখলকারীদের ধাওয়া দেয় বিজিবি সদস্যরা; আর তিনজনকে পাকড়াও করে নিয়ে যায় তারা। পরিস্থিতি শান্ত হলে কেন্দ্রে ফের শুরু হল ভোট গ্রহণ। এই দৃশ্য দেখলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার, সচিব, বিজিবি মহাপরিচালকসহ শ’তিনেক উপস্থিতি। এ মহড়ায় প্রার্থী, ভোটার, এজেন্টসহ নানা ধরনের দায়িত্বে থাকা প্রায় ৩০০ বিজিবি সদস্য যুক্ত ছিলেন।

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে; আর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা বলেছে ইসি। বিরাজমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ভোটে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি হলে কিভাবে মোকাবিলা করবে এমন প্রশিক্ষিত বিজিবি সদস্যরা এই নির্বাচনে মহড়া করলেন।

সিইসি এ এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের নির্বাচনী কালচার বিবেচনায় নিয়ে এই নির্বাচনি মহড়া আয়োজন করেছে বিজিবি। আমার মনে হয়েছে সাধারণভাবে নির্বাচনে যে ধরনের ঘটনা ঘটে এবং যেভাবেই নির্বাচনটা পরিচালিত হয় সব ডাইমেনশন বিবেচনায় নিয়ে এ মহড়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিও মহড়ায় তুলে ধরা হয়েছে। ইলেকশনের ডিউটিটা কিভাবে করতে হয় সে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, এ জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। নির্বাচনের প্রস্তুতি থেকেও সবাই দেখলেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দায়বদ্ধতা নিয়ে তাদের লোকবলকে প্রশিক্ষিত করছে। আশা করি জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ এমন একটি সুন্দর নির্বাচন আমরা উপহার দিতে পারব।

ভোটে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি করলে তাদেরও প্রতিহত করা হবে বলেও জানিয়েছেন সিইসি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ধীরে ধীরে হওয়ায় ভোটে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ তৈরি হবে না বলে আশা করেন তিনি।

নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোনে ভাগ করে সে অনুযায়ী ডেপ্লয়মেন্ট স্ট্র্যাটেজি (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন) ঠিক করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আগামী ৩০ নভেম্বর বসার কথা রয়েছে। সেখানে ডেপ্লয়মেন্ট স্ট্র্যাটেজি ফাইনাল হবে।

এবার দেশের পৌনে ১৩ কোটি ভোটার জাতীয় সংসদ ও গণভোটে ভোট দেবেন। প্রায় ৪৩ হাজার ভোট কেন্দ্রে পৌনে তিন লাখের মত ভোট কক্ষ থাকবে।

নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিশন নিজেদের মেয়াদের এক বছরে এখনও কোনো ভোট করেনি। এমন পরিস্থিতিতে শনিবার একটি মক ভোটিং এর আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন।