১৬ জুনের কালো দিবসের কথা গণমাধ্যম কেনো নেই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। গতকাল সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই প্রশ্ন তোলেন।

তিনি বলেন, কয়টা পত্রিকায় এবার ১৬ জুন সম্পর্কে কিছু লিখেছে? আনফুরচুনেট, আপনারাই যদি না লেখেন। যদিও বিএফএউজে-ডিইউজে প্রোগ্রাম করছে, হাতের গোনা কয়েকটা প্রিন্ট মিডিয়া ছাড়া বা অনলাইন মিডিয়া ছাড়া মেজরিটি অব দি প্রিন্ট মিডিয়া ১৬ জুন কিছু ছিলো বা কিছু হয়েছিলো? হ্যাঁ আপনি গুগলসে গেলে পাবেন... কিন্তু আজকে মেজরিটি মিডিয়াতে কোনো ধরণের বক্তব্য নাই।

তিনি বলেন, সাংবাদিক যদি লাউন্ডলি এন্ড ফোর্সলি এন্ড উইথ পোস সত্য কথা বলতে না পারে, ঠিক আছে আপনি ভালো বলেন সেটাই বলেন, খারাপ ছিলো সেটাই বলেন, বাট ইউ নিড স্পিক আউট ইউ ফর এ জাজ, কাজেই সেই জিনিসটা আজকে নাই। যার জন্য আজকে যত ফোর্সফুলি এই দিনটা জাতির সামনে উপস্থাপন করা উচিত ছিলো সেটি কিন্তু আজকে হয়নি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, এটার জন্য আজকের সরকারেরও দায়িত্ব ছিলো, আজকে তথ্য মন্ত্রণালয় তাদের প্রোগ্রাম করা উচিত, প্রেস কাউন্সিল দে নিড ডু দি প্রোগ্রাম, জাতীয় সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ দে নিড ডু দা প্রোগ্রাম, যে প্রোগ্রাম আমাদের হওয়া উচিত যেটা জাতিকে ধবংসের দিকে নিয়ে গেছে। বার্ট দে ডোন্ট হেভ। কারণ এগুলো নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ তাদের মধ্যে হয়ত অনেকের আসেনি। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, ইফ ইউ নিড টু হেভ এ গুড গভার্নেন্স তাহলে প্রত্যেকটা উইং, আপনাদের বক্তাদের বক্তব্যে এসেছে সমালোচনা করেছিলেন বঙ্গভবনের চায়ের দাওয়াত পেয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে, সেই ইতিহাস আর রিপিট হয় নাই।

জাতীয় প্রেসসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ১৬ জুন সংবাদ পত্রের কালো দিবস উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান দেশে চারটি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে সাংবাদিকরা এই দিবসটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা মানুষের সাথে ছিলাম, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আপনারা অনেকে ব্যক্তিগতভাবে উনার সাথে প্রেফেশনাল ইন্টাররেকশন হয়েছে এবং আছে। উনি কিভাবে আপনাদের পাশে থেকেছেন, কথা বলেছেন, যতটুকু সম্ভব আপনাদের এই শিল্পের ওয়েল ফেয়ারের জন্য কাজ করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানের আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া অনেক পলিটিক্যাল পার্টি আছে, কোনো পলিটিক্যাল পার্টির চেয়ারম্যান আজকে ১৬ জুন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেখান তো। আজকে বিবৃতি একটাই পাবেন সেটা হচ্ছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৬ জুন উপলক্ষ্যে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিও ইংগিত করে তিনি বলেন, কেনো লিখলেন না? ইউ আর রানিং।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, আপনি ইনকামিং গভার্মেন্টে যেতে চান? দেশের ভালোর জন্য কথা বলেন, ইউ আর এ পলিটিক্যাল পার্টি, আপনি খালি নির্বাচন নির্বাচন নিয়ে কথা বলবেন, সংস্কার নিয়ে কথা বলবেন, ১৬ জুন আজকে আপনার কেনো বক্তব্য নেই, এটা কেনো? এটা তো হওয়ার কথা নয়। কাজেই আপনাকে বুঝতে হবে যে, কে আপনার ফ্রেন্ড? কে আপনাকে ওউন করে? কে আপনাকে ডিউন করে? কে খালি কোনো একটা নির্ধারিত জিনিস অর্জন করার জন্য দৌঁডায়, জাতীয়ভাবে সামগ্রিকভাবে দেশের কল্যাণের জন্য কাজ করে না সেই জিনিসটা আপনাদের নিজেদের বুঝতে হবে।

