আজ ২৪ জুলাই বৃহস্পতিবার। ২০২৪ সালের এই দিনটি ছিল বুধবার। কারফিউর পাশাপাশি আন্দোলন নিয়ে সরকার নতুন কুটকৌশলে মাতে। কারফিউর কারণে জনজীবন অচল হয়ে যায়। অন্যদিকে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব কিছু অচল হয়ে পড়ে। চারদিক থেকে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা জানানো হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো থেকে নিন্দা জানানো হয়। বলা হয় ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার। এটা বন্ধ রাখা যাবে না। এই ঘটনার কারণে সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিল। বিশেষ করে ক্রমেই বন্ধুহীন রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছিল। চাপ সামাল দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে ঐ দিন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে বুধবার ২৪ জুলাই কারফিউ বহাল থাকবে। তবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে বলে জানান স্বৈরাচার হাসিনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বলা হয় বাকি জেলাগুলোতে সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, আগের শুক্রবার অর্থাৎ ১৯ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা থেকে রোববার (২১ জুলাই) সকাল ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ বাড়ানো হয়। যদিও প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়।

এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি ও কারফিউ জারির কারণে রোববার থেকে মঙ্গলবার সরকারি বেসরকারি অফিসে ছিল সাধারণ ছুটি। এর আগের দু’দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। সে হিসাবে টানা পাঁচ দিন পর বুধবার আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয় সরকারি অফিস। সপ্তাহের শেষ দু’দিনের জন্য এ অফিসসূচি নির্ধারণ করে সরকার। আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, সরকার বুধ ও বৃহস্পতিবার সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে। বুধবার এবং বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলবে অফিস। তবে অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হলেও সারাদেশে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকার থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি সেদিন।

২৪ জুলাই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আরও চারজনের মৃত্যু। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজ থাকার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান দু’জন।

২৪ জুলাই বুধবার আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে গেছে। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন- গত শুক্রবার ১৯ জুলাই রাত ১১টায় আমাকে হাতিরঝিলের মহানগর আবাসিক এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দেয়ার জন্য চাপ দেয়া হয়। না মানায় ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। এই চার/পাঁচদিনে যতবার জ্ঞান ফিরেছে ততবার ইনজেকশন দিয়ে সেন্সলেস করে রাখা হয়। বুধবার সকাল ১১টায় আবার একই জায়গায় চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে যায়। এখন আমি পরিবারের সাথে হাসপাতালে চিকিৎসারত আছি। এই কয়দিনে যা ঘটেছে তা জানার চেষ্টা করছি। কিছতা সুস্থ হলেই সমন্বয়কদের সাথে কথা বলে আন্দোলনের বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলবো। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের খোঁজ মিলেছে বলে নিশ্চিত করেন সংগঠনটির অপর সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন, বুধবার দুপুর ১২টার দিকে আসিফের সঙ্গে তাদের কথা হয়। তবে, গত চারদিন ধরে তার সঙ্গে অন্যদের কোনো যোগাযোগ ছিল না।

এবিষয়ে সোমবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ ও মাহিন সরকার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন তাদের চারজন সমন্বয়ক নিখোঁজ আছেন। যে চারজন সমন্বয়কের নিখোঁজের কথা বলা হয়েছিল তারা হলেন আসিফ মাহমুদ, আব্দুল কাদের, রশিদুল ইসলাম রিফাত ও আবু বাকের মজুমদার। সারজিস আলম বলেন, আসিফ তাদের জানিয়েছেন তাকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ‘ছাড়া পাওয়ার পর’ শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আগের দিন মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্র নেতারা। এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই ডিআরইউর সামনের সড়কে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান করছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে চার দফা আবার তুলে ধরেন সমন্বয়কেরা। প্রথম দুটি দাবি হচ্ছে ইন্টারনেট সচল করা ও কারফিউ প্রত্যাহার করা। তৃতীয় দাবিটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরিয়ে নিয়ে সরকার ও প্রশাসনের সমন্বয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ফিরে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা। চতুর্থ দাবি হচ্ছে আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এসব দাবি মানতে রোববার রাতে সমন্বয়কেরা সরকারকে দুই দিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। এর আগে গত শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সরকারের তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তারা আট দফা দাবি জানিয়েছিলেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের একটি প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের সংবাদ সম্মেলনে অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে আট দফা দাবি জানিয়ে এসেছিলাম। এরপর দুই দিন আগে জরুরি চারটি দাবি জানিয়ে এসেছি। এই চারটি দাবি পূরণ না করলে বাকি আটটি দাবি নিয়ে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা দুই দিনের আলটিমেটাম দিলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো সাড়া পাইনি। আমরা আবার দুই দিনের একটি আলটিমেটাম দিচ্ছি ওই চারটি জরুরি দাবি মানার জন্য। আমরা চাই, বৃহস্পতিবারের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হোক, যাতে শুক্রবার সব ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ফিরে যেতে পারেন। আমরা কবে আন্দোলনের শেষ ঘোষণা করব, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে সরকারের ওপর। সারজিস আলম বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সরকারের যে মনোভাব এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী যে ধরনের সংবেদনশীল বক্তব্য দিচ্ছেন, এগুলো আগে বললে এটা কখনোই এ পর্যন্ত আসার কথা ছিল না। অসংখ্য পরিবারের যে ক্ষতিগুলো হয়ে গেল, সেগুলো আসলে কখনো পূরণ করা সম্ভব নয়। প্রতি মুহূর্তে গ্রেপ্তার, তুলে নেওয়া ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের ভয়ে আছেন বলেও জানান সারজিস আলম।

