ষোল বছর আগে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন আগামী ৩০ নবেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। ওইদিন বিকেল ৫ টায় কমিশনের সদস্যরা যমুনায় গিয়ে সহ¯্রাধিক পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দেবেন। প্রতিবেদনটি হস্তান্তরের জন্য ইতোমধ্যে ৩০ নভেম্বর দিনটি নির্ধারণ করা হয়েছে। কমিশনের ১১ মাসের কষ্টার্জিত প্রতিবেদনে থাকছে বাহিনীর নাম পরিবর্তনসহ একগুচ্ছ সুপারিশ। কমিশন বিডিআর সদর দফতরে সংঘটিত ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদঘাটন করতে পেরেছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া, তদন্ত প্রতিবেদনে থাকছে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে কিভাবে বিডিআর হত্যাকা- ঘটেছে। এর সাথে থাকছে সাক্ষী আর ভুক্তভোগীর নিদারুণ বর্ণনা। এ প্রতিবেদন জমার মাধ্যমেই ঘটবে কমিশনের বিলুপ্তি।

মুঠোফোনে জানতে চাইলে কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব:) আ ল ম ফজলুর রহমান সোমবার রাতে দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, তাদের তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৩০ নভেম্বর জমা দেয়া হবে। তাদের ওপর রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব পালনে সফল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সেনা কর্মকতা দৃঢ় কন্ঠে বলেন, সফল না হয়েতো উপায় নেই, সফল হতেই হবে আমাদেরকে এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রতিবেদনে কি থাকছে, এর জবাবে সাবেক জেনারেল ফজলুর রহমান বলেন, অপেক্ষা করুন, প্রতিবেদন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানকে সভাপতি করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রাথমিকভাবে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হয়। পরে সেই সময় দুই দফায় আরও তিন মাস করে বাড়ানো হয়। সেই সময় শেষ হয়েছে ৩০ সেপ্টেম্বর। নতুন করে আরও দুই মাস সময় বাড়ানোর আদেশ গত ১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়। সে হিসেবে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

কমিশনকে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদঘাটন করতে বলা হয়। এছাড়া ঘটনাকালে সংঘটিত হত্যাকা- ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধব্বংসকারী, ইন্ধনদাতা এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয়সহ দেশী-বিদেশি সংশ্লিষ্ট অপরাধী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, সংগঠন ইত্যাদি চিহ্নিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তদন্ত কমিশনকে। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান, সাবেক যুগ্ম সচিব মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাবেক উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ খান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দেয়। কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

গত বছরের জুলাই আগষ্টের গনআন্দোলনের মুখে ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়। ওই ঘটনার তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন/কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।

কমিশনের কার্যপরিধি হিসেবে, পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদ্ঘাটন করা, হত্যাকা- ও অন্যান্য অপরাধে জড়িত, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, আলমত ধ্বংসকারী, ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করেছে কমিশন। এছাড়া অন্য সব বিষয়সহ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশী-বিদেশি ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, সংগঠনকেও কমিশন চিহ্নিত করার কাজটিও করা হয়েছে। বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকা-ের সময় ও হত্যাকা-ের আগে বা পরে হওয়া অন্যান্য অপরাধের স্বরূপ উদঘাটন, দায়ী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ, সংগঠন চিহ্নিত করেছে কমিশন। ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া বা ঘটনায় সহায়তাকারী অন্যান্য দেশী বিদেশী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ ও সংগঠনের সম্পৃক্ততা ও দোষীদেরও কমিশন চিহ্নিত, হত্যাকা-সহ অন্যান্য অপরাধ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ ও সংগঠনও শনাক্ত করেছে এই তদন্ত কমিশন।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, হত্যাকা-সহ অন্যান্য অপরাধে ইতোমধ্যে করা মামলা, ওই মামলায় অভিযুক্তদের দায় ও অপরাধ অক্ষুণœ রাখার পাশাপাশি যারা মামলা থেকে বাদ পড়েছে সেই সব আসল অপরাধীদের তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার কাজটিও কমিশন করেছে বলে জানা গেছে। কমিশনকে প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা বলা হয়। সে হিসেবে গত জুন মাসের ৩০ তারিখে কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কমিশনের আবেদনের ভিত্তিতে কমিশনের মেয়াদ আরও ৩ মাস বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়। পহেলা জুলাই থেকে এ মেয়াদ কার্যকর হয়। এরপর আবারও কমিশনের আবেদনের ভিত্তিতে আরও দুই মাস মেয়াদ বাড়িয়ে ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত করা হয়। সবমিলে কমিশন তাদের তদন্ত কাজ শেষ করতে ১১ মাস সময় পায়।

সূত্র জানায়, পিলখানায় হত্যাকা-ের ঘটনায় কমিশন যে সব ব্যক্তিদের সাক্ষ্য নিয়েছে, তাদের সাক্ষ্যে তৎকালীন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পদে পদে গাফিলতি ও ষড়যন্ত্রের কথা উঠে এসেছে। সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে কমিশন মনে করছে, এটি কোনো সাধারণ বিদ্রোহের ঘটনা নয়। এটি ছিল বিডিআর জওয়ানদের বিদ্রোহ সামনে রেখে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পরিকল্পনা। এর একটি কারণ হিসেবে সূত্র বলছে, হত্যাকা-ের ৭ দিন, ১০ দিন, ১৫ দিন বা এক মাস আগে পদায়ন হওয়া কর্মকর্তাদের মেরে ফেলতে হবে, সৈনিকদের সঙ্গে এত অল্প সময়ে তো কর্মকর্তাদের এমন বিরোধ থাকতে পারে না।

