রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কিভাবে হবে তা চূড়ান্ত না হলেও বর্তমান বিধান পরিবর্তনে সবাই একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেÑ প্রত্যেক রাজনৈতিক দল স্মরণ করিয়ে দেয় এর সঙ্গে পার্লামেন্টের দ্বি-কক্ষ জড়িত। রাষ্ট্রপতি কিভাবে নির্বাচিত হবেন, সেক্ষেত্রে উচ্চকক্ষ কিভাবে হবে তার পেছনে আমরা দ্বিকক্ষ পার্লামেন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। সংবিধানের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে বিধান আছে, ৪৮ এর ১ অনুচ্ছেদ আছে, এই অনুচ্ছেদ পরিবর্তনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। পরিবর্তিত, সংশোধিত ও সংস্কারের বিষয়টি আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব।
গতকাল বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শেষে বিকেলে তিনি এ কথা জানান। এসময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানের ৪৮ (১) অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন চান সবাই। তবে নতুন প্রক্রিয়ার প্রায় পুরোটাই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই আগে আইনসভা নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ৫০০ ভোটের ইলেক্টোরাল কলেজ হবে, নাকি জেলা পরিষদ-সিটি করপোরেশন যোগ হবেÑএর অনেক কিছুই নির্ভর করছে আইনসভা দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট হবে কি না তার ওপর। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত মীমাংসায় আসতে চাইলে আগে আইনসভার বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ প্রসঙ্গেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি উল্লেখ করে কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরপর দুই মেয়াদে হলে আর হওয়া যাবে না কিংবা পরে এক বা দুই মেয়াদ বাদ দিয়ে হওয়া যাবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। অন্যান্য আরও কিছু প্রস্তাবও এসেছে। আমরা এই আলোচনা অব্যাহত রাখব এবং আগামী রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় আবার আলোচনা শুরু করব। আমরা আশা করব এ সপ্তাহে যেসব বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে, সেগুলো প্রথমে আলোচনা করব।
দ্বিকক্ষ আইনসভা নিয়ে সবাই একমত হয়েছে কিনাÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। ১০০ সদস্য বিশিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রেও একমত হয়েছে। তার মানে এই নয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আরও সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে, যেগুলো ঐকমত্য হলে পরে জানানো হবে।
কিন্তু যেগুলো একমত হবে না তার ভবিষ্যৎ কী হবেÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী অনেকগুলো বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। সব বিষয়ে আমরা একমত হতে পারব না সেটা আগেও বলেছি। তারপরও যেগুলো উল্লেখযোগ্য বিষয়ে একমত হতে পারব না, সেগুলো আমরা ইতিবাচকভাবে তুলে ধরব। আমরা আশা করব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আমরা একমত হতে পারব।
বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধিদল অংশ নেয় তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে, যাদের মধ্যে রয়েছেনÑ স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান।
অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদওয়ান আহমেদ, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদউজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।