ভূগর্ভস্থ বাংকারে বন্দী ইসরাইলীরা

ইরানী হামলায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ইসরাইলীরা

ইরান-ইসরাইল সংঘাতের আগুনে ‘ঘি ঢেলেছেন’ ট্রাম্প-চীন

গত ৫দিনধরে ইসরাইলের নাগরিকরা বাংকারে বন্দী অবস্থায় রয়েছেন। ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবসহ বিভিন্ন শহরে বিধ্বস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপে খোঁজা হচ্ছে লাশ নিখোঁজ ইহুদীদের লাশ। ইরানের শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলে স্বাভাবিক জনজীবন কার্যত থমকে গেছে। ইরানের হামলার আশঙ্কায় ইসরাইলজুড়ে নিয়মিত সাইরেন বাজছে মানুষ আতঙ্কে ছুটছেন ভূগর্ভের আশ্রয়কেন্দ্রে। আকাশপথে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করতেই এসব সাইরেন বাজানো হচ্ছে। তাই তেল আবিবের রাস্তাগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতেও ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর শহরের বিভিন্ন সড়কে ইহুদীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা ও আতঙ্ক। এ অবস্থায় ইসরাইলে মানসিক বিপর্যয়ের ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যম মারিভ জানিয়েছে, হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইসরাইলজুড়ে ট্রমা সহায়তা কেন্দ্রে কল বেড়েছে প্রায় ৩৫০ শতাংশ। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড। উদ্ধারকারী দল ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও বাংকারে আশ্রয় নেয়, ফলে ব্যহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রমও। ইরানের মারাত্মক বিমান হামলার পর ইসরাইলের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা ক্ষতিগ্রস্তদের সন্ধান করা হচ্ছে। কারণ আক্রান্ত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই ইরান প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিব, হাইফাসহ ইসরাইলের একেবারে ভেতরে বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে। এদিকে ইসরাইলী গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের কার্যালয় ও দেশটির একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্রে ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। আইআরজিসির একজন মুখপাত্র জানান, আমরা ইহুদিবাদীদের শান্তিতে থাকতে দেব না। আর খামেনির পরিণতি হবে সাদ্দামের মতো হবে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ইসরাইলে অবস্থানরত নাগরিকদের দুঃসংবাদ দিলো মার্কিন দূতাবাস। খবর আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন, ইরনা, টিআরটি, আরব নিউজ, এএফপি, এপি, টাইমস অফ ইসরাইল, হিব্রু নিউজ, হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যম মারিভ ।

ভূগর্ভস্থ বাংকারেও নিরাপদ নয় ইসরাইলীরা: এদিকে ইসরাইলীরা গত শুক্রবার থেকে (১৩ জুন) দিন-রাতের বেশির ভাগ সময় ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় (বাংকার) অবস্থান করছেন। ইরানের বিরুদ্ধে তেল আবিব প্রশাসন আগ্রাসী হামলা শুরু করার পর তেহরানও ইসরাইলে প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। এই পর্যন্ত ইরানের ৩৭০টিরও বেশি শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে বাংকারগুলো ইসরাইলীদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারছে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ফলে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়ার পরও আতঙ্কে দিন পার করছেন ইসরাইলীরা। ইরান পাঁচ দিন ধরে হামলা অব্যাহত রাখায় ইসরাইলীদের বারবার আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে। অনেকে বারবার এ ছুটোছুটির ভোগান্তি এড়াতে রাতেও বাংকারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী আগেই বেসামরিক ইসরাইলীদের সতর্ক করে বলেছিল, তারা যেন দখলীকৃত ভূখণ্ড (ইসরাইল) পুরোপুরি ত্যাগ করেন, ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী হামলা চলাকালে বাংকারগুলো তাদের রক্ষা করতে পারবে এমন আশা যেন না করেন তারা।

