আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে গণজমায়েত চলছে। মঞ্চ থেকে বলা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের ঘোষণা আসার আগ পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সমাবেশে ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ, একটা একটা লীগ ধর ধইরা ধইরা জেলে ভর, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ সহ নানা স্লোগানে স্লোগানে মূখর শাহবাগ চত্বর।

গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা থেকে রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত শুরু হয়। এতে গণজমায়েতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, ইনকিলাব মঞ্চ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামি ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আপ-বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, জুলাই ঐক্য, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, এবি পার্টি, লেবার পার্টির নেতারা, জুলাই মঞ্চসহ অসংখ্য ফ্যাসিবাদ বিরোধী সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন সংহতি জানিয়ে অংশ নিয়েছে।

গণজমায়েতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ আজ দুইভাগে বিভক্ত। একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, আরেকটি বাংলাদেশী শক্তি। যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না, তারা ফ্যাসিবাদী শক্তি। আর যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় তারা বাংলাদেশী শক্তি।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাকে যদি কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো শক্তি কণ্ঠরোধ করতে চায়, তবুও আপনারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না।

২০১৩ সালে শাহবাগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ শুরু হয়েছে, আর এই শাহবাগ থেকে ফ্যাসিবাদের পতন হবে। আমাদের মত, পথ আলাদা হতে পারে। তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে আমাদের মত, পথ এক। নমরুদের যেভাবে পতন হয়, ফেরাউনের যেভাবে পতন হয়, হাসিনারও পতন হয়। আমরা ফ্যাসিবাদের পতনধ্বনির শেষ পেরেক মারব।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি বলেন, শহীদের মায়েদের চেয়ে আমাদের কষ্ট বেশি না। খুনি হাসিনার বিচার হবে, শাপলার বিচার হবে, পিলখানার বিচার হবে, জুলাইয়ের বিচারও হবে। আমার কণ্ঠস্বর থামলেও এই লাখো জনতার কণ্ঠস্বর যেন না থামে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের ঐক্য বিনষ্টের জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে গত পরশু দিন রাত থেকে আমি রাস্তায় আছি। যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। আমি বলতে চাই, কোনো ষড়যন্ত্রে বা চাপে যদি আমার মুখ থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেওয়ানো হয়, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। পরবর্তী সময়ে আমি যদি কোনো ঘোষণা নাও দিই, মনে রাখবেন আপনাদের মঞ্জিলে মকসুদ হচ্ছে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আপনারা রাজপথ ছাড়বেন না।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এই দেশে আওয়ামী লীগের যে ঠাঁই নাই তা জনগণ জানিয়ে দিয়েছে। এদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোন অধিকার নাই। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগকে আবার দেশে ফেরানোর চেষ্টা করা হলে ছাত্র জনতা সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দিবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাবো না। ১৬টা বছর এরা দেশে গুম খুন লুটতরাজ করেছে। তিনি বলেন কাওয়া কাদেরদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না। তাদের ঠিকানা দিল্লীতে। তিনি ২৪ ঘন্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, ড. ইউনূস আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাব না।...আওয়ামী লীগ হলো ফেরাউনের বাহিনী। এই ফেরাউনের বাহিনী বাংলাদেশে থাকতে পারে না। কিছু রাজনৈতিক নেতার মনে আওয়ামী লীগের জন্য প্রেম জেগেছে। তারা...দাদা বাবুদের দেশে চলে যাক।’

আওয়ামী লীগকে খুনি, সন্ত্রাসী ও গণহত্যাকারী দল হিসেবে আখ্যায়িত করে হেফাজতে ইসলামের এই নেতা আরও বলেন, ‘এই দলকে নিষিদ্ধ করতেই হবে। অধ্যাপক ইউনূসকে বলতে চাই, ৯টি মাস অতিক্রান্ত হলেও আওয়ামী লীগের বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। যদি না হয়, বাংলাদেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।’

শাহবাগের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানি বলেন, আজ আবার শাহবাগে আসতে হতো না যদি জুলাই বিপ্লবের পর বিপ্লবী সরকার গঠন করা হতো। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে জুলাইয়ের স্পিরিট নাই জানিয়ে ফ্যাসিস্ট আমলে কারা নির্যাতিত এই আলেম বলেন, শাপলা চত্বর হত্যার বিচার হতে হবে।

পিলখানা হত্যার বিচার হতে হবে। জুলাই হত্যার বিচার হতে হবে। তিনিও স্লোগান তুলেন দিল্লী না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আওয়ামী লীগ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে। এদের নিষিদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি চলবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন ইরান।

গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির আরেক নেতা সারজিস আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের, শ্যামলী সুলতানা প্রমুখ।

সিলেটে গণজমায়েত

সিলেট ব্যুরো : গতকাল শনিবার বিকেল ৩টা থেকে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার গনজমায়েত কর্মসূচি শুরু হয়। রাত সাড়ে ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সমাবেশ চলছিল। সমাবেশে অংশ নেয় এনসিপি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির ও জুলাই ঐক্যসহ একাধিক সংগঠনের শত-শত নেতাকর্মীরা।

গণজমায়েতের কারণে জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কের একটি অংশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজট। আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

তাদের ভাষায়, 'আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। তারা আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে যে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা এখনও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জারি না করায় আন্দোলনকারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ সময় বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।