আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ৮০ হাজারের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এছাড়াও নির্বাচনে নিরাপত্তা রক্ষায় পর্যাপ্ত পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। গতকাল সোমবার দুপুরে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার, র‌্যাব-১০ কার্যালয়, মডেল থানা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একথা বলেন।

এ সময় জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক কয়েদি ও আসামীদের খোঁজখবর নেন, জেলখানার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন, জেলের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি র‌্যাব-১০ হেড কোয়ার্টার, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ও তেঘরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে কোথায় কী ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে, তার জন্য আমার দেখতে আসা। ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তাসহ ভোটারদের নিরাপত্তার বিষয়ে নির্বাচন কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে দেখা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা বুথ করে দেয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নজর দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অতীতের তুলনায় এবার আনসার, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্য বেশি মোতায়েন করা হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নিয়মিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচনি প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে দায়িত্ব রয়েছে সেগুলো সরেজমিনে গিয়ে দেখা হচ্ছে, কোথায় কী ধরনের ঘাটতি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বডি ক্যামেরাসহ কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ --আইজিপি

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য আগামী নির্বাচন, আমরা এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার অংশ হিসেবে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আট লক্ষ সদস্য মোতায়েন সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সংস্থাগুলো হলো- পুলিশ, আনসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এছাড়াও, নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করবে এমন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনের সময় প্রিজাইডিং অফিসারদের সুরক্ষার জন্য আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনের আগে সরকার ৪০,০০০ বডি-ওয়ার্ন ক্যামেরা বা বডিক্যাম কিনতে যাচ্ছে। ৪৭,০০০ ভোটকেন্দ্রের একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে ভোটকেন্দ্র থেকে রিয়েল-টাইম আপডেট পেতে ক্যামেরাটি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

এদিকে সরকার শিগগীরই পুলিশের হারিয়ে যাওয়া প্রায় ৭শ’ অস্ত্র উদ্ধারে তথ্য প্রদানের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করতে যাচ্ছে, যেগুলো গত বছরের ৫ আগস্টের পর লুট করা হয়েছিল।

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনা থেকে মোট ৫,৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৬,৫১,৬০৯ রাউন্ড গুলী লুট করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।

জব্দ করা অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে - রাইফেল, সাব-মেশিনগান (এসএমজি), লাইট মেশিনগান (এলএমজি), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, টিয়ার গ্যাস লঞ্চার, টিয়ার গ্যাস শেল, টিয়ার গ্যাস স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড এবং গুলী।

গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের জন্য সরকার যৌথ অভিযান শুরু করেছে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই সৃষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং লুণ্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য পুলিশ গত ৫ আগস্টের পরপরই অপরাধীদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু করে এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দেশব্যাপী অভিযান অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

মর্যাদা রক্ষায় সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, দীর্ঘদিন পর দেশে একটি সুন্দর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে বিভিন্ন দেশের পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত থাকবেন। সমগ্র পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা রক্ষায় আমাদের একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে হবে। গতকাল সোমবার রাজারবাগের বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ডিএমপির জুলাই-২০২৫ মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন,আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পুলিশকে রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে থেকে পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ঢাকা মহানগর এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল ব্যবহার করে রাজধানীতে অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে কাগজপত্রবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, জনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। যে-কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য ডিএমপির সকল সদস্যকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়া অপরাধ সম্পর্কে আগাম তথ্য সংগ্রহ করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং সাধারণ জনগণের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক ও বোঝাপড়াও বৃদ্ধি করতে হবে।

সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস)-এর তথ্য নিয়মিত আপডেট রাখার ওপর গুরুত্বারোপ বলেন, সিআইএমএস-এর তথ্য নিয়মিত আপডেট রাখতে হবে।কেননা,এসব তথ্যের সঠিক ও সময়োপযোগী ব্যবস্থাপনা তদন্ত প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ করে তুলবে। একইসঙ্গে ওয়ারেন্ট তামিল ও চার্জশিট দাখিলের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক ও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দেন, যাতে মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।

সভায় জুলাই মাসের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি উপস্থাপন করেন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন।এছাড়া সভায় মাসব্যাপী জননিরাপত্তা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হয়।

অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস এন মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) মো. মাসুদ করিম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলীসহ যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার, ডিএমপির সকল থানার অফিসার ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।