বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত) ১৯ হাজার ৫০৬টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এসব আগ্নেয়াস্ত্র যথাযথ বিধি অনুসরণ না করেই দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য বিগত সরকারের আমলে দেয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়। বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের ২৫ আগস্ট এসব লাইসেন্স স্থগিত করে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিতে নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশনার পর এখনও ৬৫৭টি লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের কোন হদিস মিলছে না। এসব অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলছে। পাশাপাশি অস্ত্র জমা না দেওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র অনুযায়ী মামলা দায়ের শুরু হয়েছে। ২৯ জুন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে ১৩২টি মামলা দায়ের করেছে প্রশাসন। হদিস না পাওয়া ৬৫৭ টি অস্ত্রের অধিকাংশেরই মালিক পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগ নেতা, যুবলীগ নেতা, সে¦চ্ছছাসেবক লীগনেতাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতর সূত্রে গতকাল সোমবার এ তথ্য জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এই গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার থানা, ফাঁড়িসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থাপনা থেকে বিপুল অস্ত্র গোলাবারুদ লুট হয়। এই লুণ্ঠিত অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা তথা দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য এখন বড় হুমকি। তেমনি সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী লাইসেন্সকৃত যেসব অস্ত্র জমা বা উদ্ধার হয়নি সেই অস্ত্রও বড় ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা তৈরি করেছে।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত যে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বেসামরিক জনগণকে দেওয়া হয়েছে তাদের প্রদানকৃত লাইসেন্স স্থ’গিত করে। তাদেরকে ৩ সেপ্টেম্বর মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ারও নির্দেশ প্রদান করে। এতে আরও বলা হয়, অস্ত্র আইন, ১৮৭৮ (অপঃ ঢও ড়ভ ১৮৭৮) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ’া গ্রহণ করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪) লাইসেন্সকৃত অস্ত্রের মধ্যে ১৩ হাজার ৯০৪ টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়ে। নির্ধারিত সময়ের পরে জমা পড়ে ২২১ টি । অস্ত্র জমা না দেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হয় ২৬টি। অস্ত্র জমা না হওয়ায় ইতোমধ্যে ১১৬টি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। আর অস্ত্র জমা না দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট অস্ত্রের মালিকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৩২টি। লাইসেন্সকৃত ১৯ হাজার ৫০৬টি অস্ত্রের মধ্যে ৪ হাজার ৮৩১টি অস্ত্রের লাইসেন্সধারী হলেন পুলিশ, র্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থ’ার সদস্যরা। যেকারণে তাদের অস্ত্র আর জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব লাইসেন্সধারী (বেসামরিক জনগণ) তাদের আগ্নেয়াস্ত্র গুলি জমা দেননি সেগুলো সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী অবৈধ হয়ে গেছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থ’ার অভিযান অব্যাহত আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা অস্ত্র জমা দেননি তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জমা বা উদ্ধার না হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র আইনশৃঙ্খলা তথা জননিরাপত্তার জন্য আমরা ঝুঁকি মনে করি।
জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের লাইন্সেস দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতিকে অনেকক্ষেত্রেই উপেক্ষা করা হয়। অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক যোগসূত্র মূখ্য বিবেচনায় নেয় ৬৪ জেলার জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় একাধিক মামলার আসামি, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। ২০০৯ থেকে পতনের আগ পর্যন্ত অধিকাংশ অস্ত্রের লাইসেন্স পায় আওয়ামী লীগ বা তার সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী ও সদস্যরা। এমনকী আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী ক্যাডারদের হাতেও অস্ত্রের লাইসেন্স তুলে দিয়ে তাদের কাছে থাকা অবৈ অস্ত্রের এ ধরনের বৈধতা দেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে রাজধানীসহ েেশর বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আ›েন্দালনকারীদের ওপর গুলি করেন অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র দিয়ে। ফেনীর সাবেক এমপি নিজাম হাজারীসহ কোন কোন এলাকার এমপি নিজেই শর্টগান, বন্দুক পিস্তল নিয়ে আন্দোলণকারী ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালান। এতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। যেকারণে সরকার লাইসেন্স করা অস্ত্র গুলি জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধিকাংশ সাবেক মন্ত্রী, এমপি, নেতা, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর আত্মগোপনে চলে যায়। তাদের কেউ কেউ লাইন্সেকৃত অস্ত্র বাহক মারফত থানায় জমা দেয়। আবার কেউ কেউ জমা দেওয়ার কোন সুযোগ পায়নি। আবার তাদের অনেকের বাসা লুটপাট হওয়ার কারণেও অনেক অস্ত্র, গুলি লুট হয়ে যায়। এসব অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, দুই ধরনের অস্ত্রই এখন আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আপনারা জানেন গত বছর গণঅভ্যুত্থানকালে পুলিশের থানা, ফাঁড়ি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনা থেকে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র গোলাবারুদ লুট হয়। আবার সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী এখনও লাইসেন্সকৃত অনেক বৈধ অস্ত্র বেসামরিক জনগণ জমা দেয়নি। তাই জননিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে অবিলম্বে এসব অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এজন্য সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। এখনও পুলিশ পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আইনশৃঙ্খলাসহ অপরাধ প্রবণতাও কাঙ্খিত মাত্রায় কমানো যায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে লাইসেন্সকৃত বৈধ অস্ত্র ও লুণ্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকির কারণ হচ্ছে। যেকোন সময় এসব অস্ত্র দখল, চাঁদাবাজিতে এমনকী খুনোখুনিতে ব্যবহার হতে পারে।
পুলিশ সদর দফতরসহ একাধিক সুত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৬ বছর ৭ মাসে ১৯ হাজার ৫০৬টি বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয় সরকার। তার মধ্যে ডিএমপি এলাকায় ৪৫০৮ টি, সিএমপি এলাকায় ৪৩৪ টি, কেমপি ৩৮৩ টি, আর এমপি ১৩৫ টি, বিএমপি ১৮১, এসএমপি ২৭৪ টি, জিএমপি ২৫৩ টি, আরপিএমপি ৪৭ টি, ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় ৩০৫৯ টি,ময়মনসিংহ রেঞ্জ ৮৬০ টি, রাজশাহী রেঞ্জ ২২৫২ টি, রংপুর রেঞ্জ ৬৩০টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ২০৪৮ টি, খুলনা রেঞ্জ ২৪৭১ টি, বরিশাল রেঞ্জ ৭১০ টি ও সিলেট রেঞ্জ এলাকায় ১২৬১ টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়।
আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৩ তারিখ পর্যন্ত জমা পড়া আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা হচ্ছে ১৩৯০৪ টি। তার মধ্যে ডিএমপি এলাকায় ২২৭৩ টি, সিএমপি এলাকায় ৩৪০ টি, কেমপি ৩৩৪ টি, আরএমপি ৯৪ টি, বিএমপি ১৫০টি, এসএমপি ২০৮ টি, জিএমপি ২০৮ টি, আরপিএমপি ৪০ টি, ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় ২০৭৮ টি,ময়মনসিংহ রেঞ্জ ৬০৯ টি, রাজশাহী রেঞ্জ ১৮৪৭ টি, রংপুর রেঞ্জ ৫০৩ টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ১৩৩৯ টি, খুলনা রেঞ্জ ২২৩৭ টি, বরিশাল রেঞ্জ ৫৭১ টি ও সিলেট রেঞ্জ এলাকায় ১০৭৩ টি ।
