গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে অধিকার। এতে সংগঠনটি গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে র‌্যাব বিলুপ্তসহ সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে।

এর মধ্যে রয়েছে-সব গুমের ঘটনায় স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত পরিচালনা করতে হবে, গুম অবস্থা থেকে ফেরত না আসা ব্যক্তিদের অনুসন্ধানের জন্য নীতিমালা প্রণয়ণ করে একটি জাতীয় কৌশল গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী বিষয়, গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা বা সাজানো মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, গুম অবস্থা থেকে ফেরত না আসা ব্যক্তিদের পরিবার যেন ভুক্তভোগীর ব্যাংক হিসাব, সম্পদ ও সম্পত্তি পরিচালনা করতে পারে সে জন্য Certificate of Absence প্রদান করা এবং ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণের বিধান রাখতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগী ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ণ করতে হবে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ বাতিল বা সংশোধন করতে হবে, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় জড়িত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) কে বিলুপ্ত করতে হবে, গুমের প্রমাণ ধ্বংসের সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তি বন্ধে ন্যায্য, স্বচ্ছ ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে এবং আইসিপিপিইডি (ICPPED) বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান অনুযায়ী ফরেনসিক, আইনগত ও তদন্তে সক্ষমতা উন্নত করতে বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি ব্যবস্থা উন্নত করা।

বিবৃতিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময় রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে গুমকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ডিজিএফআই-এর জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার ও র‌্যাবের অবৈধ বন্দিশালায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের আটক রেখে নির্যাতন চালানো হতো। অনেক ভুক্তভোগী আজও নিখোঁজ রয়েছেন, কেউ কেউ ফিরে এলেও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে বা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ভোগান্তিতে আছেন। অধিকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় নতুন করে গুমের ঘটনা না ঘটলেও বিচার প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলছে। তাই ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধিকার-এর প্রেসিডেন্ট ড. তাসনিম সিদ্দিকী। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গুম কমিশনের সদস্য নাবিলা ইদ্রিস এবং দৈনিক আমার দেশ এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও অন্যান্য অতিথিদের উপস্থিতিতে বিবৃতিটি পাঠ করেন অধিকার-এর সিনিয়র রিসার্চার তাসকিন ফাহমিনা।

গুমের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার-ক্ষতিপূরণ দাবি: এদিকে গুমের শিকার ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। আসক বলছে, ‘বলপূর্বক গুম’ শুধু একজন ব্যক্তির বা একটি পরিবারের ট্র্যাজেডিই নয়, বরং যে কোনও রাষ্ট্রের মানবাধিকার সুরক্ষায় চরম ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক বলপূর্বক গুম দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবিরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিনটি গভীর শোক, উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে পালন করা হবে। এতে বলা হয়, আসক বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব বলপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে সংহতি জানাচ্ছে, যারা তাদের অঞ্চলে বা প্রান্তে এই ধরনের নিষ্ঠুর ঘটনার শিকার হয়েছেন। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আসক মানবাধিকারের পক্ষে এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিগত দেড় যুগ ধরে বলপূর্বক গুমের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অনেক পরিবার আজও প্রিয়জনের সন্ধানের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। নিখোঁজ হওয়া এসব ব্যক্তির ভাগ্যে কী ঘটেছে—তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এখনও অজানা রয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ উঠলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি এবং দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায়নি। গুমের সংস্কৃতি একটি ভয়ংকর দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে, যা আইনের শাসন ও নাগরিকের জীবনের অধিকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।