রাজধানীর উত্তরায় র্যাব পরিচয়ে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’র ডিস্ট্রিবিউটরের এক প্রতিনিধির কাছ থেকে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এ ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ভুক্তভোগী মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি কালো মাইক্রোবাস মোটরসাইকেলটির গতিরোধ করে। এরপর ওই মাইক্রোবাস থেকে র্যাবের পোশাক পরা কয়েকজন ব্যক্তি বেরিয়ে ভুক্তভোগীকে ধরার চেষ্টা করে। তখন ভুক্তভোগী দৌড় দিলে র্যাবের পোশাক পরা ব্যক্তিরাও পেছনে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তারা তাকে ধরে ফেলে। পরে ভুক্তভোগীকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়।
ভুক্তভোগী জানান, ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যাওয়ার পথে একটি কালো মাইক্রোবাসে আসা একদল ব্যক্তি নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে তার পথরোধ করে। পরে টাকাভর্তি ব্যাগসহ তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। এরপর ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে তাকে উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে ফেলে রেখে চলে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে ও প্রকৃত ঘটনার অনুসন্ধানে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের নম্বর ও সিসিটিভি ফুটে সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে পুলিশ। বিকেল চারটা পর্যন্ত মামলা দায়ের না হলেও জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টার পাশাপাশি নগদ এজেন্টের ওই টাকা বহনকারীর চার প্রতিনিধিকে হেফাজতে নিয়ে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম জানান, নগদের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়নের বাসা উত্তরা-১৩ সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৩৭ নং বাসার তিন তলায়। সেখান থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিট দূরত্বেই নগদের ডিস্ট্রিবউটিং অফিস। নয়নের বাসায় ছিল টাকাগুলো। সেখান থেকে আজ (শনিবার) নগদের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের চারজন মোটরসাইকেলযোগে ওই টাকা আনছিলেন। মোড়েই একটি হায়েস গাড়ি নিয়ে ওঁৎ পেতে ছিল ছিনতাইকারীরা। র্যাব সদস্য পরিচয়ে ও র্যাবের কটি পরিহিত কয়েকজন তাদেরকে অস্ত্রের মুখে আটকায়। চারজনের মধ্যে কাউসার, লিয়াকত ও আব্দুর রহমান নামে তিনজনকে পিস্তল দেখিয়ে জিম্মি করে টাকার ব্যাগসহ হায়েস গাড়িতে ওঠানো হয়। বাকিজন ওমর হোসেন লাখের বেশি টাকার আরেকটি ব্যাগসহ দৌড়ে পালাতে সক্ষম হয়। এরপর ছিনতাইকারীরা নগদের প্রতিনিধিদের উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ফেলে রেখে চলে যায়।
ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চারজনকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছিনতাই হওয়া টাকার পরিমাণ সম্পর্কে তারা জানিয়েছেন, দুটি মোটরসাইকেলে করে টাকা আনা হচ্ছিল। এক মোটরসাইকেলে ছিল ১ কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার। ওমর হোসেন জানিয়েছেন, যে তিনি যে ব্যাগ নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন তাতে এক লাখের কিছু বেশি টাকা ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত তিনজন জানিয়েছেন, তাদের চড় থাপ্পর মারা হয়েছে। কিন্তু কেনো নগদের ডিস্ট্রিবিউটর নয়নের বাসায় টাকাগুলো রাখা হয়েছিল? বন্ধের দিনে এতো সকালে এতোগুলা টাকা কেনো বাসা থেকে অফিসে নেয়া হচ্ছিল। তা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দুটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করে আলাদাভাবে টাকা বহন করা হচ্ছিল জানালেও একটি মোটরসাইকেলে ছিল ১ কোটি ৮ লাখ টাকা সেটাই টার্গেট করাটা সন্দেহজনক। ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে ক্লু পেতে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ডিসি আরও জানান, নগদের ওই ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের পার্টনার দুইজন। একজন আব্দুল খালেক নয়ন। টাকাটা তারা বাসায় রাখা ছিল। আরেক পার্টনার তারিকুজ্জামান। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তিনি ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে এখনো ঢাকা ফেরেননি। আমরা নয়নকে থানায় ডেকেছি। আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। তারা কাউকে সন্দেহ করছেন কিনা! আমরাও আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহায়তায় জড়িত ছিনতাইকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। এদিন দুপুরে র্যাব- ১ এর কার্যালয়ে সাংবাদিকরা এই ছিনতাই নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তিনি যদি র্যাবের হন সেও ছাড়া পাবে না। অনেক সময় র্যাব-পুলিশের পোশাক পড়ে অনেকে অনেক অপকর্ম করছে তারাও পার পাবে না।