এজেডএম জাহিদ বলেন, এখানে যারা বসে আছেন সবাই শিক্ষিত মানুষ.. আপনারা কমবেশি লেখালেখি করেন, আমি যেটা বলতে চাই, আপনারা স্পেডকে স্পেড বলতে হবে। আপনারা সবাই গুনগান গাইবেন, দোষ বলবেন, আলোচনা হয়েছে, চুক্তি হয়েছে ১০টা? কী চুক্তি করলেন এই কথা জিজ্ঞাস করার সাহস নাই, তাহলে তো হলো না। রুপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পে খরচ এতো কোটি টাকা কিন্তু এটার মধ্যে ২৯ হাজার টাকা দামের পর্দা এগুলো জিজ্ঞাস করার আপনাদের সাহস নাই.. এটা তো হবে না। ইউ নিড স্পিক আউট দা ট্রুথ। বলছেন যে, আমার তো ইসলামিক টিভির মতো বন্ধ করে দেবে, দিগন্ত টিভির মতো বন্ধ করে দেবে। ইয়েস এখানে অনেকের চাকুরি ছিলো না, আপনারা কি হারিয়ে গেছেন? অনেকে মারা গেছেন, অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে জ্লে খেটেছেন, বাট ডু এডমিট টিল আজকে আপনারাই আছেন, অন্যরা পালিয়ে গেছে.. দিস ইজ ইউর এচিভমেন্ট।

তিনি বলেন, ওয়েন ইউ আর উইথ দা কজ, উইথ দা পিপিল তখন মনে রাখবেন আপনি ক্ষনিকের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন। বাট ইন দা লং রান ইউ উইল ইন দা স্ট্রিট, ইউ লিভ উইথ দা পিপলস এন্ড পিপল উইল একনলেজ ইউ। আদারওয়াজ এই পলায়নকৃত মানুষের মতো একদিন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। কাজেই এখনো আমরা যারা আছি উই নিড স্পিক আউট দা ট্রুথ, উই নিড টেল ট্রুথ। আপনি সব সময় মানুষের পাশে থাকা এবং ১৬ জুন আমাদের এই শিক্ষা দিক যদি ফ্যাসিবাদের দোসর বলছেনৃ অমুক অমুক টিভিতে আছেৃ আপনাদের দাবির মধ্যে সেটা জোরালো তো নাইৃ আপনি সেটা বলতে পারছেন না।

