সরদার আবদুর রহমান: অবশেষে সাক্ষাৎ ঘটলো ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদীর। আর এই সাক্ষাতে দুই সরকারপ্রধানের পরস্পর করমর্দনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ আট মাসের মাথায় ভারত স্বীকার করে নিলো ড. ইউনূসের সরকারকে। এর ফলে এবার ব্যাক ফুটে চলে গেলেন বাংলাদেশের পদত্যাগী ও পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষেকরা।
ব্যাংককে বিমস্টেক সামিটে যোগ দিতে গিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। গতকাল শুক্রবার সামিটের সাইড লাইনে ঘটলো মোদী-ইউনূস বৈঠক। হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রথম ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। এই সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে একটি ছবি তুলে দেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালের ৩ জানুয়ারি মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ১০২তম ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসে অধ্যাপক ইউনূসকে স্বর্ণপদক প্রদান করছেন।
বিশ্লেষকদের অনেকেরই মতে, এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিসরে পরিত্যাগ করলো ভারত। ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের সরকার প্রধান মেনে নিয়ে তার হাতে হাত রেখে স্বীকৃতির বায়াত পড়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া এর মধ্য দিয়ে হাসিনার এখনো বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’ থাকার দাবি কার্যত ছুঁড়ে ফেলে দিলো ভারত। ফলে এখন শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান পুরোপুরি গুরুত্বহীন রাজনৈতিক ব্যাপার হয়ে গেলো। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা দিল্লির একটি সেফ হাউজে গৃহবন্দীর মতো জীবন যাপন করছেন। দুই সরকারপ্রধানের করমর্দনের পর দিল্লিতে বসে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার সুযোগ আর থাকার কথা নয়। আইনি বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী বাংলাদেশের আদালতে দন্ডিত হলে শেখ হাসিনাকে ঢাকার কাছে অর্পণের পথ সুগম হলো।
বিমসটেক সম্মেলনের এই সাক্ষাৎ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন তাও অনেকেই আঁচ করতে পারেন। এর আগে তিনি থাইল্যান্ডের সম্মেলনে যোগ দিবেন বলে যে টুইট করেছিলেন তাতে তিনি তিনি তার কর্মসূচির সংক্ষিপ্ত সার উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু সেখানে ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাতের কথা মুখে আনেননি। ফলে এনিয়ে শেষ পর্যন্ত ধোঁয়াশা ছিল। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সাক্ষাৎ ছিল বাংলাদেশ পক্ষের চেয়ে ভারতের পক্ষে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির পথ অনুসরণ করতে শুরু করেছে তাতে ভারতেরই পিছিয়ে যাবার আশংকা ছিল।
গতকালের সাক্ষাৎ ছিল নিছকই আনুষ্ঠানিকতা। এটি সাধারণত ১০/১৫ মিনিট স্থায়ী হওয়ার কথা। কিন্তু সেটি আধা ঘন্টা সময় নেয়। এতে বাংলাদেশ যথারীতি তার অগ্রবর্তী দাবিসমূহ তুলে ধরে। এর মধ্যে ছিল শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে প্রত্যার্পণ করা, সীমান্তে হত্যা বন্ধ করা, তিস্তার পানির অধিকার পূরণ করা, গঙ্গার পানি চুক্তি নবায়ন করা প্রভৃতি। এসব বিষয়ে ভারত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দ্রুতই সাড়া দেবে বলে বাংলাদেশ আশা করে।