তা-ব ও অগ্নিসংযোগে জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার দায় সরকার এড়াতে পারে না বলে মনে করেন আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই গ্রন্থাগারের সামনেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে চান তারা। তবে এর জন্য সরকারকে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

আট দফায় যা ছিলো

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আট দফা দাবির মধ্যে ছিল, নিহতদের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে গ্রেপ্তার ও বিচার। শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা, মাসিক ভাতা ও তাদের পিতা-মাতার মতামতের ভিত্তিতে একজন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা এবং ছাত্র সংসদ চালু করা, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষার্থীকে সব ধরনের রাজনৈতিক, আইনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে একাডেমিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।

নাহিদ বলেন, পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন ধরনের নাশকতা করে, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করে। প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসব সহিংস ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারের দায়িত্বহীন আচরণ ও দমনপীড়ন নীতির জন্য অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সরকার প্রজ্ঞাপন (কোটা সংস্কারের বিষয়ে) দিয়েছে। কিন্তু আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও কোটা যাঁরা পান, তারা কোটাব্যবস্থার একেকজন অংশীজন। সেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা-সংলাপ ছাড়া এ ধরনের প্রজ্ঞাপন সমীচীন নয়। আমরা চেয়েছিলাম সংলাপের মাধ্যমে সব পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে একটি প্রজ্ঞাপন হবে, যাতে নতুন করে আর কখনো সমস্যা তৈরি না হয়। সংলাপের যথাযথ পরিবেশ তৈরি করে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে কোটা সংস্কারের চূড়ান্ত সমাধান আমরা চাই। আমরা সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য কোটাব্যবস্থার কথা বলেছিলাম, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটার কথা বলেছিলাম। এই বিষয়গুলো প্রজ্ঞাপনে প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর বিষয়টির আরও ক্লারিফিকেশন (ব্যাখ্যা) দরকার এবং অংশীজনদের সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সংলাপ প্রয়োজন।’

এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, সরকার এই প্রজ্ঞাপন দিতে যত রক্ত মাড়িয়েছে, যত লাশ পড়েছে, তা অনাকাক্সিক্ষত। এর জবাব চান তারা। চার দফা দাবি মেনে নেওয়ার পর আট দফা নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপের দ্বার উন্মোচিত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি। অনেক বাবা এখনো সন্তানের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এত রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা কোটা সংস্কার চাইনি। আমরা সব হতাহতের বিচার চাই। আমাদের চূড়ান্ত দাবি ক্যাম্পাসগুলোতে গিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতির সামনে পেশ করতে চাই। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমরা এই পরিস্থিতির অবসান চাই। হতাহতের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদকে ১৮ জুলাই থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এর মধ্যে আসিফের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘পত্রিকায় আসিফের গুমের খবর দেখে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে আজ (মঙ্গলবার) ঢাকায় এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে তালাশ করেছি। তাকে পাই নাই। এখন আমার একটাই আবদার, আসিফের সন্ধান চাই।’

ছেলের সন্ধান চেয়ে যখন কথা বলছিলেন বিল্লাল হোসেন, তখন তার পাশে বসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ কেঁদে ফেলেন। পরে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আসিফ মাহমুদের বাবা ছেলের খোঁজে বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে যাচ্ছেন। এর চেয়ে বেদনাদায়ক ও ন্যক্কারজনক আর কিছু হতে পারে না।

আসিফ, বাকের ও রিফাত তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের মধ্যে রিফাত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়েন। এই বিভাগের সাবেক ও বর্তমান ২২ জন শিক্ষক রিফাত রশীদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গতকাল উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। শিক্ষকদের মধ্যে আছেন অধ্যাপক সি আর আবরার, আকমল হোসেন, রাশেদ উজ জামান, মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, রোজানা রশীদ, আবদুল মান্নান প্রমুখ। শিক্ষকদের বিবৃতিতে রিফাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।

