বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাথে বৈঠক করেছেন ঢাকায় সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে পাকিস্তান হাইকমিশনে প্রথমে এনসিপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর জামায়াতে ইসলামী এবং সন্ধ্যায় বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসহাক দার।

জামায়াতের সাথে বৈঠক: ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধান মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসহাক দার-এর সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ৫ সদস্য বিশিষ্ট এক প্রতিনিধি দল গতকাল শনিবার বিকেল পৌনে পাঁচটায় ঢাকাস্থ পাকিস্তান হাইকমিশনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকটি অত্যন্ত হৃদ্যতা ও আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় পাক উপপ্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনার মি. ইমরান হায়দার এবং হাইকমিশনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলে ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ও এড. এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এড. মতিউর রহমান আকন্দ।

বৈঠকে তারা বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং উভয় দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। সেই সাথে ভবিষ্যতে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন-অগ্রগতিতে দুই রাষ্ট্র কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, আজ রোবার বেলা ২টা ৩০ মিনিটে পাক উপপ্রধান মন্ত্রী ইসহাক দার আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে দেখতে তার বসুন্ধারাস্থ বাসায় যাবেন।

ঢাকা সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, আঞ্চলিক বাণিজ্য এবং কীভাবে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় এবং আঞ্চলিক জোট সার্ককে কীভাবে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গও এসেছে। তিনি বলেন, এখন বাংলাদেশ সরকার বা আমরা সবাই মনে করি যে এই অঞ্চলে সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক থাকা দরকার। সেটার ব্যাপারে দুই পক্ষই জোর দিয়েছি।

বৈঠক শেষে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, বিগত প্রায় ১৫ বছরের বৈরী সম্পর্ক কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া নিয়ে কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে জামায়াতের এই নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কিছুটা একপেশে ছিল। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন কখন কীভাবে হবে সেটা প্রাসঙ্গিকভাবে আসছে। এটা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশ্বে চলমান আগ্রাসনে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ঐক্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে থাকা নিয়ে ইসহাক দারের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হয়েছে।

বিএনপি সাথে বৈঠক: বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।

এদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে তাঁর বাসভবনে যাবেন বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের বাসভবনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তথ্য জানান দলটির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

এনসিপির সাথে বৈঠক: জামায়াতের আগে ইসহাক দারের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠক শেষে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বৈঠকে বাংলাদেশের জনগণের চিন্তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আগে যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল, সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ আছে। এ সময় একাত্তরের ইস্যু অবশ্যই ডিল করা উচিত।

বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ যেসব বিষয় উন্নয়ন করা যায়, সে বিষয়ে কথা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক হবে ভ্রাতৃত্বের, কোনো আধিপত্য থাকবে না।

এনসিপির এই সদস্যসচিব বলেন, ইসহাক দারের সঙ্গে এনসিপির ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। পাকিস্তান দূতাবাস থেকে আমাদের দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণের চিন্তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আগে যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ আছে। এ সময় একাত্তরের ইস্যু অবশ্যই ডিল করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।