নির্ধারিত সময়ের পর গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৯ জুন পর্যন্ত জমা পড়া আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা হচ্ছে ২২১ টি। তার মধ্যে ডিএমপি এলাকায় ১২৩ টি, সিএমপি এলাকায় ১০ টি, কেমপি ১ টি, আরএমপি ০ টি, বিএমপি ০টি, এসএমপি ৯ টি, জিএমপি ০ টি, আরপিএমপি ০ টি, ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় ১৫ টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ২ টি, রাজশাহী রেঞ্জ ০ টি, রংপুর রেঞ্জ ০ টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ৪২ টি, খুলনা রেঞ্জ ১ টি, বরিশাল রেঞ্জ ০ টি ও সিলেট রেঞ্জ এলাকায় ১৮ টি ।
সরকার নির্ধারিত সময়ের মধে জমা না দেয়ায় পরবর্তীতে বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা ২৬টি। তার মধ্যে ডিএমপি এলাকায় উদ্ধার করা হয় ৪ টি, সিএমপি এলাকায় ০ টি, কেমপি ০ টি, আরএমপি ০ টি, বিএমপি ০টি, এসএমপি ১ টি, জিএমপি ০ টি, আরপিএমপি ০ টি, ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় ৪ টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ০ টি, রাজশাহী রেঞ্জ ৪ টি, রংপুর রেঞ্জ ০ টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ১১ টি, খুলনা রেঞ্জ ০ টি, বরিশাল রেঞ্জ ০ টি ও সিলেট রেঞ্জ এলাকায় ২ টি।
লাইসেন্স বাতিল হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা ১১৬ টি। তার মধ্যে ডিএমপি এলাকায় ০ টি, সিএমপি এলাকায় ১ টি, কেমপি ০ টি, আরএমপি ০ টি, বিএমপি ০টি, এসএমপি ০ টি, জিএমপি ০ টি, আরপিএমপি ০ টি, ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় ০ টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ২১ টি, রাজশাহী রেঞ্জ ৯৪ টি, রংপুর রেঞ্জ ০ টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ১১ টি, খুলনা রেঞ্জ ০ টি, বরিশাল রেঞ্জ ০ টি ও সিলেট রেঞ্জ এলাকায় ০ টি।
যেসব লাইসেন্সকৃত আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি অথবা এখনও উদ্ধার হয়নি তার সংখ্যা হচ্ছে ৪০৮ টি। তার মধ্যে ডিএমপি এলাকায় ২৩৬ টি, সিএমপি এলাকায় ৪ টি, কেমপি ২ টি, আরএমপি ০ টি, বিএমপি ১ টি, এসএমপি ৪ টি, জিএমপি ৫ টি, আরপিএমপি ০ টি, ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় ৯৩ টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ০ টি, রাজশাহী রেঞ্জ ২৩ টি, রংপুর রেঞ্জ ০ টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ২৮ টি, খুলনা রেঞ্জ ৬ টি, বরিশাল রেঞ্জ ৪ টি ও সিলেট রেঞ্জ এলাকায় ২ টি।
বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত যেসব আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়ার দরকার নেই তার সংখ্যা হচ্ছে ৪৮৩১ টি। তার মধ্যে ডিএমপি এলাকায় ১৮৭২ টি, সিএমপি এলাকায় ৭৯ টি, কেমপি ৪৬ টি, আরএমপি ৪১ টি, বিএমপি ৩০টি, এসএমপি ৫২ টি, জিএমপি ৪০ টি, আরপিএমপি ৭ টি, ঢাকা রেঞ্জ এলাকায় ৮৬৯ টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জ ২২৮ টি, রাজশাহী রেঞ্জ ২৮৪ টি, রংপুর রেঞ্জ ১২৭ টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ৬২৮ টি, খুলনা রেঞ্জ ২২৭ টি, বরিশাল রেঞ্জ ১৩৫০ টি ও সিলেট রেঞ্জ এলাকায় ১৬৬টি।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০টি। এর মধ্যে ব্যক্তিগত অস্ত্র ৪৫ হাজার ২২৬টি। অস্ত্রগুলোর মধ্যে পিস্তল চার হাজার ৬৮৩টি, রিভলভার দুই হাজার ৪৩টি, একনলা বন্দুক ২০ হাজার ৮০৯টি, দোনলা বন্দুক ১০ হাজার ৭১৯টি, শটগান পাঁচ হাজার ৪৪৪টি, রাইফেল এক হাজার ৭০৬টি এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে চার হাজার ছয়টি। বাকি অস্ত্রগুলো বিভিন্ন আর্থিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে লাইসেন্স করা। ব্যক্তির কাছে থাকা অস্ত্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হাতে আছে সাড়ে ৭ হাজারের ওপরে। আর বিএনপির নেতা-কর্মীদের কাছে আড়াই হাজারের বেশি। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে ৭৯টি।
