আজ শুক্রবারের মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের গতকাল বৃহস্পতিবার মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেন, বিএনপি বলছে, কোনো ভাবেই গণভোট মানবে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে অনতিবিলম্বে গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। আর সময়ক্ষেপণ না করে আজই ঘোষণা করুন। রাতের বেলায়ও অনেক আদেশ জারি করা যায়।
ডা. তাহের বলেন, জামায়াত রাষ্ট্র সংস্কারে দেওয়া ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন চায়। সে জন্য আগামীকালের (আজ শুক্রবার) মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সরকার চাইলে আজ (বৃহস্পতিবার) রাতের মধ্যেও সেটি করতে পারে। সময়ক্ষেপণ না করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেরি হলে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) জনগণের আস্থা হারাবে। জামায়াতের সিনিয়র এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির পরে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিন কিংবা নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে জমা দিয়েছে। জামায়াত জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে। কারণ, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট হলে রাজনৈতিক দলের নেতারা নিজ দলের প্রার্থীকে জেতাতে ব্যস্ত থাকবেন। এর ফলে গণভোটের গুরুত্ব কমে যাবে।
গণভোটের পরে ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে উল্লেখ করে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এমন কোনো বিষয় যাতে সামনে আনা না হয়, যে কারণে নির্বাচন সংশয় বা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। জাতীয় নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারিই উপযুক্ত সময়। ডা. তাহের বলেন,এখানে কোনো দলের এজেন্ডা ছিল না, কোনো দলের খবরও তারা একজন হিসেবে গ্রহণ করেননি। আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার এবং ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে নির্বাচনের পরিবেশ ও রাজনীতিতে এক ধরনের অস্বচ্ছতা সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে বলে আমরা লক্ষ্য করছি।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা মাধ্যমে, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে আংশিক বক্তব্য ও মনগড়া তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে যাবে কি না-এই প্রশ্ন তুলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। ডা. তাহের বলেন, আমরা জুলাই চার্টারের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই আইনগত ভিত্তির মাধ্যমে। এ বিষয়ে যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা একটি সরকারি আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চাই এবং সেই গণভোটের রায়ের ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই। বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিষ্কার।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কারো পক্ষে কাজ করেনি। সবাইকে নিয়েই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এখন একটি মহল তা বানচাল করার জন্য নানা ধরনের বানোয়াট বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জাতীয় ঐক্য, গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বার্থেই সবাইকে সংযত হওয়া উচিত। কোনভাবেই জাতীয় ঐক্য ব্যাহত করা যাবে না। ফ্যাসিবাদ ফিরে আসুক তা আমরা কিছুতেই চাই না। আমরা গণতন্ত্র চাই। গণতন্ত্র ব্যাহত হতে পারে এমন কর্মকা- থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ডা. তাহের আরও বলেন, প্রত্যেক দল তার নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিএনপি তা চায় না। আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন কমিশন কোন বিশেষ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না। তিনি বলেন, দেশ আমাদের সবার, তাই আমাদের সবাইকে মিলেই এ দেশকে রক্ষা করতে হবে এবং দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বলেন, ‘এই সরকারের তিনটি সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল ক্ষমতায় আসার পর। এর মধ্যে একটি হলো জাতীয় পর্যায়ে সংস্কার, যা ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এজেন্ডা। এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে তা সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হবে, দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে এবং নতুন বাংলাদেশের সূচনা হবে।’
ডা. তাহের জানান, সংস্কারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এসব কমিটি প্রস্তাবনা দিয়েছিল, যা পরে জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রাখা ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একমত তৈরি করা হয়। জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, ‘কিছু গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা দাবি করছেন, কমিশন কোনো একটি দলের পক্ষে কাজ করছে। কিন্তু এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে একেবারেই সঙ্গত নয়। কনসাসটেন্ড কমিটির বৈঠকে শুধুমাত্র কমিটির এজেন্ডার ভিত্তিতেই আলোচনা হয়েছে। কোনো দলের প্রস্তাবনা বা মতামত সেখানে গ্রহণ করা হয়নি।’
ডা. তাহের বলেন, কমিশনের কাছে আমাদের একটি প্রস্তাব ছিল নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতি চালুর। কিন্তু সেটি পর্যালোচনার জন্য গ্রহণ করা হয়নি। বরং কমিশন নিজেদের প্রস্তুত করা এজেন্ডাগুলোর ওপরই আলোচনা করেছে। ফলে কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করার সুযোগই ছিল না। আলোচনার সময় নানা বিষয়ে মতভেদ থাকলেও, দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। চিন্তার অনৈক্য থেকে ঐক্যে পৌঁছানোই আমাদের বড় সাফল্য। বহু পয়েন্টে আমরা সবাই একমত হতে পেরেছি। এটাই এই প্রক্রিয়ার ইতিবাচক দিক।
প্রশ্ন উত্তর পর্বে ডা. তাহের বলেন, এই জাতীয় সনদটা ঐকমত্য কমিশন, নির্বাচন কমিশন কিংবা কোন দলের সম্পদ না। সমগ্র জাতির সম্পদ। সরকার আইন করে তাদের নিয়োগ করেছেন। আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দল তাদের গ্রহণ করেছি। তাদের সাথে আলাপ আলোচনায় গিয়েছি, মিটিং করেছি। আমরা বিশেষজ্ঞদের সাথে মিটিং করেছি। আমাদের বিশেষজ্ঞরা কমিশনের বিশেষজ্ঞদের সাথে বৈঠক করেছে। তার ভিত্তিতে এ আদেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি সংস্কার চায়নি। বিএনপি গণভোট চায়নি। কেন তারা একসাথে চায় ? তারা গণভোটটাকে গলাটিপে হত্যা করতে চায়। কারণ তারা গণভোট চায়নি। এখন বাধ্য হয়ে গণভোটে গেছে। এখন আবার প্যাঁচ লাগিয়ে এটাকে মাইনাস করে দিতে চায়। আপনি দেখেন একই দিন যদি গণভোট হয়, গণভোটে কোন ভোট পড়বে না। কারণ ধানের শীষ থাকবে ধানের শীষ নিয়ে, তখন ধানের শীষে ভোট বাড়ানোর চিন্তা করবে। আর আমি দাঁড়িপাল্লার জন্য কাজ করবো। তখন গণভোট যে একটা হবে সেটা আর মাথায় থাকবে না। দেখা যাবে সেদিন গণভোট ভোট পড়বে ৪ শতাংশ। পর্যায়টা হলো একটা বস্তার ওপর আরেকটা বস্তা চাপা দেওয়া। এতো তামাশা করারতো দরকার নেই। আপনি বলে দেন যে, আমরা কিছুই মানি না। আমাদের দাবি হলো আজকের মধ্যে করতে হবে। না হলে আগামিকাল (আজ শুক্রবার) করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম ও হামিদুর রহমান আযাদ।