বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবন প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার মানুষ। গতকাল বুধবার সকাল থেকে ‘ঢাকার সাধারণ ভোটারদের আয়োজনে নগর ভবন অবরোধ, আয়োজনে: নগরবাসী’ ব্যানার নিয়ে তারা নগর ভবনের সামনে জড়ো হন। তারা নগরভবনে মূল ফটকের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেন। এক পর্যায়ে বেলা ১০টার দিকে নগর ভবনের মূল ফটক খুলে দিলে তারা ভেতরে ঢুকে যান। বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ নগর ভবনের সিঁড়িতে অবস্থান নেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলে। মানববন্ধনে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোরালো দাবি জানান তারা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টার পর থেকে নগরভবনের মূল গেটের সামনে মানববন্ধন শুরু করেন নগরবাসী। ধীরে ধীরে সেখাসে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয় এবং তা সমাবেশে রূপ নেয়।

এ সময় হাসান মাহমুদ নামের একজন বলেন, ইশরাক হোসেনকে আমরা ভোট দিতে পেরেছি। সরকারের দরকার নাই, আমাদের মেয়রকে আমরা শপথও পড়াতে পারব। হাজার হাজার মানুষ আজ এখানে এসেছে। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবাই এসেছে। মূলত জনতার মেয়রকে পদে বসাতে এবং মেয়র হিসেবে দেখতে জনতা রাস্তায় নেমেছে। এটা ঢাকাবাসীর প্রাণের দাবি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে কয়েকশ লোক নগর ভবনের সামনে এসেছেন। তারা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। তবে তারা সিটি করপোরেশনের কাজকর্মে কোনো বাধা দিচ্ছেন না। কাউকে নগর ভবনে আসতেও বাধা দিচ্ছেন না।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন হয়। বিএনপির ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র হন। গেল ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের রায়ের কপি পেয়ে ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি। ইশরাক হোসেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মরহুম মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।

পুরান ঢাকার সুত্রাপুরের বাসিন্দা পাভেল আহমেদ দৈনিক সংগ্রাকে বলেন, আমাদের ঢাকাবাসীর দাবি, ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেব শপথ পড়ানো এবং মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া। এ বিষয়টি কোর্ট থেকে রায় দেয়া হয়েছে, এখন পর্যন্ত সবকিছু হয়েছে আইন মেনে। তারপরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দিতে টালবাহানা করছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তো আর কোর্টের চেয়ে বেশি ক্ষমতা দেখাতে পারে না।

বিক্ষোভকারীদের আরেকজন সাইফুল ইসলাম বলেন, নগরবাসী সিটি করপোরেশনকে নিয়মিত ট্যাক্স দিচ্ছে। কিন্তু নাগরিক সেবা পাচ্ছে না। মেয়র না থাকায় নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ করানোর জন্য কোর্ট রায় দিয়েছে, এটা যেন দ্রুত করা হয় সেজন্য আমরা এখানে এসেছি।

সমাবেশে মাইক থেকে ইশরাক হোসেনের উদ্দেশে বলা হয়, আদালতের রায়ে এবং আমাদের ভোটে নির্বাচিত মেয়র আপনি। আপনি জনগণের কাছে আসেন, আমাদের ভোটকে মর্যাদা দিতে আপনাকে আসতেই হবে। আমরা ঢাকা মহানগরীর জনগণ আপনাকে আগামী শুক্রবার সকাল ১০টায় শহিদ মিনারে শপথ পড়াব এবং মেয়র পদে বসাব। দেশের মালিক জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে পারলে শপথ পড়িয়ে চেয়ারেও বসাতে পারে। আর আদালতে রায় পালন না করার কারণে এই সরকারের দায়িত্বশীলরা আদালত অবমাননার দায়ে অপরাধী হবেন।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, জনগণের ভোটে ইশরাক হোসেন মেয়র নির্বাচিত হলেও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন তাপসকে মেয়র ঘোষণা করে। নির্বাচিত মেয়র থেকে ঢাকাবাসীকে বঞ্চিত করে। ফ্যাসিস্ট পতনের পর আদালত ও নির্বাচন কমিশন ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল টালবাহানা করছে। তাকে শপথ গ্রহণ ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে না। ফলে ঢাকাবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা আজকের মধ্যে তাকে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা ও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আমরা লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে যাব। তারা বলেন, যেখানে আদালত রায় দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন আদেশ জারি করেছেন, সেখানে কেন তাকে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। দায়িত্ব বুঝে দেওয়া হচ্ছে না। কোনো ষড়যন্ত্রের কারণে তার দায়িত্ব বুঝে দেয়া হচ্ছে না তার কারণ জানতে চাই।

তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রে কাজ হবে না। আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে লাখ লাখ ঢাকাবাসী রাস্তায় নেমে আসব। দাবি আদায় করেই রাজপথ ছাড়ব।