বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জামায়াত নেতা মাওলানা নিজামী, কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলী ও সালাহউদ্দিন কাদেরদের মিথ্যা মামলায় মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা একটি সুবিচারপূর্ণ ও ন্যায়ের শাসনের দেশ চাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে আওয়ামী বিরোধী সাংবাদিক, সম্পাদক, প্রকাশক ও কর্মীরা অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তবুও তারা ধৈর্য, সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সাথে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা চালিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী শক্তিগুলোর ওপর ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়নের কথা জাতি ভুলে যায়নি। ৬০ লাখ কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা, ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী হত্যাকা- ও গুমের শিকার হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নয়াদিগন্তের মালিক মীর কাসেম আলী, জামায়াত নেতা কামরুজ্জমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদেরসহ অনেক আলেম-ওলামাকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে মিথ্যা মামলায়। এসব এই জাতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়।
তিনি আরো বলেন, এই দেশবাসী একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায়-এমন বাংলাদেশ, যা কোনো বিদেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণে নয়, জনগণের ইচ্ছায় পরিচালিত। নয়া দিগন্ত সে লক্ষ্যে গণমানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের বাকশাল শাসনের সময় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের দুঃসময়। তখন সাংবাদিকরা বেকার হয়েছিলেন, অনেকে রাস্তায় হকারি করেছেন। পরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। সংস্কার সনদে স্বাক্ষরিত দলগুলোর ঐক্যের মাধ্যমে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারে সবাইকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। বক্তব্যের শেষে মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নয়া দিগন্ত পরিবারকে শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা একটি সুবিচারপূর্ণ, ন্যায়ের শাসনের দেশ চাই। নয়া দিগন্তের প্রতিষ্ঠাতারা এমনি একটি সমাজ গঠনের জন্য শুরু থেকে কাজ করছেন। আগামীতেও তারা একটি জুলুম-শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে কাজ করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। পত্রিকাটি আগামীতে আরো সাহসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দৈনিক নয়া দিগন্ত একটা স্বপ্ন নিয়ে গঠিত হয়েছিল। যার লক্ষ্য ছিল প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে দেয়া। এসময় তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তের উদ্যোক্তাদের অন্যতম শহীদ মীর কাসেম আলীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, নতুন দিগন্ত গড়ার যে উদ্দেশে নয়া দিগন্ত কাজ করছিল ফ্যাসিস্ট শাসক তা বুঝতে পেরে এর উদ্যোক্তাদের মধ্যে মীর কাসেম আলীকে বিনা অপরাধে নিষ্ঠুরভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল। বিগত ১৭ বছরের অনেক ঝড়-ঝাপটা সহ্য করেও নয়া দিগন্ত সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এজন্য তিনি পত্রিকা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। অন্যায়, ভুল, অসভ্যতার বিরুদ্ধে নয়া দিগন্ত তার অস্তিত্বকে জানান দিয়ে বলেছে যে আমাদের প্রতিষ্ঠাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমরা সংগ্রামের পথে অটুট থাকব এবং অনড় থাকব। এজন্য নয়া দিগন্তকে আর একটু সাহসী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, আজকের এ স্মরণীয় মুহূর্তে নয়া দিগন্তের স্থপতিদের অন্যতম শহীদ মীর কাশেম আলী, মরহুম কমোডর আতাউর রহমান, সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান তাদের সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। স্থপতিদের মধ্যে অন্যতম আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহের, ইসকান্দার আলি খান, শামসুল হুদাসহ সবার অবদান স্মরণ করছি। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি মরহুম সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনকে। তিনি বলেন, নয়া দিগন্ত পরিবার বিগত ১৬ বছর চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। দুঃস্বপ্নের সেসব দিনগুলোতে শত বাধাবিপত্তি উপক্ষো করে যেসব ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আমাদের পাশে ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি গত বছরের আগস্ট বিপ্লবের বীল সেনানীদের প্রতি। সে বিপ্লবের ছ¦টায় গোটা জাতির সাথে আমাদের প্রতিষ্ঠানও আলোকিত হয়েছে। তিনি বলেন, ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক পরিবর্তনকে মজবুতি দিতে নয়া দিগন্ত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একইসাথে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে।