মুঠোফোনে ইসরাইলীদের ধারণ করা ভিডিওতে ইরানের হামলার পর বাংকারের ভেতর আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ার চিত্র উঠে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শক্তপোক্ত দেয়াল ও ছাদ ইসরাইলীদের মাথার ওপর ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত ও অবিশ্বাসে হতবাক লোকজন সাহায্যের জন্য দিগ্বিদিক ছুটছেন। গত রোববার ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রেজা সাইয়াদ বলেছেন, দখলীকৃত অঞ্চল ত্যাগ করুন এবং অপরাধী প্রশাসনকে (ইসরাইলের নেতানিয়াহু সরকার) আপনাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে দেবেন না। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, বাংকার সেখানে আশ্রয় নেওয়া ইসরাইলীদের পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারবে না। কোনো উসকানি ছাড়াই ইসরাইলী প্রশাসন গত শুক্রবার রাতের আঁধারে ইরানে হামলা চালায়। এ হামলার লক্ষ্য ছিল আবাসিক ভবনসহ সামরিক বিভিন্ন স্থাপনা। হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। আর বাড়িঘর লক্ষ্য করে হামলার ফলে বেসামরিক নাগরিকদেরও প্রাণহানি হয়েছে।

আল জাজিরার খবর বলছে, বন্দর নগরী হাইফাতেও সাইরেন বাজতে শোনা গেছে। সেখানে চার দিনে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। হাইফার তেল পরিশোধনাগার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইসরাইল দাবি করেছে, গত কয়েক দিনে ইরান প্রায় ৩৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইরানের একেকবারের হামলায় ছিল ৩০ থেকে ৬০টি ক্ষেপণাস্ত্র।

এবার মোসাদ কার্যালয়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের: ইসরাইলী গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের কার্যালয় ও দেশটির একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করেছে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি)। গতকাল মঙ্গলবার আইআরজিসি এক বিবৃতির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম। আইআরজিসি এক বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার ভোরে তাদের অ্যারোস্পেস ফোর্স ইউনিটগুলোর মোসাদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান পরিচালনা করেছে। অত্যন্ত উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, দখলদার সেনাবাহিনীর সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তর ‘আমান’ এবং তেল আবিবে মোসাদের কার্যালয়ে ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে আঘাত হেনেছে। আইআরজিসি আরও জানিয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থার এসব কার্যালয়ে এখন আগুন জ্বলছে। এর আগে সোমবার (১৬ জুন) রাতে তেল আবিব ও হাইফা শহরকে টার্গেট করে পাল্টা হামলা শুরু করে ইরান, মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার কেন্দ্র আইআরআইবি-তে হামলার পরপরই ইরান সরাসরি জবাব দেয় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক ঘোষণায় জানানো হয়, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’-এর নবম ধাপ শুরু করেছে। এই হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়। আইআরজিসির একজন মুখপাত্র জানান, আমরা ইহুদিবাদীদের শান্তিতে থাকতে দেব না।

ইরানের সক্ষমতা বুঝতে ভুল করেছে ইসরাইল: ইসরাইল ইরানের সামরিক সক্ষমতা বুঝতে ভুল করেছে। ইসরাইলে ইরানের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তেহরানের দ্রুত পুনর্গঠনের সক্ষমতাই প্রমাণ করছে। এসব কথা বলেছেন মার্কিন থিংক ট্যাংক কোয়িন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ত্রিটা পারসি। তার কথায়, ইসরাইল ধারণা করেছিল তারা ইরানের সামরিক নেতৃত্ব হত্যা করে কমান্ড কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা খুব দ্রুতই পুনর্গঠিত হয়েছে। পারসি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, তারা (ইসরাইলীরা) ইরানের পুনর্গঠনের সক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করেছে। তারা ভেবেছিল ইরানের কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু তা খুব দ্রুতই পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে।

খামেনির পরিণতি হবে সাদ্দামের মতো- ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী: ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ হুঁশিয়ারি করে বলেছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যদি ‘যুদ্ধাপরাধ’ চালিয়ে যান এবং ইসরাইলী বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রাখেন, তবে তার পরিণতিও হতে পারে সাদ্দাম হোসেনের মতো। খবর আল-জাজিরা। স্থানীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেন, আমি ইরানের এই একনায়ক শাসককে সতর্ক করছি ইসরাইলী নাগরিকদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে এবং যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে গেলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।

