চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা করেছে পুলিশ। এ তালিকায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, কাঁচাবাজার, ফুটপাত, নৌপথ, সড়ক ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িতরা রয়েছেন। সারাদেশ থেকে পাওয়া তালিকায় রয়েছে দুই হাজার ৩১ জন। পুলিশ সদর দফতর সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সদর দফতর সুত্র জানায়, গত বছরের জুলাই আগষ্টের তীব্র গনআন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনা বেড়ে যায়। দেশে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দেয়। আইন-শৃংখলাবাহিনীর প্রতি সাধারন মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ এবং থানার অপারেশনাল কার্যক্রমে ধীর গতির সুযোগে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ অপরাধমূলক কাজ শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দফতর থেকে বিশেষ শাখার (এসবি) অ্যাডিশনাল আইজির কাছে ১৬ অক্টোবর একটি জরুরী পত্র পাঠিয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। এই চিঠি পাওয়ার পর পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে বিদ্যমান ৭২ টি ইউনিটের কাছে তালিকা চেয়ে গোপনীয় পত্র পাঠানো হয়। ওই ইউনিটগুলোকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়। এর মধ্যে ২৯ টি ইউনিট বাদে ৪৩ টি ইউনিট চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের তালিকা করে বিশেষ শাখায় পাঠায়। বিশেষ শাখা থেকে ওই বছরের ৬ নবেম্বর ৪৫৭ পৃষ্ঠার গোপনীয় প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠানো হয়। প্রতিবেদনে সারা দেশের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সবিস্তার তুলে ধরা হয়। তাতে ২০৩১ চাদাঁবাজ-সন্ত্রাসীদের নাম উঠে আসে বলে সুত্রটি জানায়।

সুত্র মতে, পুলিশের ৪৩ টি ইউনিট থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ঢাকা বিভাগের চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীর সংখ্যা ৮০৫ জন। তাদের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) খাতায় রয়েছে ২৮১ জন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) তালিকায় ৫১ জন, ঢাকা জেলায় ৬১ জন, নারায়নগঞ্জে ১০ জন, মুন্সিগঞ্জে ২১ জন, নরসিংদীতে৩৯ জন, মানিকগঞ্জে ১০২ জন, গাজীপুর জেলায় ৯ জন, কিশোরগঞ্জে ১০৪ জন, টাঙ্গাইলে ৭ জন, রাজবাড়িতে ৩০ জন, গোপালগঞ্জে ৪৬ জন, মাদারীপুরে ২২ জন ও শরীয়তপুরে ২২ জন। ফরিদপুর জেলা পুলিশের খাতায় শূণ্য চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী।

সিলেট বিভাগে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তালিকায় আছে ৮৪ জন। তাদের মধ্যে সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় ২৮ জন, সিলেট জেলায় ১৯ জন, মৌলভীবাজারে ১৩ জন, সুনামগঞ্জে ২৪ জন। হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের খাতায় কোন চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী নেই।

ময়মনসিংহ বিভাগে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তালিকায় আছে ১৬৭ জন। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহে ৬৬ জন, নেত্রকোনায় ৯৩ জন ও শেরপুরে ৮ জন। জামালপুরে কোন সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ নেই।

চট্টগ্রাম বিভাগে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তালিকায় আছে ৩৪৪ জন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ৭৩ জন, চট্টগ্রাম জেলায় ৮ জন, বান্দরবানে ৩৩ জন, নোয়াখালীতে ৫০ জন, চাঁদপুরে ৯ জন, কুমিল্লায় ৪৩ জন, বি-বাড়িয়ায় ১২৮ জন, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী ও লক্ষীপুরের পুলিশের খাতায় কোন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ নেই।

রংপুর বিভাগে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তালিকায় আছে ১৯৬ জন। তারমধ্যে রংপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় ১০ জন, পঞ্চগড়ে ৬১ জন, লালমনিরহাটে ৩০ জন, দিনাজপুরে ৯৫ জন। রংপুর, ঠাকুরগাও, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়গ্রাম জেলা পুলিশের খাতায় কোন চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী নেই।

বরিশাল বিভাগে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তালিকায় আছে ৩৭ জন। তারমধ্যে সবাই বরিশাল জেলা পুলিশের খাতায়। বরিশাল মেট্রোপলিটন, পটুয়াখালি, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলা পুলিশের খাতায় কোন চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী নেই।

খুলনা বিভাগে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তালিকায় আছে ৩৪৭ জন। তারমধ্যে খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫৩ জন, নড়াইলে ৪৩ জন, বাগেরহাটে ১০২ জন, যশোরে ১০০ জন, মাগুড়ায় ৪৯ জন। খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশের খাতায় কোন চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী নেই।

রাজশাহী বিভাগে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তালিকায় আছে ২৫১ জন। তাদের মধ্যে রাজশাহী জেলায ১৪ জন, জয়পুরহাটে ৭৯ জন, বগুড়ায় ৯১ জন, সিরাজগঞ্জে ৬৫ জন, নওগাঁয় ২ জন। রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকা, নাটোর, পাবনা ও চাপাইনবাবগঞ্জের পুলিশের খাতায় নেই কোন চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী।

চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল রোববার সন্ধ্যায় দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, সারাদেশে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের তালিকাসহ অপরাপর অপরাধীদের তালিকা আপডেট হতে থাকে। কখনও এই তালিকায় সংখ্যা বাড়ে, কখনও কমে। এই তারতম্যের যুক্তি তুলে ধরে ওই কর্মকর্তা বলেন, অভিযানে ধরা পড়ার পর তালিকায় সংখ্যা কমে যায়। অপরাধের হারও কমে তখন। আবার বাড়লে পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবেই অভিযান চালায়, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করে। তিনি উল্বেলখ করেন, স্ব স্ব জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ওসিগন তাদের অধিক্ষেত্রের আইনশৃংখলা রক্ষায় যে কোন সময় যে কোন ধরনের আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন।