বেনজীর কন্যার দুবাইয়ের ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খানের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগ থাকায় ঢাকায় তার বাড়ি, জমি প্লট, ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া তার নামে থাকা ছয়টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে, যেসব হিসাবে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩৬ টাকা রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।

জব্দের আদেশ দেওয়া লুৎফুল তাহমিনার স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- তেজগাঁও থানা এলাকার মনিপুরি পাড়ায় ৫ দশমিক ৫৭ কাঠা প্লটের উপর ৩ হাজার ৪০০ বর্গফুটের চার তলা ভবন। একই এলাকায় ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশের আলাদা দুইটি প্লট ও দুই ইউনিটের পুরাতন ভবন, একই এলাকায় এক দশমিক ৩৪ শতাংশ জমি, মিরপুরের পল্লবী এলাকায় ১ হাজার ৮৭২ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। এসব সম্পদের মূল্য ৬ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা দেখানো হয়েছে দুদকের আবেদনে।

আবেদনে বলা হয়েছে, লুৎফুল তাহমিনা খান ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯১ টাকা মূল্যের ‘জ্ঞাত আয়বহির্ভূ’ সম্পদ অর্জন করেছেন। তার স্বামী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ তিনি এই সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদক বলেছে, লুৎফুল তাহমিনা নিজ নামে এবং তার আংশিক মালিকাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক ব্যাংক হিসাবে ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৪৫ টাকা টাকার ‘সন্দেহজনক’ লেনদেন করেছেন। এসব অর্থ ‘স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের’ মাধ্যমে লুৎফুল তাহমিনা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২, এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে মনে করে দুদক। সে জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি তুলে আবেদনে বলা হয়েছে, মামলার তদন্তকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, আসামীরা এ মামলা সংশ্লিষ্ট অপরাধলব্ধ সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন, যা করতে পারলে মামলার মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। বিচার শেষে সরকারের অনুকূলে সম্পত্তি বাজেয়াপ্তির সুবিধার্থে তার বিভিন্ন সম্পত্তির মধ্যে আপাতত এসব স্থাবর সম্পদ ক্রোক, অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন মনে করে দুদক।

গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আসাদুজ্জামান খান কামাল আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। ১৪ অগাস্ট সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতিকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

বেনজীর কন্যার দুবাইয়ের ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে দুবাইয়ে থাকা একটি ফ্ল্যাট জব্দ ও দুটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশননের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

দুদকের হয়ে আবেদনটি করেন কমিশনের উপপরিচালক জয়নাল আবেদীন। আবেদনে বলা হয়, তাহসিন রাইসা তার অবৈধ অর্থ পাচার করেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে অপরাধের অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য তার স্থাবর সম্পত্তি জব্দ এবং অস্থাবর সম্পত্তি অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন।

৭৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বেনজীর, তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চারটি মামলা করে দুদক। মামলায় বলা হয়, বেনজীর ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তার স্ত্রী জিশান মির্জা ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। তাদের বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা এবং মেজ মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

বেনজীর আহমেদ বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ প্রধান, যিনি একাধারে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের বিশেষ ইউনিট র‌্যাবেরও প্রধান ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান। গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে তাকে নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। এরপর আলোচনা শুরু হয় তাকে নিয়ে।