দেশে ৮৪ জন বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী রয়েছেন। তারা অস্ত্র আমদানি করেন। আবার কেউ কেউ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহ করেন। কোনো কোনো অস্ত্র ব্যবসায়ী অস্ত্র সংগ্রহের সময় চাহিদাপত্রের বাইরে অস্ত্র কিনে থাকেন। অতিরিক্ত এই অস্ত্রের লিখিত দলিল গোপনই থাকে।
বাংলাদেশে ব্যক্তিপর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত : বাংলাদেশে কেউই লাইসেন্স ছাড়া কোনো আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে বা বহন করতে পারেন না। এটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। ছোট বড় যেকোনও ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে হলে তার জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়, অর্থাৎ অস্ত্র কেনার জন্য আগে লাইসেন্স করতে হয়। এ সংক্রান্ত নিয়মগুলো কয়েকটি আইনের আওতায় পরিচালিত হয়। এর মধ্যে মূলত ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট এবং ১৯২৪ সালের আর্মস রুলস আইনের আওতায় যে কোন সামরিক বা বেসামরিক নাগরিককে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়।
আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে যেসব মানদ- পূরণ করতে হয় সেসব হচ্ছে, বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক হতে হবে, আবেদনকারীর জীবনের বাস্তব ঝুঁকি থাকলে, অর্থাৎ কেবলমাত্র আত্মরক্ষার ব্যাপার থাকলে তিনি আবেদন করতে পারবেন, ‘শর্ট ব্যারেল’ আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ৩০ বছর, ‘লং ব্যারেল’ আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫ বছর হতে হবে, এবং ৭০ বছরের নিচে হবে বয়স, আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়কর দাতা হতে হবে, বছরে ন্যূনতম দুই লাখ টাকা আয়কর প্রদান করতে হবে, অনুমতি পেলে আবেদনকারী অস্ত্র আমদানি করে আনতে পারেন, অথবা দেশীয় বৈধ কোন ডিলারের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবে। কোনও ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
যেভাবে আবেদন করতে হয়: আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একজন নাগরিককে তার স্থায়ী ঠিকানা যে জেলায়, সেখানকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লাইসেন্স ও আগ্নেয়াস্ত্র বিভাগ থেকে আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা এসবি শাখা তদন্ত করে আবেদনকারীর তথ্য মিলিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট দেয়। এরপর জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদনের পর সেটি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনাপত্তি পত্র দিলে জেলা প্রশাসক ওই আবেদনকারীর বরাবরে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করেন। এক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে বৈধ নাগরিকত্বের সনদপত্র, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ট্যাক্স সার্টিফিকেটের ফটোকপি, ছয় কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, এবং লাইসেন্স ফি জমা দিতে হবে।
অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম : আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ে সর্বশেষ আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ আইনে কেবলমাত্র আত্মরক্ষার স্বার্থে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তবে, এই আইনে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান সাধারণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক কখন টেস্ট ফায়ার বা পরীক্ষামূলকভাবে ফাঁকা গুলি চালাতে পারবেন, সে সংক্রান্ত কিছু নিয়ম আছে। নতুন কেনা অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক টেস্ট ফায়ার করতে পারবেন।