গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরগেটে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেছেন, “পৃথিবীতে দুইশো কোটি মুসলমান থাকলেও আজ গাজার মুসলিমরা অভিভাবকশূন্য। ফিলিস্তিনের নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধরা ইসরাইল বাহিনীর নির্মম গণহত্যার শিকার হচ্ছে। মুসলিম দেশগুলোর দ্বারা বেষ্টিত দখলদার ইসরাইল মুসলমানদের পবিত্র ভূমি দখল করছে, অথচ আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামতপ্রাপ্ত শক্তিশালী মুসলিম দেশগুলো নির্বিকার। পরিস্থিতি এমন যে, মুসলিম নেতারা যেন ইসরাইলের হাতে জিম্মি।”

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দামের নেতৃত্বে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মু'তাসিম বিল্লাহ শাহেদী, প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েমসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া ঢাকাস্থ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি, সেক্রেটারিসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুসলমানদের পবিত্রতম ভূমি, মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসাধন্য ফিলিস্তিনকে আমাদের চোখের সামনে মুছে ফেলা হচ্ছে। প্রতিমূহুর্তে বোমার আঘাতে মানুষের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং এক লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। সময় বাড়ার সাথে সাথে শহীদের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। অথচ মানবাধিকার সংগঠন, মুসলিম কমিউনিটি ও মুসলিম স্বার্থ রক্ষায় গঠিত সংস্থাগুলো নিশ্চুপ থেকে ওই গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছে, কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আমরা লক্ষ্য করছি না।

তারা আরও বলেন, অভিশপ্ত ইহুদী জাতির পতন সময়ের ব্যাপার। সারাবিশ্বের মুসলমানরা আজ জেগে উঠেছে। আমরা বাংলাদেশ থেকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, ফিলিস্তিনে আর কোনো বোমা পড়লে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে। ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রশিবির ঘরে ফিরে যাবে না। সারাবিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের সাথে আমরা রাজপথে অবস্থান করব, ইনশাআল্লাহ।

সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম চলমান এই আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে সমাবেশ সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

খুলনা ব্যুরো : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ও মহানগরী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, গাজায় ইহুদিদের গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে জঘণ্য ও নিকৃষ্টতম যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। এই অপরাধে অবৈধ ইসরাইলের পৃথিবীর মানচিত্রে অস্তিত্বের কোনো নৈতিক অধিকার নাই। তিনি আরো বলেন, আগে ইসরাইল ফিলিস্তিনে হামলা করলে মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিবাদ হতো, এখন হয় না। এর কারণ, মধ্যপ্রাচ্যও এখন পুঁজিবাদের অংশ হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের এ লড়াই পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, আজ আমরা ব্যথিত, মর্মাহত মানবতার ইতিহাসে এর চাইতে বর্বরতা আর কিছু হতে পারে না। যেখানে অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনের নিরীহ নিরাপদ মুসলিমদের ওপর বর্বর ইজরায়েল গোষ্ঠী হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেহ বাংলাদেশে আর মন পড়ে আছে ফিলিস্তিনে। তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। আজ এই বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাদেরকে ধিক্কার জানাই। আমরা মনে করি প্রতিটি শান্তিকামী মানুষ এই বর্বরতার নিন্দা জানা”েছ। অনতিবিলম্বে এই হত্যা বন্ধ করতে হবে। ইজরায়েলের সঙ্গে বিশ্বের সব দেশকে ব্যাবসা-বাণিজ্য ও সব প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। গাজায় ইসরাইলি সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা মহানগরী ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও মহানগরী সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি রাকিব হাসানের পরিচালনায় বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন, সোনাডাঙ্গা থানা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি জাহিদুর রহমান নাঈম, খুলনা জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির, সেক্রেটারি ইলিয়াস হোসাইন, মহানগরী দপ্তর সম্পাদক ইসরাফিল হোসেন, সাহিত্য সম্পাদক বেলাল হোসেন, প্রকাশনা সম্পাদক আদনান যুবরাজ, এইচ আর ডি সম্পাদক সেলিম শেখ, ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক ইমরানুল হক, আইন সম্পাদক আব্দুর রশি, বিএল কলেজ সভাপতি হযরত আলী, সিটি কলেজ সভাপতি মিলন হোসেন রাজ, খুলনা সদর উত্তর থানার সভাপতি এহসান মাহবুব সাকিব, খুলনা সদর দক্ষিণ থানার সভাপতি জুবায়ের হোসেন, সোনাডাঙ্গা দক্ষিণ থানার সভাপতি নাঈমুল ইসলাম, সোনাডাঙ্গা উত্তর থানার সভাপতি হাফেজ মুহিবুল্লাহ, খুলনার দারুল কুরআন সিদ্দিকিয়া মাদরাসার সভাপতি হাবিবুল্লাহ রাজু সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বরিশাল অফিস : ফিলিস্তিনে ইসরাইলের নৃশংস গনহত্যা ও বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বরিশাল মহানগর। আজ ৮ এপ্রিল রোজ মঙ্গলবার নগরীর জিলা স্কুল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউন হল চত্বরে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য রিয়াজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি হাসান নাঈমের সঞ্চালনায় মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম, বরিশাল জেলা সেক্রেটারি সাঈদ আহমদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সেক্রেটারি মনির হোসাইন, বরিশাল মহানগর প্রচার সম্পাদক রাশেদুল হাসান, অর্থ সম্পাদক আব্দুর রহমান সুজন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হক সহ বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা ও মহানগরের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সভাপতির বক্তব্যে মহানগর সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন,শত বছর ধরে ইসরাইল ফিলিস্তিনে নিরীহ মুসলিমদের উপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এবারও কাপুরুষের মত নিরীহ ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা চালিয়ে সহস্রাধিক নারী-শিশুকে হত্যা করেছে। রাসুলুল্লাহ্ (স.) ঘোষিত ভবিষ্যতবানী অনুসারে এই অভিশপ্ত ইয়াহুদীবাদীরা মানুষ হত্যা করে এই পৃথিবীতে টিকতে পারবে না। আমরা বাংলাদেশের দায়িত্বশীল ছাত্র সংগঠন হিসেবে মুসলিম বিশ্বের সকল নেতৃবৃন্দের প্রতি বিশেষ করে ওআইসির প্রতি এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার আহবান জানাচ্ছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম বিশ্বের দুর্বল নেতৃত্ব ও গাফলতির কারনে গাজার গণহত্যার ব্যাপারে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না।