ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রশিবির আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনী নিয়ে উত্তেজনা ছড়ালেও প্রদর্শনী চালু রয়েছে। কথিত বিচারের নামে হত্যা করা জামায়াত নেতাদের ছবি সরিয়ে সেখানে টানানো হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যুদ্ধাপরাধবিষয়ক পুরোনো উক্তি, স্কাইপ কেলেঙ্কারির তথ্য এবং কথিত ভুয়া সাক্ষীদের জবানবন্দি সংক্রান্ত প্ল্যাকার্ড। এদিকে প্রদর্শনীতে প্রথম দফায় এমন কয়েকটি ছবি ছিল, যেখানে স্বৈরাচার হাসিনার শাসনামলে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের ছবি স্থান পেয়েছিল। এসব ছবি সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং বিক্ষোভ করে।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় পূর্বঘোষিত সেমিনার জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পলায়নের এক বছর: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা অনুষ্ঠিত হয় টিএসসি মিলনায়তনে। সেমিনারে বক্তব্য দেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, পুসাব প্রতিনিধি সাদিক আল আরমান এবং ‘জুলাই ঐক্য’র সংগঠক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ। একই সময় টিএসসি প্রাঙ্গণে চলতে থাকে শিবিরের প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর কয়েকটি ছবি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় জামায়াত নেতাদের ছবি সরিয়ে নেওয়া হলেও প্রদর্শনীর মূল কাঠামো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এর আগে, গত মঙ্গলবার রাতে বামপন্থি সংগঠনগুলো প্রদর্শনী বন্ধের দাবি জানালে উভয় পক্ষের মধ্যে স্লোগান পাল্টাপাল্টির ঘটনা ঘটে। রাতেই এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি শাখা শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, “কোনো মবের চাপে প্রদর্শনী বন্ধ হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ জানান, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তবে এখনই প্রদর্শনী বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গত মঙ্গলবার রাতে ঢাবির টিএসসিতে এক জরুরি সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেছেন, শাহবাগ তথা বাম চেতনাধারীরাই মব জাস্টিসের প্রবর্তক। তারা ২০১৩ সালে শাহবাগকে প্রকাশ্যে রায় ঘোষণার মঞ্চ তৈরি করেছিল। তারা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল, যা আজকে আয়নাঘর, গুম ও বিচারহীনতা সংস্কৃতির বীজ বপন করেছিল।

ছবি সরিয়ে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ একটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, আমাদের আয়োজন নিয়ে কৃত্রিম কুতর্ক ও জনতা উত্তেজিত করে একটি মব পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে দেখি। কিন্তু একই সঙ্গে বাকশাল ও শাহবাগ আন্দোলনকে গণতন্ত্রবিরোধী মনে করি। তিনি আরও লেখেন, শাহবাগ ছিল এক ধরনের মবতন্ত্রের উদাহরণ, যেখানে বিচারিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে নাটকীয় ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচারিক হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। আমাদের ফ্রেমে থাকা ব্যক্তিরা সেই বিচার প্রক্রিয়ার শিকার। এস এম ফরহাদ দাবি করেন, বিচারিক রায়ের প্রতিটি ধাপে গুম, মিথ্যা সাক্ষ্য, আন্তর্জাতিক মান উপেক্ষা করে রায় প্রদান করা হয়েছে। এতে নিরপেক্ষ বিচার হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি। ছবি সরিয়ে নেওয়ার পর, নতুনভাবে যে ছবিগুলো টানানো হয়েছে, সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্য এবং মামলার বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষীদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে, গত মঙ্গলবার বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলও বিষয়টি নিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।