ন্যূনতম খরচ ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা ধরে হজ্বের একটি নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। বিমানভাড়া কমায় আগামী বছর হজ্ব পালনে চলতি বছরের চেয়ে খরচ কিছুটা কমেছে। নতুন প্যাকেজসহ এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্বের তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছর ছিল দুটি প্যাকেজ। আগামী বছর হজ্ব ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।
গতকাল রোববার হজ্ব প্যাকেজ-২০২৬ ঘোষণা সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন ২০২৬ সালের হজ্ব প্যাকেজ ঘোষণা করেন।
২০২৫ সালে হজ্বে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্যাকেজ-১ এর মাধ্যমে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা। আর প্যাকেজ-২ এর মাধ্যমে হজ্ব পালনে খরচ হয় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা। আর বেসরকারিভাবে হজ্ব পালনে সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। এর ভিত্তিতে প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে হজ্ব এজেন্সিগুলো।
চলতি বছরের মতো আগামী বছরও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ্বযাত্রীদের জন্য একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। হজ্ব এজেন্সিগুলো এর নিচে কোনো প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে না।
এদিন সংবাদ সম্মেলনের আগে হজ্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভা হয়েছে। এই কমিটির সভাপতি ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে অংশ নেন। সভায় হজ প্যাকেজ অনুমোদন করে পরে ঘোষণা দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর বিমানভাড়া কমানো হয়েছে। তবে ২০২৬ সালের হজ্বে সৌদি সরকার স্বাস্থ্যবিমার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে ১৩০ সৌদি রিয়াল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ হাজার ২৭০ টাকা।
মিনা ও আরাফায় তাঁবু ভাড়া ৪.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে ‘দমে শোকর’ বাবদ ৭২০ সৌদি রিয়াল তথা ২৩ হাজার ৬৫২ টাকা জমাদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ বছর প্রথমবারের মতো ‘দমে শোকর’ বাবদ টাকা হজ্ব প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এছাড়া, এ বছর সৌদি রিয়ালের বিনিময় হারও বেড়েছে। গত বছর সৌদি রিয়াল ছিল ৩২ টাকা ৫০ পয়সা, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা। এসব বিবেচনায় নিয়ে ২০২৬ সালের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে।
এ বছর সরকারি মাধ্যমে ‘হজ্ব প্যাকেজ-১ (বিশেষ)’, ‘হজ্ব প্যাকেজ-২’ ও ‘হজ্ব প্যাকেজ-৩’ শিরোনামে তিনটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে।
হ্জ্ব প্যাকেজ-১ (বিশেষ) : এই প্যাকেজের হজ্বযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাটাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ পাঁচজনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি+’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।
হজ্ব প্যাকেজ-২ : এই প্যাকেজের হজ্বযাত্রীদের মক্কায় হারাম শরীফের বহিরাঙ্গন থেকে ১.২ কিলোমিটার থেকে ১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মারকাজিয়া বা সেন্ট্রাল এরিয়ায় হাজীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। অ্যাপাচড বাথরুমসহ একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-২ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা।
হজ্ব প্যাকেজ-১ ও হজ প্যাকেজ-২ এ নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে মক্কা ও মদিনায় ২ ও ৩ সিটের রুম আপগ্রেডেশন ও শর্ট প্যাকেজ সুবিধা গ্রহণ করা যাবে। হজ্বযাত্রীদের সৌদি আরব অবস্থানকাল হবে সাধারণত ৩৫-৪৭ দিন। তবে শর্ট প্যাকেজে সৌদি আরবে অবস্থানকাল হবে ২২-৩০ দিন।
হজ্ব প্যাকেজ-৩ : এটি সাশ্রয়ী হজ্ব প্যাকেজ। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদের আবাসন হবে মক্কায় আজিজিয়া এলাকায় এবং মদিনায় মারকাজিয়া এলাকার বাইরে। একরুমে সর্বোচ্চ ছয়জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মিনায় জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান হবে এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে। হারাম শরীফে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য যাতায়াতের নিমিত্ত এসি বাসের বন্দোবস্ত থাকবে। এ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই প্যাকেজ সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের জন্য নতুন সংযোজন। এর আগে কখনো সরকারি মাধ্যমের হাজীদের আজিজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে সর্বোচ্চ হজযাত্রী প্রেরণকারী তিনটি দেশ ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার হজ্বযাত্রীদের বহু বছর ধরে আজিজিয়া এলাকাতেই রাখা হয়।
এছাড়া, আমাদের দেশের হজ্বযাত্রীদের দীর্ঘবছর যাবৎ যে এলাকায় রাখা হতো এই এলাকার হোটেল বা বাড়িগুলো সৌদি সরকার ভেঙে ফেলেছে। এ কারণে আগামীতে বাংলাদেশের হজ্বযাত্রীদের আজিজিয়া এলাকায়ই রাখতে হবে।
হজ্ব এজেন্সিসমূহের জন্য ‘বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ্ব প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। সরকার অনুমোদিত এই প্যাকেজ গ্রহণ করে এজেন্সিসমূহ অতিরিক্ত দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।
প্রত্যেক হজযাত্রীর খাবার বাবদ প্রতিদিন ন্যূনতম ৩৫ সৌদি রিয়াল ব্যয় হতে পারে। এ হিসাব অনুসারে খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা হজ্বযাত্রীদের সঙ্গে নিতে হবে এবং নিজ দায়িত্বে খাবার ক্রয় করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সনের ২৬ মে পবিত্র হজ্ব অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে সম্ভাব্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ্ব পালন করতে পারবেন।
গত ২৭ জুলাই থেকে হজ্বের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হয়েছে এবং সৌদি সরকারের রোডম্যাপ অনুসারে আগামী ১২ অক্টোবর হজ্বের নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ হবে। ১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি ২০২৬ সালের হজ্বে গমন করতে পারবেন। তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্যাকেজ মূল্যের সমুদয় অর্থ আবশ্যিকভাবে জমা প্রদান করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আগামী ৯ নবেম্বর হজ্বচুক্তি সম্পাদিত হবে। ২০২৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাড়িভাড়া ও পরিবহন চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজ্ব ভিসা ইস্যুর কার্যক্রম শুরু হবে। আর হজ্ব ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।