এদিন আন্তঃজেলা বাস ও লঞ্চ চলাচল আংশিকভাবে চালু রাখা হয়। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরায় চালু করা হয়। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে এবং ধানমন্ডি এলাকায় আবু বকরকে চোখ বেঁধে ছেড়ে দেয়া হয়। দেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড সেবা চালু করার পর ১২ ঘণ্টায় ৪০% সংযোগে ইন্টারনেট পরিষেবা সচল হয়েছে বলে জানায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর এ সংগঠনের সভাপতি ইমদাদুল হক জানান, বুধবার ২৪ জুলাই রাতের মধ্যে বাসাবাড়িসহ ৭০% ব্রডব্যান্ড সংযোগ সচল হতে পারে বলে তারা আশা করছেন।

ইমদাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন,“আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে আপ হয়েছে। বাকি এলাকায়ও দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারপরও কিছু জায়গায় বাকি থাকবে; কারণ আমাদের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কে অনেক জায়গায় সমস্যা। তা ঠিক করা হচ্ছে। এক-দুদিনের মধ্যে সব জায়গায় পুরোপুরি সচল হবে।মঙ্গলবার রাতে পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড সেবা চালুর আগে ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এ বিষয়ে আইএসপিএবি সভাপতি বলেন, ওই বৈঠকে নেটওয়ার্ক ইফ্রাস্টাকচারের কী অবস্থা, কাটা পড়া লাইন মেরামতের অগ্রগতির তথ্য জেনেছেন প্রতিমন্ত্রী। এবারের তা-বে আইসিটি খাতের ক্ষতি ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে শত কোটি টাকা।

পাঁচ দিন পর অচলাবস্থার অবসানের আগাম খবর দিয়ে মঙ্গলবার বিকালে এক ব্রিফিংয়ে প্রতিমন্ত্রী টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষমূলক ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটি ফিরে আনছি। কেউ যেন মিথ্যা গুজবে বিভ্রান্ত না হন। মূল ধারার গণমাধ্যম যেভাবে লড়াই করছে। তাদের সংবাদগুলোকে যেন জনগণ প্রাধান্য দেয়, গ্রহণ করে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালুর ক্ষেত্রে কোন কোন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে পলক বলেন, “ব্যাংকিং সেক্টর, বাণিজ্যিক অঞ্চল, গণমাধ্যম, কূটনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, আইটি ফ্রিল্যান্সার, আউটসোর্সিং বিজনেস, সফটওয়্যার ডেভেলপার, রপ্তানিকারক তাদেরকে প্রাধান্য দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব ইন্টারনেট চালু হচ্ছে। এরপর মঙ্গলবার রাত ৯টার পর থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ফিরতে শুরু করলেও অধিকাংশ বাসাবাড়িতে তখনও সেবা চালু হয়নি। এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, জনমনে স্বস্তি না ফেরা পর্যন্ত কারফিউ চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোটা আন্দোলন একটা সহিংস আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। আমাদের পুলিশ, বিজিবি, আনসারসহ সব বাহিনী ধৈর্যের সঙ্গে এ আন্দোলন মোকাবিলা করেছে। এ আন্দোলনে আমরা বর্বরতা দেখেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিহতদের স্বজনদের উদ্দেশ করে বলেন, “আপনারা কখনও একা অনুভব করবেন না। আপনাদের পাশে সরকার আছে, দেশ আছে। আপনাদের যেকোনো সহযোগিতার জন্য সরকার প্রস্তুত আছে। আমি শিগগিরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আপনাদের সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।” নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এসময় সরকারের পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা নগদ ও ৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র এবং বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী কিংবা সাধারণ জনগণ কতজন মারা গেছেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “জনসাধারণ কতজন মারা গেছেন, তার কোনো হিসাব আমাদের কাছে নেই। কোনো থানায় এ সংক্রান্ত কোনো মামলাও দায়ের হয়নি। পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করছে, এ বিষয়ে পরে বলা যাবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের কয়েকজনকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নাই। তাদের পরিবার থেকেও আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেনি। তারা অভিযোগ করলে আমরা আপনাদের জানাতে পারব। এরইমধ্যে আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় বেশ কিছু মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবে কি-না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আগে চার্জশিট দায়ের হোক। মামলার মেরিট দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা নাশকতাকারী-দুষ্কৃতকারীদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। ২৪ জুলাই সকালে পুলিশ সদর দপ্তরের পাঠানো খুদে বার্তায় এই অনুরোধ জানানো হয়। খুদে বার্তায় বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নাশকতা সৃষ্টিকারী ও দুষ্কৃতকারীদের সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিন। অপরাধীর নাশকতার সময়ের ছবি-ভিডিও ফুটেজ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করতেও অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশ সদর দপ্তরের পাঠানো খুদে বার্তায় বলা হয়, তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। তথ্য দেওয়ার জন্য দুটি যোগাযোগ নম্বর দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এগুলো হলোÑ০১৩২০০০১২২২ ও ০১৩২০০০১২২৩। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ৭ দিনে সারা দেশে ১১৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলেই (রাজধানী ও ঢাকা জেলা) ৯০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে পুলিশের অবস্থান ও তাদের স্থাপনা ঘিরে। আগুনের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত এমন তথ্য পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।