ফ্যাসিবাদের দোসরা কেনো থাকবে প্রশ্ন রেখে জাহিদ কলেন, ফ্যাসিবাদের প্রধান মানুষটি পালিয়ে যেতে পারে, যে ফ্যাসিবাদের একক কর্তৃত্ববাদের প্রতিষ্ঠাতা, প্রশ্রয়দাতা সব কিছু করেছে, যে কিনা হাসতে হাসতে মানুষকে মেরে ফেলার জন্য বলেছেন সেই মানুষ যদি পালিয়ে যেতে পারে তাহলে তার দোসরা কিভাবে থাকে? মনে রাখতে হবে আমাদের সরিষার মধ্যে যেন ভূত না থাকে। সো নিড টু বি ভেরি ক্লিয়ার এন্ড ইউ নিড টু বি ভেরি ক্লিয়ার.. ইট ইজ ইউর প্রোফেশন। সো আপনারা ক্লিয়ারলি, লাউন্ডলি ৃইউ নিড স্পিক আউট ট্রুথ। তাহলে দেখবেন আমরা বিএনপি সত্যের সাথে, মানুষের সাথে, পেশাজীবীদের সাথে, সাংবাদিকতার স্বার্থে, জনগনের স্বার্থে আমাদের একটাই কথা ‘সবার আগে বাংলাদেশ’।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ফেডোরেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সহকারি মহাসচিব বাছির জামাল, সহসভাপতি খায়রুল বাশার, একেএম মহসিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি হাসনাত করীম পিন্টু, রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর : ১৬ জুন-বাংলাদেশের সাংবাদিকতা ইতিহাসে সংবাদপত্রের ‘কালো দিবস’। এই দিনটির তাৎপর্য স্মরণ করে গাজীপুর প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক আলোচনা সভা। সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর (জেইউজি) এর উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় বক্তারা ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিকাংশ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সোমবার (১৬ জুন ২০২৫) বিকেল ৪ টায় অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের সভাপতি এইচ এম দেলোয়ার হোসেন। সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সেক্রেটারি মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মাজহারুল আলম। তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ১৬ জুন ছিল বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হামলার দিন। সত্যের কণ্ঠরোধ করে কখনোই গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা যায় না।”

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, সাবেক সভাপতি নাসির আহমেদ, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল বারী বাবুল, সাধারণ সম্পাদক শাহ শামসুল হক রিপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, এডভোকেট জাকিরুল ইসলাম, প্রিন্সিপাল হুমায়ুন কবির, সাংবাদিক শামসুল হুদা লিটন, গাজী খলিলুর রহমান ও মাজহারুল ইসলাম কাঞ্চন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সংবাদপত্র কেবল একটি শিল্প নয়, এটি একটি জাতির বিবেক। ১৯৭৫ সালের একদলীয় শাসনব্যবস্থার ছায়া থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যারা আজও সাংবাদিকদের দমন করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় এখনই।

সভায় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, কলামিস্ট, শিক্ষক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনা শেষে কালো দিবস উপলক্ষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাকশালের জনক শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি চারটি মিডিয়া ছাড়া সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন শত শত সংবাদকর্মী বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছে। তাদের সাথে আমিও চাকরি হারিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে, ততবার সংবাদপত্রের উপর কালো ছায়া নেমে এসেছে।

বিগত ১৬ বছর হাসিনা সরকার সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের নামে নিজেদের সেবাদাস তৈরি করেছিল। ৫ আগস্ট জুলাই বিপ্লবের পর গণমাধ্যম যে স্বাধীনতা ভোগ করছে তা নজিরবিহীন।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা মানে এই নয় যে, দেশের স্বাধীনতা, সার্ভৌমত্ব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা বিঘিœত করা। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম কর্মীরা দেশের স্বাধীনতা, সার্ভৌমত্ব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক সুরক্ষা এবং সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের অধিকারকে নিশ্চিত করার পক্ষেই কাজ করবে।

গতকাল মঙ্গলবার সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিএমইউজের উদ্যোগে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দিনকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান হাসান মুকুলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তবর্তীকালীন কমিটির সদস্য মুস্তফা নঈম, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন-সিএমইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান, বাসসের বিশেষ প্রতিনিধি মিয়া মোহাম্মদ আরিফ, সিনিয়র সাংবাদিক ওয়াহিদ জামান, কামরুল হুদা, আমার দেশের ব্যুরো প্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাস, বিজনেস বাংলাদেশ ব্যুরো প্রধান জাহাঙ্গীর আলম,বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার ইমরান এমি, রূপালি বাংলাদেশের ব্যুরো প্রধান জালাল উদ্দীন সাগর, পূর্বদেশের স্টাফ ফটোগ্রাফার জাহেদ তালুকদার প্রমুখ।