ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্নের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে জীবনকে উৎসর্গ করলেন মো: আসাদুল্লাহ (২৪)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলীতে শহীদ হয়েছেন এই সংগ্রামী তরুণ। স্ত্রী ছিলেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বাÑযে সন্তানের মুখ দেখতে পেলেন না আসাদুল্লাহ।
শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার রহমতপুর গ্রামে ২০০০ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন মো: আসাদুল্লাহ। শৈশব থেকেই জীবন ছিল সংগ্রামে ভরা। পিতা-মাতার বিচ্ছেদের কারণে জন্মের পর থেকেই নানাবাড়িতে বড় হন। স্থানীয় বালিয়াচন্ডি মাদ্রাসায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। কিন্তু নানার মৃত্যুর পর শিক্ষাজীবনে ইতি টানতে বাধ্য হন।
জীবিকার সন্ধানে মামার হাত ধরে আসাদুল্লাহ পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। রেস্টুরেন্টে কাজ দিয়ে শুরু হলেও পরে গাড়ি মেরামত ও ড্রাইভিংয়ের পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরিবারের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে থাকা এই তরুণ ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর নুরানী খাতুনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রীর পরিবার সবজি বিক্রির আয়ে চলত। শ্বশুরের সহায়তায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ করে একটি লেগুনা কিনে নেন যা চালিয়ে আসাদুল্লাহ মাসে আনুমানিক ২৫ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। হেলাল মার্কেট-আব্দুল্লাপুর রুটে লেগুনা চালানোই ছিল তার পরিবারের রুটিরুজির ভরসা।
কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নতুন মাত্রা নেয়। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে রাজপথ উত্তাল হয়ে ওঠে। ১৮ জুলাই বিকেল ৩টায় আসাদুল্লাহ লেগুনা নিয়ে আজমপুরে পৌঁছান। সেখানে ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ চলছিল। নিজের লেগুনা ফেলে রাজপথে নেমে পড়েন তিনি। স্বৈরাচারী সরকারের গুলী আর টিয়ারশেলের মাঝেও তিনি ছাত্র-জনতাকে রাজপথ ছাড়তে নিষেধ করে সাহস জুগিয়েছিলেন।
বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের ছোড়া তিনটি গুলী তার পেট ভেদ করে। সহযোদ্ধারা তাকে দ্রুত উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন। শহীদ আসাদুল্লাহর জানাযা শেষে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি শেরপুরের রহমতপুরে, যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।
প্রতিবেশী ইবরাহীম বলেন, আসাদুল্লাহ খুবই ভদ্র ছেলে ছিল। দেখা হলে সালাম দিত, খবর নিত। ১৮ তারিখ সকালে ও নিজেই আমাকে বলেছিল আজমপুরে গোলাগুলী হচ্ছে, যেন না যাই। কিন্তু সেইদিন সন্ধ্যায় শুনলাম, আসাদুল্লাহ নিজেই গুলীতে শহীদ হয়েছে।
পেছনে রেখে গেলেন তার অশ্রুসিক্ত মা-বাবা, অল্পবয়সী স্ত্রী এবং তখনো পৃথিবীর আলো না দেখা সন্তানের জন্য এক চিরন্তন শূন্যতা।
শহীদ মো: আসাদুল্লাহর জীবনী যেন হাজারো সংগ্রামী তরুণের প্রতিচ্ছবি Ñ যারা দেশের স্বাধীনতা, অধিকার ও মর্যাদার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।