রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার স্থানটি দেখতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে, কেউ ছোট শিশুদের নিয়ে, আবার কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে দেখতে এসেছেন ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাস্থল।
কেউ তুলছেন সেলফি, কেউ ভিডিও, কেউ আবার ভিডিও কলে অন্যদের দেখাচ্ছেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পুড়ে যাওয়া হায়দার আলী ভবন। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর পুড়ে যাওয়া এ ভবন দেখতে দূর দূরান্ত থেকে আসছে মানুষ। অসুস্থ মাকে নিয়ে কাওলা থেকে এসেছেন নাসরিন বেগম। তিনি জানান, মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে তিনি এসেছেন এখানে। নাসরিন বেগম বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে মা বলছিলেন এখানে আসবেন। কিন্তু ভিড়ের কথা চিন্তা করে আনা হয়নি। আজ সময় পেয়ে নিয়ে আসলাম।
স্থানীয় কয়েকজন রিকশা চালক জানান, সপ্তাহ জুড়েই মানুষ আসছে মাইলস্টোন স্কুলটি দেখতে। বেশিরভাগ দর্শনার্থীই উত্তরার বাসিন্দা। তবে দূর থেকেও আসছেন অনেকে। মিজান নামের এক রিকশাচালক বলেন, আজ এখানে তিনবার আসলাম। এখন আসছি হাউস বিল্ডিং থেকে। যিনি আসছেন তিনি আমার পরিচিত, পোড়া ভবন দেখেই চলে আসবেন। এ জন্য বাইরে অপেক্ষা করছি। আজ মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেইন গেট বাদে বাকি দুটি গেট বন্ধ রয়েছে। স্কুলের ভেতরে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বসে থাকতে দেখা গেছে। পুড়ে যাওয়া হায়দার আলী ভবনের সামনে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী গেট। সেই গেটের তালা খোলা রয়েছে। দর্শনার্থীরা পুড়ে যাওয়া ভবনের কাছে গিয়ে ছবি, ভিডিও নিচ্ছিলেন। এদিন স্কুল কর্তৃপক্ষের কাউকে দেখা যায়নি। মেইন গেটে কথা হয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিরাপত্তাকর্মী সম্রাট হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্কুল গেট খোলা রাখা হয়েছে। এলাকাবাসী আবদার করেছে দুর্ঘটনার স্থান দেখবে। এ জন্য বাধ্য হয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ গেট খোলা রেখেছে। দুই বন্ধুকে নিয়ে আশুলিয়া থেকে এসেছেন আলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, বিমানটি যে শ্রেণিকক্ষে বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি আমরা টেলিভিশনে দেখেছি। অনেক শিশু মারা গেছে। ওই জায়গাটা আমরা নিজ চোখে দেখতে এসেছি।
রজনীর কবরে বিমান বাহিনীর শ্রদ্ধা: মাইলস্টোন স্কুলে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যাওয়া রজনী খাতুনের কবরে গতকাল শুক্রবার দুপুরে শ্রদ্ধা জানায় বিমান বাহিনীর সদস্যরা উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত অভিভাবক রজনী খাতুনের (৩৭) কবরে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। দুপুরে বিমান বাহিনীর একটি দল কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সাদিপুর গ্রামে রজনীর বাড়িতে যান। যশোর বিমান ঘাঁটির উইং কমান্ডার কামরুল হাসান বারীর নেতৃত্বে দলটির সদস্যরা রজনীর কবর জিয়ারত এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। পরে তারা রজনীর রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন। এ সময় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। রজনী সাদিপুরের জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদের মেয়ে। রজনী রাজধানীর উত্তরায় পরিবারসহ বসবাস করতেন। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ধ্বংসাবশেষের আঘাত পেয়ে মারা যান। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝুমঝুম দুর্ঘটনার সময় স্কুলের ক্যান্টিনে থাকায় প্রাণে বেঁচে যায়। রজনীর ছোট ছেলে এস এম রোহান ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে এবং সেদিন অসুস্থ থাকায় স্কুলে যায়নি।