বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তি (পিসিএ) নিয়ে চলমান সমঝোতা দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে। বাংলাদেশ-ইইউ’র মধ্যে তৃতীয় দফা পিসিএ আলোচনায় এই ঐকমত্য গড়ে ওঠে। উভয় পক্ষই একটি বিস্তৃত ও ভবিষ্যৎমুখী অংশীদারিত্ব জোরদারে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। চুক্তিটি চূড়ান্ত হলে তা বাংলাদেশ-ইইউ’র ভবিষ্যৎ সম্পর্ক পরিচালনার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামো হিসেবে কাজ করবে। এতে রাজনৈতিক সংলাপ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সহযোগিতার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই চুক্তি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে ইইউর সঙ্গে পিসিএ স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। যা দুই পক্ষের সম্পর্কের গভীরতা ও পরিপক্বতার প্রমাণ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ৯ ও ১০ অক্টোবর ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই তৃতীয় দফা আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপাক্ষিক) ড. মো. নজরুল ইসলাম। ইইউ’র পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস (ইইএএস)-এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি। দুই পক্ষই বলেছে, তারা একটি ভারসাম্যপূর্ণ, বিস্তৃত ও পারস্পরিক সুবিধাজনক চুক্তি করতে চায়। যা বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্কের নতুন অগ্রাধিকার ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।
আলোচনায় পারস্পরিক আগ্রহের নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে। এর মধ্যে ছিলÍরাজনৈতিক সহযোগিতা, সুশাসন, মানবাধিকার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, যোগাযোগ, ডিজিটাল সহযোগিতা, শিক্ষা, অভিবাসন, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম, শান্তি ও নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়ন। চুক্তির খসড়ার বিভিন্ন ধারায় মতপার্থক্য কমাতে এবং নিজেদের অবস্থান সমন্বয় করতে গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। আলোচনায় ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চায়, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। বহুপাক্ষিক সহযোগিতা শক্তিশালী করবে এবং বাংলাদেশের বিশেষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা, পাশাপাশি উচ্চ-মধ্যম আয়ের পথে অগ্রগতিকে সম্মান জানাবে।
পাওলা পাম্পালোনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগ্রহী। আলোচনার সময় দুইপক্ষের সহযোগিতামূলক মনোভাব ও ধারাবাহিক অগ্রগতির প্রশংসাও করেন তিনি। এদিকে, চতুর্থ দফার আলোচনা সুবিধাজনক সময়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাগণ সশরীরে এবং ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশ নেন।