সৎ, যোগ্য, দল নিরপেক্ষ ও প্রজ্ঞাবান লোকদের দিয়ে প্রশাসন পুনর্গঠন এবং সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা করা ছাড়া জনগণ দায়সারা গোছের তামাশার কোন নির্বাচন মেনে নেবে না বলে অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতের ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদীয় দলের দলনেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।

গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালিস্থ কলেরা হাসপাতালের সামনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও নবেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দাবিতে গণমিছিল পূর্ব বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, মুহিবুল্লাহ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মু. আতাউর রহমান সরকার ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন প্রমুখ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানের ২৪ এবং বাংলাদেশের ৫৪ মোট ৭৮ বছরে কোন সরকার দেশে কুরআনের বিধান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেনি। অথচ পাকিস্তানে স্বপ্লদ্রষ্টা কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হাতে কুরআন নিয়ে কুরআনকে পাকিস্তানের সংবিধান বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা কাজে পরিণত করেন নি। স্বাধীনতার পর যারাই ক্ষমতায় এসেছেন তারাও সংসদের কুরআনের আইন পাশ করেনি। কিন্তু ইতোমধ্যেই আল্লাহর আইনের পক্ষে দেশে জনমত সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকট অতীতে সেখানে দাড়ি, টুপি ও ইসলামী লেবাসধারীদের অপদস্ত করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ইসলামী আদর্শের ছাত্ররাই বিজয়ী হয়েছে। তিনি ছাত্রদের এ ঐতিহাসিক বিজয়কে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত টেনে নিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, বিগত প্রায় ১৬ বছরে ধরে পতিত ফ্যাসিবাদী দেশে অপশাসন-দুঃশাসন ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি বরং ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা ছেড়ে বিদেশে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু পতিতদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই বরং তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে অগ্নি সন্ত্রাস সহ নানাবিধ অপতৎরতা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে জনগণ সচেতন রয়েছে। তারা পতিতদের কোন ষড়যন্ত্রই দেশে বাস্তবায়িত হতে দেবে না। স্বৈরাচারি ও ফ্যাসিবাদীদের জুলুম-নির্যাতন ও ভীতিকর পরিবেশ কোন ভাবেই দৃশ্যপটে ফিরে আসতে দেওয়া হবেনা। তিনি পতিতদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সকলকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

অধ্যাপক মুজিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা। অতীতের আওয়ামী পদ্ধতির নির্বাচন জনগণ কোনভাবেই মেনে নেবে না। ২০১৪ সালের বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালের নৈশকালীন ভোট এবং ২০২৪ সালে আমি ও ডামী নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি জনগণ দেখতে চায় না। তাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সবার আগে প্রশাসনের দলবাজী বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনের আগেই জুলাই গণহত্যার বিচার, স্বাক্ষরিত জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তির জন্য নভেম্বরের মধ্যই গণভোট সহ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সকল নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন করতে হবে। প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। তিনি আগামী সংসদকে কুরআন সংসদে পরিণত করার জন্য দাড়িপাল্লার প্রতীকের গণজোয়ার সৃষ্টি করে সকলকে ময়দানে আপোষহীন ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আগামী নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রশাসন থেকে দলবাজদের তাড়িয়ে দিয়ে নিরপেক্ষ লোকদের দিয়ে জনপ্রশাসন পুনর্গঠন করতে হবে। জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দিতে নভেম্বরেই গণভোট এবং সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করতে হবে। সোজা কথায় কাজ না হলে আমরা আঙ্গুল বাঁকা করলে কেউ পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না। তিনি দেশ বিরোধী যেকোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সকলকে যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।