মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : আর কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল ফিতর। এরই মধ্যে আপনজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে গ্রামের বাড়িতে ছুটে চলেছেন মানুষ। তবে যারা ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে যাবেন তাদের জন্য সড়কপথে ভোগান্তির শেষ থাকে না। অফিস আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য বা গার্মেন্টস অনেকটা একসাথে বন্ধ হবার কারণে সবাই একসাথে ছুটে চলেন আপন নীড়ে। তাই সড়ক পথের বাড়তি ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে অনেকেই আকাশ পথকে বেছে নিয়েছেন।
জানা গেছে, ঈদকে কেন্দ্র করে আকাশপথে অভ্যন্তরীন রুটে টিকেটের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় দেশীয় একাধিক এয়ারলাইন ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে। এয়ারলাইনসগুলো বলছে, ঈদকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুর, সিলেট, যশোর এবং ইদের পরে কক্সবাজার রুটে টিকেটের চাহিদা বেশি। প্রতিটি রুটের ৮৫ শতাংশের বেশি টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি এবং ভ্যাট ট্যাক্স বেড়ে যাওয়ায় এবার বাড়তি দামে বিমানের টিকেট কিনতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ঈদের ছুটি সামনে রেখে টিকিট চাহিদার শীর্ষে রয়েছে সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহী। ঈদের পর কক্সবাজারের টিকিটের চাপ বেশি। বাড়তি চাপ সামাল দিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১৩টি অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া এয়ার সৈয়দপুর রুটে ২টা ও কক্সবাজার রুটে ৩টি ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে।
বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউএস-বাংলার ফ্লাইট আগে থেকেই বেশি। এখন রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এয়ারলাইন্সগুলো দিনে প্রায় সাত হাজার যাত্রী বহন করে।
১৭ মার্চ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রীদের সুবিধার্থে অভ্যন্তরীণ রুটে ১৩টি বিশেষ ফ্লাইট বাড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইটগুলো পরিচালিত হবে। এর মধ্যে ঢাকা-রাজশাহী-ঢাকা রুটে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ছয়টি, ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে ২৬ থেকে ৩১ মার্চ ছয়টি এবং ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা রুটে ২৭ মার্চ একটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, ঈদে অনেকেই সড়কপথ এড়িয়ে ঝামেলামুক্তভাবে বাড়ি গিয়ে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে চান। সেজন্য আকাশ পথকে বেছে নেন। এছাড়া নিয়মিত যাত্রী আছে। যাত্রীদের চাহিদার ভিত্তিতে এবার বিমানের ১৩টি বিশেষ ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। বিমানের যে কোনো সেলস সেন্টার, বিমান ওয়েবসাইট, বিমান কল সেন্টার ১৩৬৩৬ ও বিমান অনুমোদিত ট্রাভেল এজেন্সি থেকে এসব রুটের টিকিট কিনতে পারছেন যাত্রীরা।
এখন সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন করছে ইউএস-বাংলা। এবার ঈদে কোনো ফ্লাইট বাড়ায় নি তারা। জানতে চাইলে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, আমাদের এমনিতেই ফ্লাইট সংখ্যা বেশি। রমযানের আগ থেকেই সৈয়দপুর, যশোর ও রাজশাহীর টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। এই রুটে চাহিদা বেশি থাকে। তিনি বলেন, রোজার সারা মাস বন্ধ, তাই পরিবারের অনেকেই আগেভাগে চলে গেছে। এবার ঈদের ছুটিও লম্বা। চাপটা ২৭-২৯ রোজার শেষের দিকে। ঈদের পরে ৪ ও ৫ তারিখের টিকেটের চাহিদাও বেশি। ইদের দিন থেকে কক্সবাজারে চাহিদা বেশি। আজ কালের মধ্যে সব ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইউএস-বাংলা ৯টি দেশের ১১টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। ঈদের ছুটিতে এসব রুটে পর্যটকদের টিকিট চাহিদা কেমন, জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম বলেন, স্বাভাবিক সময়ের মতোই আন্তর্জাতিক গন্তব্যে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারতে পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় থাইল্যান্ড এবং মালদ্বীপে পর্যটক বেশি ভ্রমণ করছেন। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এ চাপ দেখা যাচ্ছে। এবার ঈদে নভোএয়ারেরও সৈয়দপুর, যশোর, রাজশাহীর টিকিটের চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন নভোএয়ারের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মেজবাউল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি বছরই ঈদে আকাশপথে ঘরমুখো যাত্রী চাহিদা বাড়ছে। আশাকরি ঈদের আজ কালের মধ্যে সব টিকিট বিক্রি শেষ হবে। এয়ার অ্যাস্ট্রা এয়ারওয়েজ লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) সাকিব হাসান শুভ বলেন, ঈদ যাত্রীদের কথা চিন্তা করে ইদের আগে সৈয়দ পুর রুটে ২টি বিশেষ ফ্লাইট এবং ইদের পরে কক্সবাজার রুটে ৩টি বিশেষ ফ্লাইট চালানো হবে। ইদের আগের সব রুটের ৮০ শতাংশের বেশি টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। কক্সবাজার রুটে ইদের পরে ৯০ শতাংশ টিকেট শেষ, চট্টগ্রাম রুটে ইদের আগে ও পরে ৭০ শতাংশ টিকেট শেষ। তিনি বলেন, এবার যাত্রী গত বছরের মতোই।