প্রতীক হিসেবে ‘শাপলা কলি’ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল রোববার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী এ কথা জানান।

বিকেল সোয়া ৩টার দিকে এনসিপির ওই প্রতিনিধিদল সিইসির নেতৃত্বে কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে। মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন যুগ্ম-আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম-সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে নাসীরুদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, জনতার কাছে এরমধ্যেই শাপলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আবার শাপলার সঙ্গে কলিও যোগ হচ্ছে। আমরা এটা পজিটিভলি নিয়েছি। নির্বাচন কমিশনকে বলেছি দ্রুতগতিতে এনসিপির নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন।

এনসিপির এ মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, আগামী নির্বাচনে ইনশাআল্লাহ ধানের শীষ (বিএনপির প্রতীক) এবং শাপলা কলির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বাংলাদেশে বাকশাল কায়েম করে ’৭২ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্র থেকে বের করা হয়েছিল, একটি দল এখন আবার একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দলের কাছে নিজেদের প্রতীক বিক্রি করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন যে উদ্যোগ নিয়েছিল সে উদ্যোগের বিপরীতি গিয়ে বিভিন্ন সমঝোতা-বোঝাপড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা ইসিকে বলেছি, কোনো দলের প্রতীক কোনো নমিশন বাণিজ্যের প্রতীক হতে পারে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা শাপলা কলি নেব।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন বলেন, আমরা বলছি শাপলার কথা। কিন্তু আমরা এখনো ব্যাখ্যা পাইনি নির্বাচন কমিশনের স্বেচ্ছাচারী আচরণের। কিন্তু এখন কী তাহলে আমরা প্রতীক নিয়ে পড়ে থাকবো? আমরা ইলেকশন ফেজে ঢুকবো না? তো সেই জায়গা থেকে আমরা বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে এই ডিসিশনটা নিয়েছি। কিন্তু ইলেকশন কমিশনের যে স্বেচ্ছাচারী আচরণ এটা পুরো বাংলাদেশের সামনে স্পষ্ট হয়েছে। আমরা ইনশাআল্লাহ শাপলা কলি নিচ্ছি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংগঠকদের একটি অংশের নেতৃত্বে গঠিত দলটিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন বেগুন, বেলুনসহ ৫০টি প্রতীক থেকে মার্কা বাছাইয়ের অপশন দেয়। কমিশনের যুক্তি ছিল, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় শাপলা প্রতীক না থাকায় তা দেওয়া সম্ভব নয়। ইসির এই অবস্থানের প্রেক্ষিতে এনসিপি ঘোষণা দিয়েছিল, শাপলা ছাড়া তারা নিবন্ধন নেবে না।

পরবর্তী সময়ে পরিচালনা বিধিমালা পুনরায় সংশোধন করে ইসি শাপলা কলি প্রতীকটি যুক্ত করে। তবে এনসিপি চেয়েছিল শাপলা, লাল শাপল বা সাদা শাপলা।

এদিকে গতকাল রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের কাছে একটি লিখিত চিঠি দিয়েছে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

সিইসিকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ইসি ও উপদেষ্টা পরিষদের সাম্প্রতিক বৈঠকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যে প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে তাদের নিজস্ব নাম ও প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, আইনের সংশোধনী সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশের ঠিক আগ মুহূর্তে সেই সিদ্ধান্ত এখন পুনর্বিবেচনার আওতায় আনা হয়েছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের একটি বিকৃতি দূর করার লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০০৮ সালে আরপিও-তে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ সংশোধনী আনা হয়, যাতে সংশোধিত ২০ অনুচ্ছেদের বিধানের সুযোগ নিয়ে বহু ছোট বা নামমাত্র দল বড় দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এতে ভোটাররা বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং কৃত্রিম জোট রাজনীতির মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

যখন কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য নিবন্ধিত দলের প্রতীকে নির্বাচন করে, তখন তারা এই দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যায়। এতে নিবন্ধন ব্যবস্থার আইনি গুরুত্ব থাকে না এবং নির্বাচনী স্বচ্ছতা বিপন্ন হয়। তদুপরি, বড় দলের প্রতীকে ছোট দলগুলোকে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়ার ফলে এক ধরনের কাঠামোগত বৈষম্য তৈরি হয়েছে, যেখানে বড় দলগুলো নিজেদের প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ছোট দলগুলোকে ব্যবহার করছে। এ ‘প্রক্সি রাজনীতি’ গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা, ন্যায্য প্রতিযোগিতা ও প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী।

জোট করলেও নিজের প্রতীকে ভোট করার বিধানকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি, প্রতিটি নিবন্ধিত দলকে তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে তা একটি ঐতিহাসিক ও নীতিগতভাবে সঠিক পদক্ষেপ। পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও'র সংশোধনীর মাধ্যমে উক্ত বিধান অনুমোদিত হয়েছে এবং শুধুমাত্র গেজেট প্রকাশ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে এখন সরকার বা নির্বাচন কমিশন যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনৈতিক চাপে পাস হওয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার মাধ্যমে সরকার তার অবস্থান পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়, সেক্ষেত্রে শুধু কমিশনের স্বাধীনতার ওপরই আঘাত নয়, বরং পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সরকারের কার্যক্রমের ওপরও আঘাত।

আমরা তাই অনুরোধ করছি:

১. কমিশনের গৃহীত এবং উপদেষ্টা পরিষদে পাস হওয়া আরপিও'র অনুচ্ছেদ ২০ এর সংশোধনী অনুযায়ী গেজেট প্রকাশ করা হোক, যাতে প্রতিটি নিবন্ধিত দল তাদের নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে বাধ্য থাকে।

২. নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত যেন বিএনপির অন্যায় চাপের প্রভাবে পরিবর্তিত না হয়, সে বিষয়ে লিখিত নিশ্চয়তা প্রদান করা হোক।

সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে আরপিও সংশোধনের বিধান অনুমোদন হওয়ায় বিএনপি এ নিয়ে আপত্তি জানায়। ছোট দলগুলোর জন্য এটা হবে অন্যায় সিদ্ধান্ত এবং তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হবে।

বিএনপির ওই দাবিকে বিরোধিতা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও এর আগে দলগুলোকে নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করার বাধ্যবাধকতার ওপর জোর দেয়।