জানা গেছে, জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন হত্যাকা-ের ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগসূত্রসহ যেসব ষড়যন্ত্রের কথা এসেছে, সব কটি সামনে রেখে অগ্রসর হয়েই তদন্ত কাজ শেষ করেছে। তারা পিলখানায় নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র নিয়ে পাওয়া সাক্ষ্য ও বিভিন্ন তথ্য’র চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছে। দেশীয় ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার যোগসূত্র, সেনাবাহিনীর ভূমিকা এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা খতিয়ে দেখেছে।

সূত্র জানায়, হত্যাকা-ের সময় সেনাবাহিনী কেন পিলখানায় উদ্ধার অভিযানে গেল না বা যেতে পারল না, তাদের কোথায় গাফিলতি ছিল, এ বিষয়ে সাক্ষীদের অনেকে কথা বলেছেন কমিশনের সাথে। এই উদ্ধার অভিযান না করা নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে যারা কথা বলেছেন, প্রতিবাদ করেছেন, পরবর্তী সময়ে তাদের প্রায় সবাইকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে সাক্ষ্যে উঠে এসেছে। অপরদিকে যাদের বিরুদ্ধে এ ঘনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এসেছে, তারা পরে পুরস্কৃত হয়েছেন বলেও সাক্ষ্য দিয়েছেন কেউ কেউ।

সূত্র জানিয়েছে, এ ঘনায় এখন পর্যন্ত যারা অভিযুক্ত হয়েছেন, যাদের নাম এসেছে আদালতে তাদের অপরাধ বিচারাধীন। এ জন্য এ ঘনায় নতুন করে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করছে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন। সে ক্ষেত্রে সরকার চাইলে মামলা রিভাইভ (পুনঃপ্রচলন) করতে পারে। অথবা এমনও হতে পারে নতুন করে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও পৃথক মামলা হতে পারে। নতুনভাবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হতে পারে।

সূত্র জানিয়েছে, হত্যাকা-ের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আগে থেকে জানতেন। তৎকালীন বিডিআরের কর্মকর্তাদের কারও কারও কাছে এ বিষয়ে সংবাদ এসেছিল। তবে তারা বিষয়েিক হালকাভাবে নিয়েছিলেন। হত্যাকা- চলাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধানকে তার কাছে নিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন বলেও কমিশনকে বলেছেন সাক্ষীরা। ওই সময়ের সেনাপ্রধানের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াকে সেনা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে মনে করছে কমিশন।

হত্যাকা-ের ঘনায় এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুটি তদন্ত কমিশন হয়েছিল। ওই দুটি কমিশনের প্রতিবেদনও যাচাই-বাছাই করেছে স্বাধীন তদন্ত কমিশন। তবে ওই প্রতিবেদন তৈরির সময় আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকে ডাকা হয়েছিল, তাদের কমিশন স্বাধীনভাবে প্রশ্ন করতে পারেনি বলে জানতে পেরেছে কমিশন।

শেখ হাসিনার সাড়া পায়নি কমিশন : শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনকে সাক্ষ্য দিতে ডাকলেও জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের ডাকে সাড়া মেলেনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কমিশন পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে কমিশনের ধানমন্ডি কার্যালয়ে হাজির হয়ে বা অনলাইনে সাক্ষ্য দিতে বলেছিল। তদন্ত কমিশন দুজন পলাতক আওয়ামী নেতার জবানবন্দি নিয়েছে। এই দুই নেতা ইমেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই দুই নেতা হলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিরি সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক পা ও বস্ত্রমন্ত্রী মির্জা আজম।

চলতি বছরের ৮ মার্চ কমিশনের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘতি হত্যাকা-ের তদন্তপ্রক্রিয়ায় ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তারা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা দক্ষিণ সিি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক, জামালপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি মির্জা আজম, ঢাকা-৮ আসনের সাবেক এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ৪৪ রাইফেল ব্যাালিয়নের তৎকালীন অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ শামসুল আলম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফন্যো› জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন ইউ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ও পুলিশের সাবেক সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।

বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে ওই ১৫ জনের কথা শুনতে চায় কমিশন। এ জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে, যাতে কমিশনের বার্তা তাদের (সাক্ষ্য দিতে ডাকা ১৫ জন) কাছে পৌছায়। আর যে মাধ্যমে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে, আশা করি, সাক্ষীরা সেই মাধ্যম ব্যবহার করে সাড়া দেবেন।

সুত্র জানায়, এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৮ জন সংশ্লিষ্ট রাজনীতিবিদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ জনের সাক্ষাৎকার জেলে নেওয়া হয়েছে। ৩ জন উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২ জন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা ইমেইলে জবানবন্দি দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, সামরিক অফিসার যারা বিভিন্নভাবে পিলখানা ট্র্যাজেডির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তাদের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন একাধিক সাবেক সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী প্রধান, বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এছাড়া, ঘনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক, আমলা ও পূর্বতন তদন্ত কমিরি সদস্যরাও সাক্ষ্য দিয়েছেন। তৎকালীন আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার ও অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। বেসরকারি ব্যক্তিদের মধ্যে জবানবন্দি দিয়েছেন, বিভিন্ন ব্যবসায়ী, টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি যাদের কাছে ঘনা সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ছিল।

কারাগারে দ-প্রাপ্ত বিডিআর সদস্যের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। তারা ঘনার বর্ণনা দিয়েছেন এবং ঘনার সঙ্গে কারা জড়িত সে সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য দিয়েছেন যেগুলো কমিশন বিশ্লেষণ করেছে। কারামুক্ত বিডিআর সদস্যের সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানায়।