রাজউক এবং গৃহায় ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আবাসন ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, বিআইপি। গতকাল বুধবার ঢাকার বিআইপি কার্যালয়ে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধনের উদ্যোগ: বিআইপির পর্যবেক্ষণ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তোলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিআইপির সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, রাজউক এবং মন্ত্রণালয়ের সবাই আবাসন ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করেন এমন না। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে রাজউক এবং মন্ত্রণালয়ের অনেক সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী চক্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত। এমনও হয়েছে রাজউক এবং মন্ত্রণালয় দিনের পর দিন রিহ্যাব, আর্কিটেক্টদের নিয়ে মিটিং করেছে সেখানে প্ল্যানারদের রাখা হয়নি। মন্ত্রণালয় ও রাজউকে যারা কাজ করেন তাদের অনেকেই সীমিত সময়ের জন্য আসেন। এই মন্ত্রণালয়কে তারা অর্থ আহরণের একটা জায়গা মনে করেন। মন্ত্রণালয়ে কাজ করতে এসে, রাজউকে কাজ করতে এসে দুর্নীতি করলে তার কোনো বিচার হচ্ছে না।

আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে রাজউক বারবার ড্যাপ সংশোধন করছে বলেও সংবাদ সম্মলেনে অভিযোগ করেন আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, সরকার আবারও ড্যাপ সংশোধনের উদ্যোগ নিতে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে বেশিরভাগ এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পরিকল্পনাবিদসহ বিভিন্ন সামাজিক, পরিবেশবাদী, পেশাজীবী ও নাগরিক সংগঠনের মতামত ও দাবিকে উপেক্ষা করে সরকার এই সংশোধনের পথে হাঁটছে মন্তব্য করে বিআইপির সভাপতি বলেন, এতে জনবহুল ঢাকা শহরে উঁচু ভবনের সংখ্যা বাড়বে এবং ইতোমধ্যে স্থবির হয়ে যাওয়া শহরে পরিবহন, পরিষেবাসহ সব ধরনের নাগরিক সেবার ওপর অসহনীয় চাপ পড়বে। এই চাপ বহন করার ক্ষমতা এই শহরের নেই। এই ধরনের উদ্যোগ কেন্দ্রীয় ঢাকার বাইরে অন্যান্য নগর এলাকার বাসযোগ্যতাকে একেবারে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।

সংবাদ সম্মেলনে আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আবাসন ব্যবসায়ীদের চাওয়ার কোনো শেষ নেই। আর সরকারও তাদের চাওয়ার কাছে বারবার নতি স্বীকার করছে। কত দিলে তাদের চাওয়া শেষ হবে? আর কত মানুষ মরলে, কত অগ্নিকা- হলে এই রাষ্ট্রের বোধোদয় হবে।

২০২২ সালের ২৪ আগস্ট নতুন ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) কার্যকরের গেজেট প্রকাশ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গেজেট প্রকাশের পর থেকেই কিছু বিষয় সংশোধন করার জন্য আবাসন কোম্পানিগুলো সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। কোম্পানিগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি ড্যাপ সংশোধন করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সে সময়ও সরকারি-বেসরকারি আবাসন, অপরিকল্পিত এলাকা, ব্লক-ভিত্তিক আবাসন, একত্রীভূত প্লটে ফার সুবিধা বাড়ানো হয়। সেবার ড্যাপ সংশোধনের ফলে ভবনের প্রশস্ততা ও উচ্চতা বাড়ানোর সুযোগও বাড়ানো হয়। ছাড় দেওয়া হয় ভবন নির্মাণে সামনের সড়কের প্রশস্ততার ক্ষেত্রেও। সবশেষ, গত ১১ আগস্ট আবার ড্যাপ সংশোধনের উদ্যোগ নেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সেদিন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে এক সভায় বর্তমান ড্যাপে থাকা রাস্তার ভিত্তিতে ফার (ফ্লোর এরিয়া রেশিও), এলাকাভিত্তিক ফার, আবাসন ইউনিটের মত বিষয়গুলো সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।