বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও বিদ্যমান আইনের সীমাবদ্ধতা ও দুর্বল বাস্তবায়ন এ লক্ষ্য অর্জনের পথে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। আইন সংশোধন ও আইনের কঠোর বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকরা। সেইসাথে বর্তমানে মেয়র, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, মেম্বার ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ও দূতাবাসের পরিবর্তে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোকে দেওয়ার সুপারিশ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন: অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়” শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকরা। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই কর্মশালা আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ৩০জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের হার ৫০ শতাংশ এবং মৃত্যু নিবন্ধনের হার ৪৭ শতাংশ, যেখানে বৈশ্বিক গড় যথাক্রমে ৭৭ ও ৭৪ শতাংশ। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ভোটাধিকার, উত্তরাধিকার এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে। অপরদিকে, নিবন্ধন না থাকলে শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ ও পরিচয়হীন নাগরিকত্বের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। নিবন্ধন শুধু পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি দেশের ন্যায্য উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সুশাসনের মূল ভিত্তি।
কর্মশালায় আরো জানানো হয়, বর্তমান আইনে জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য প্রদানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পরিবারকে দেয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিভাগের ভূমিকাকে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে। অথচ দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জন্মগ্রহণ করে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বহু দেশ নিবন্ধনের দায়িত্ব হাসপাতালের ওপর ন্যস্ত করায় তারা প্রায় শতভাগ নিবন্ধন নিশ্চিত করতে পেরেছে। বাংলাদেশেরও উচিত হবে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ সংশোধন করে সকল হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিবন্ধনের আইনগত দায়িত্ব অর্পণ করা। যা সিআরভিএস দশকের শতভাগ নিবন্ধন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ১৬.৯ অর্জনকে ত্বরান্বিত করবে।
কর্মশালায় জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। এলক্ষ্যে আইন সংস্কারের পাশাপাশি বিদ্যমান আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. নজরুল ইসলাম বলেন, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রক্রিয়া সর্ম্পকে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। নিবন্ধকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং আন্ত-খাত সমন্বয় শক্তিশালী করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে বাস্তবে মানুষের অস্তিত্ব আছে কিন্তু কেতাবে নাই। কারণ তাদের জন্ম নিবন্ধন নাই। আবার মানুষ মারা গেলে তাও নিবন্ধন করা হয় না। আর এসব করা হয় না নানা অনিয়ম এবং জটিলতার কারণে। এসব জটিলতা দূর করতে আইন সংস্কারের মাধ্যমে জনবান্ধব করার পরামর্শ আসে কর্মশালা থেকে।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. মঈন উদ্দিন, জনকণ্ঠের চীফ রিপোর্টার কাওসার রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার এবং কোঅর্ডিনেটর মাশিয়াত আবেদিন।