স্বাগত বক্তব্যে সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের প্রতি যে সহানুভতি দেখিয়েছে তাতে আমাদের মাঝে আশা তৈরি হয়েছে যে, ইনশাআল্লাহ নয়া দিগন্ত স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন সরকার আসলে তাদের গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে নয়া দিগন্ত তাদের পাশে থাকবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তার স্বাগত বক্তৃতার পর ‘নয়া দিগন্তের যাত্রাপথ’ শিরোনামে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী শেষে অতিথিরা কেক কেটে বর্ষপূর্তি উদযাপন করেন।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম মোজাহেরুল হক, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান শিব্বির মাহমুদ, বোর্ড সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইস্কান্দার আলী, মুহাম্মদ ইউনুছ, খন্দকার জাকির হোসেন, খন্দকার এনায়েত হোসেন, নয়া দিগন্ত প্রকাশক শামসুল হুদা, সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, সংগ্রাম সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, নয়া দিগন্ত নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, সিটি এডিটর আশরাফুল ইসলাম, চিফ রিপোর্টার আবু সালেহ আকনসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা। পরে অতিথিরা একে একে তাদের অনুভুতি ব্যক্ত করেন।
দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান শিব্বির মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের বোর্ড সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইস্কান্দার আলী, নয়া দিগন্ত প্রকাশক শামসুল হুদা, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক রেজাউদ্দিন স্টালিন, এনবিআর এর সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম প্রমুখ।
এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, সুপ্রীম কোর্টের সাবেক রেজিস্টার ইকতিদার হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার-মিডিয়া সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের অফিস সেক্রেটারি কামরুল আহসান হাসান, মহানগরীর সহকারী প্রচার সম্পাদক আবদুস সাত্তার সুমন, সহকারী মিডিয়া সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুজ্জামান হীরা, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো: মুজিবুর রহমান হাওলাদার, বাংলদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকেল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো: আকরাম হোসেন, বিএমইউ’র দন্ত অনুষদের ডিন ডা. মো: সাখাওয়াৎ হোসেন সায়ন্থ। কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনের পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবীর, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির পক্ষে শুভেচ্ছা জানান চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি শাহীন সুমন ও কোষাধ্যক্ষ মোঃ তারিকুল ইসলাম ভুঁইয়া (সায়মন তারিক), বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশেনের মহাসচিব মো: মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে শুভেচ্ছা জানান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ হামিদুর রহমান, দফতর সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, ত্রান ও পুনর্বাসন সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, সিলেট জেলা সভাপতি বদরুল আলম প্রমুখ।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফম খালিদ হাসেন বলেন, উপদেষ্টা হওয়ার আগে আমি দীর্ঘদিন নয়া দিগন্তে কলাম লিখেছি। সে হিসেবে আমি নয়া দিগন্ত পরিবারের একজন সদস্য। নয়া দিগন্ত সব সময় সত্য তুলে ধরে। আমি উপদেষ্টা হওয়ার আমার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম তুলে ধরেও তারা আমাদের সরকার সহযোগিতা করছে। তিনি সম্প্রতি ফেসবুকের বিভিন্ন লেখালেখির প্রসঙ্গে বলেন, আমি একজন মুসলমান হিসেবে বায়তুল মোকাররমে যাই ইবাদত করতে। কিন্তু ঢাকেশ্বরী মন্দিরে যাই রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে। যেকেউ ধর্মমন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকলে তাকে সব ধর্মের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হয়। সব ধর্মের মানুষের সাথে যাতে সম্পর্ক সুদৃঢ় থাকে সেজন্য কাজ করতে হয়। দেশে একটি গোষ্ঠি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। তারা যাতে সেটি না করতে পারে সেজন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমি যখন উপদেষ্টা থাকবো না তখন আর মন্দিরে, প্যাগোডায় যেতে হবে না। তখন আমি শুধু মসজিদে যাব। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে যদি কোন বিশিষ্ট আলেমকেও বসিয়ে দেয়া হয় তাকে রাষ্ট্রের কারণে মদের লাইসেন্স দিতে হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নয়া দিগন্ত প্রতিষ্ঠা থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ফ্যাসিবাদের সময়েও তারা সাহসিকতার সাথে কলম ধরেছে, টিমটিম করে হলেও গণতন্ত্রের আলো জ্বালিয়ে রেখেছিল। অনেক পত্রিকা হারিয়ে গেলেও নয়া দিগন্ত টিকে থেকেছে- এটাই তাদের কৃতিত্ব।
ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, নয়া দিগন্ত গত ১৬/১৭ বছর কঠিন সময় পার করেছে। তারপরও তারা সত্যের পথে অব্চিল থেকেছে। তারা দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করেছে। আগামীতে তারাও সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নয়া দিগন্ত যে দুঃসময়ে টিকে আছে, সেটা জাতির জন্য অনুপ্রেরণার বিষয়। আগামী দিনেও যদি ফ্যাসিবাদ বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়, আমি মনে করি তখনও আমাদের আশ্রয়স্থল ও ভরসার জায়গা থাকবে নয়া দিগন্ত।
জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আমি প্রতিদিন নয়াদিগন্ত পড়ি। নয়াদিগন্ত সব সময় আধিপাত্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লিখেছে। এজন্য তাদের নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তারপরও তারা কখনো পিছপা হয়নি। তিনি আগামীতে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে নয়া দিগন্ত ভুমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, দৈনিক নয়া দিগন্ত ফ্যাসিবাদী সময়ের সবচেয়ে বড় সংগ্রামের নাম। ফ্যাসিবাদী আমলে পত্রিকার সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হয়। তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন, পারেননি। শেখ হাসিনা সেটা পেরেছিলেন। ইউনিক ফর্মুলায় বাকশাল কায়েম করেছিল হাসিনা। তিনি উল্লেখ করে, (ফ্যাসিবাদী আমলে) সব গণমাধ্যম এক সুরে কথা বলতো। তখন নয়া দিগন্ত দাঁড়িয়ে ছিল, সেসময় দাঁড়িয়ে থাকাই ছিল সবচেয়ে বড় জিহাদ। শেখ হাসিনার পুরো শাসনের ঘটনাবলি লিখে রাখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টে প্রত্যেকটি শহীদের ঘটনা এক গৌরব উজ্জ্বল বীরত্বগাথা। জুলাই-আগস্টে প্রত্যেকটি শহীদের ঘটনা, শহীদের পরিবারের সাথে কথা বলে, পরিবারের সাথে কথা বলে এক গৌরব উজ্জ্বল বীরত্বগাথা দেখতে পাবেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো: শাহিনুল আলম বলেন, নয়া দিগন্ত স্বৈরাচারের দিনগুলোতে সাহসের সাথে লড়াই করেছে, অসত্যের সাথে আপস করেনি। এই দৈনিকটির এ ধরনের অবস্থানের কারণে নির্যাতিত হয়েছে, নানা হুমকী-ধমকী এসেছে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে। তবু নয়া দিগন্ত মাথা নোয়ায়নি, লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহস ও কৌশল অবলম্বন করে টিকে রয়েছে।
ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদকে যাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আজ আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি। একই সাথে স্মরণ করছি নয়া দিগন্তের সাবেক সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনকে এবং দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের স্বপ্নদ্রষ্টা, ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি, শহীদ মীর কাসেম আলী ভাইকে। তিনি বলেন, শহীদ মীর কাসেম আলী ছিলেন আমাদের প্রেরণার বাতিঘর। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে জাতির জন্য কাজ করতে হয়, কিভাবে আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়, এবং কিভাবে কথার সাথে কাজের সামঞ্জস্য রাখতে হয়। তার জীবন থেকে আমরা শিখি বাংলাদেশে আজকের প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশে তিনিই ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। সাদিক কায়েম আরো বলেন, গত ফ্যাসিবাদী সময়ে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলো কীভাবে বিভক্ত ছিল। খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের প্রশ্রয়ে কিছু হলুদ সাংবাদিকতা সংবাদমাধ্যমের পরিচয়কে কলঙ্কিত করেছে। ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে বিচারিক হত্যাকা-কে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। গুম, খুন, আয়নাগরসহ নানান হত্যাকা- এবং অবৈধ নির্বাচনকে বৈধ করার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। সেই সময়ে প্রতিবাদী অবস্থানে থাকা পত্রিকাগুলোর মধ্যে নয়া দিগন্ত ছিল সাহসী কণ্ঠস্বর। নানা বাধা, অবরোধ ও বৈষম্যের মধ্যেও তারা টিকে থেকেছে পাঠকদের ভালোবাসা ও আস্থার কারণে। গত ১৬ বছরে সরকার থেকে কোনো অনুদান বা বিজ্ঞাপন না নিয়েও নয়া দিগন্ত পাঠকদের সমর্থনে তাদের পথচলা অব্যাহত রেখেছে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।