আগামী ফেব্রুয়ারীতেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা, এ নির্বাচনে প্রবাসী ভোটারদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়া এবং নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জন্য গণভোটের দাবিসহ ১৮টি প্রস্তাবের অগ্রগতি নির্বাচন কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
গতকাল বুধবার জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
সিইসির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগের দেওয়া ১৮টি প্রস্তাবের সর্বশেষ অগ্রগতি ও কমিশনের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছে দলটি।
বৈঠক শেষে হামিদুর রহমান আযাদ জানান, জামায়াত ফেব্রুয়ারীতে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন সম্পন্ন করার পক্ষে মত দিয়েছে এবং সময়সূচির কোনো পরিবর্তন যাতে না ঘটে, সেই ব্যাপারে জানতে চেয়েছে। প্রবাসীদের মধ্যে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়া নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। যে অ্যাপসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে, তাতে জটিলতা ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সিইসির কাছে জানতে চাইলে তিনি আগামী ১৮ তারিখ থেকে অঞ্চলভিত্তিক রেজিস্ট্রেশন শুরু করার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অনেকে মনে করছেন এটি ভোটার হওয়ার রেজিস্ট্রেশন, আবার অনেকে ভাবছেন এটি ভোট দেওয়ার রেজিস্ট্রেশন। দুটো বিষয় এক নয়। ১৮ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া রেজিস্ট্রেশনটি– ভোট দেওয়ার জন্য। কমিশন এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচার চালাবে যাতে ভোটাররা সচেতন হন। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী প্রবাসী ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে।
হামিদুর রহমান আযাদ জানিয়েছেন, গণভোট নিয়ে তাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে। তাদের দাবি, জুলাই সনদের অধ্যাদেশ নয়, আদেশ জারি করতে হবে, যা দ্রুত করা সম্ভব। গণভোট এই আদেশকে শক্তিশালী করবে এবং জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এটি আইনি ভিত্তি পাবে। এছাড়া গণভোট নির্বাচনের আগে হতে হবে, কারণ জাতীয় নির্বাচনের সময় জনগণের মনোযোগ অন্যখানে থাকবে এবং তখন গণভোটে ভোট কম পড়লে বলা হবে মানুষ জুলাই সনদ চায় না। গণভোটের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
সংস্কার ও নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে আটটি দল একত্রিত হয়েছে এবং ধাপে ধাপে এগোচ্ছে বলে জানান হামিদুর রহমান আযাদ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এটিকে তিনি জোট না বলে যুগপৎ আন্দোলনের মতো বলে অভিহিত করেছেন। এখনো জোট গঠনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধু ইসলামি দল নয়, দেশপ্রেমিক বিভিন্ন দলের সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা হয় এমন যে কোনো কিছুর বিরুদ্ধে যেন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো কোনো দলের সঙ্গেই সুনির্দিষ্ট আলোচনা শুরু হয়নি। তবে নির্বাচনের বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলে এরপর আসন নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। তিনি জাপাকে 'ফ্যাসিস্টের দোসর' এবং এক্ষেত্রে ‘নাম্বার ওয়ান’ উল্লেখ করে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।