# অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ, ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব ---তারেক রহমান

খুব শিগগিরই বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা দেখতে পাবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যাশার কথা জানান। খালেদা জিয়া বলেন, যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আর সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে তিনি (জিয়াউর রহমান) শাহাদাৎ বরণ করেছেন, সেই গণতন্ত্রের নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা আজো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পদে পদে। খুব শিগগিরই আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত দেখতে পাবো, এই হোক শহীদ জিয়ার শাহাদাৎ বার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার।

এ লক্ষ্যে সুশৃঙ্খলভাবে এগিয়ে চলার জন্য বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, মনে রাখবেন সবার জন্য গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধানের যে রাজনীতি শহীদ জিয়া রেখে গেছেন, তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। আমরা তার রূহের মাগফেরাত কামনা করছি।

৩০ মে’র ঘটনার কথা বলতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী খালেদা জিয়া বলেন, প্রতি বছর মে মাসের এই দিনটি আমাদের পরিবারে আসে এক বেদনা বিধুর স্মৃতি নিয়ে। এদিনে শুধু আমাদের পরিবার নয়, বরং সমগ্র দেশই হয়ে উঠেছিলো বেদনার্ত ও অভিভাবকহীন। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্মের সাথে জড়িয়ে থাকা এক অবিচ্ছেদ্য নাম শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। যে চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করে তিনি এদেশের সাথে তার নাম অবিচ্ছেদ্য করেছিলেন। সেই চট্টগ্রামে এক সফল, সৎ, দূরদর্শী প্রকৃত দেশপ্রেমিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এদেশে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বনির্ভরতা, উন্নয়ন এবং নিজস্ব জাতীয়তাবাদ সৃষ্টির অন্যন্য রুপকার শহীদ জিয়া।

রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনায় গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বিএনপি চেয়ারপার্সন। কারাগারে যাওয়ার আগে সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিএনপি চেয়ারপার্সন শাহাদাত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এই দিবসে বেগম জিয়া সব সময় শ্রোতা হিসেবেই দর্শক সারিতে উপস্থিত থাকতেন। তবে এবার দিবসটি উপলক্ষে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখলেন।

এই আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং এতে সভাপতিত্ব করেন থাইল্যান্ডের ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

জনগণের আকাক্সক্ষা উপলব্ধি করতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, অনেক উপদেষ্টাই জনগণের দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। গত ১০ মাসেও নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। এর ফলে দেশে এক ধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এই অনিশ্চয়তার কারণে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, বিনিয়োগ বাড়ছে না। অনেক কলকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন না।

সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি নেই। কিন্তু সময়ক্ষেপণ নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ সবার আপত্তি আছে। যদি সংস্কার শেষে সরকার ইতিবাচক হয়, তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া যেতে পারে। বিএনপি সেই দাবি জানিয়েছে। তবে সংস্কার বিষয়ে যদি সবাই একমত হয়, তাহলে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, এখানে সরকারের জেতা বা হারার কোনো বিষয় নয়। এটা জনগণের অধিকার। তাই আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ও দিনক্ষণ ঘোষণা করুন।

আলোচনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের উপদেষ্টাদের সাথে জনগণের যোগাযোগ নেই। তারা মানুষের দুঃখ নিয়ে অবগত নয়। তাদের কেউ কেউ ফাইল নির্ভর কাজ করছেন। মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত সরকার করতে প্রস্তুত তবে সরকার তা উপলব্ধি করতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, সংস্কারে কোনও রাজনৈতিক দলের আপত্তি নাই তবে সংস্কারের সময়ক্ষেপণ নিয়ে আপত্তি আছে। প্রস্তাবিত সংস্কার শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, শর্ষের ভেতরে ভূত রেখে সংস্কার হবে না। তিনি বলেন, প্রথমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার করতে হবে। উপদেষ্টা পরিষদ নিরপেক্ষ নয়। কয়েকজন ফ্যাসিবাদের দোসর উপদেষ্টাদের মধ্যে আছে। তিনি বলেন, কোন ডিপার্টমেন্টে কোন আইনে যে সংস্কারগুলো আপনারা আনতে চান, যেগুলো নির্বাহী আদেশে সম্ভব ওইসব করে দেন। জুডিশিয়ারি সংস্কার তো প্রায় হয়ে গেছে। জাপানে ইউনূস বলেছেন যে, একটি মাত্র দল ডিসেম্বরের মধ্যে চেয়েছে। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের ভিতরে নির্বাচন দিতে হয় তাহলে নাকি খুব তাড়াহুড়ো করে সংস্কার করতে হবে।