ইরান-ইসরাইল সংঘাতের আগুনে ‘ঘি ঢেলেছেন’ ট্রাম্প-চীন: ইরান-ইসরাইলের মধ্যকার চলমান সংঘাতের আগুনে ‘ঘি ঢেলেছেন’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, এমন অভিযোগ এনেছে চীন। আজ মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। মূলত ইরানের নাগরিকদের তেহরান ছেড়ে যেতে বলার পরই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এনেছে চীন। কয়েক দশকের শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ও পরোক্ষ যুদ্ধের পর গত শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের দাবি, ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সে কারণেই তারা এ হামলা শুরু করেছে। তবে তেহরান বরাবর দাবি করে এসেছে, শুধু শান্তিপূর্ণ কাজেই তাদের পরমাণু প্রকল্প ব্যবহার করা হবে। টানা পাঁচ দিন ধরে চলছে দুই পক্ষের সংঘাত। এতে বড় আকারে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইরান ছেড়ে আজারবাইজানে ঢুকেছেন ৬০০ বিদেশি নাগরিক: ইসরাইলের হামলার মুখে আতঙ্ক ছড়িয়েছে ইরানজুড়ে। টানা পাঁচদিন ধরে হামলা ও পাল্টা হামলা চলছে। এতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পার্শ্ববর্তী আজারবাইজানে পাড়ি জমিয়েছেন এ পর্যন্ত ৬০০ বিদেশি নাগরিক। খবর আল-জাজিরার। ফ্রান্সভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপি-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আজারবাইজান সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা শুরু হওয়ার পর থেকে ১৭টি দেশের ৬০০’র বেশি নাগরিক ইরান থেকে আজারবাইজানে প্রবেশ করেছেন।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে ইসরাইলের হামলা ‘কাপুরুষোচিত’-ইরানের মন্ত্রী: ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আইআরআইবি-এর সদর দপ্তরে ইসরাইলী বাহিনীর হামলার ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে ভর্ৎসনা করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। ইরানের সঙ্গে সংঘাতে তারা কোনঠাসা হয়ে পড়ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। গত সোমবার ইরানের অপর রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল ইরনাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরাগচি বলেন, “আমাদের জাতীয় সম্প্রচার সংবাদমাধ্যমে হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের বেপরোয়া মনোভাব আরও একবার প্রকাশিত হয়েছে। মাঠে তারা কোনঠাসা অবস্থায় আছে এবং এ কারণেই তারা মরিয়া হয়ে সংবাদমাধ্যম ভবনের মতো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে।

ইসরাইলে অবস্থানরত নাগরিকদের দুঃসংবাদ দিলো মার্কিন দূতাবাস: ইসরাইলে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের দুঃসংবাদ দিয়েছে সেখানকার মার্কিন দূতাবাস। সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে এক বার্তায় দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যেসব নাগরিক ইসরাইলে বসবাস করছেন, তাদেরকে আপাতত নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে। “ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এখন এমন অবস্থায় নেই যে এখানে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কিংবা ইসরাইল ত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে কোনো প্রকার সহযোগিতা করতে পারবে। সেই সঙ্গে নাগরিকদের অনুরোধ করা হচ্ছে যে বিপদ কেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা যেন বম্ব শেল্টার কেন্দ্রগুলো থেকে বাইরে না বের হন”, বলা হয়েছে মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে।

ইসরাইলী হামলায় ইরানে নিহত ৪৫০: মানবাধিকার সংস্থা

ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত কতজন নিহত হয়েছেন? সে বিষয়ে নতুন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। ইরানের মানবাধিকার কর্মীদের একটি অলাভজনক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান এই সংখ্যা জানিয়েছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২২৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ১৮৮ জন আহত হয়েছেন।

এছাড়া, ১০৯ জন সামরিক সদস্য নিহত এবং ১২৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এছাড়াও, ১১৯ জন নিহত এবং ৩৩৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি। এই হিসাবে ঐজঅঘঅ মোট ৪৫২ জন নিহত এবং ৬৪৬ জন আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এখন পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে খুব কম তথ্য প্রকাশ করেছে।

দেশটির ভেতরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে সাংবাদিকদের নিয়মিতভাবে কাজ করাও কঠিন, ফলে সংঘাতের প্রকৃত মানবিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

ইসরাইল পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলেছে: এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইসরাইল- ইরান যুদ্ধের মধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসরাইল-ইরান সংঘাত ছাড়াও দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আঞ্চলিক বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফোনালাপে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ইসরাইলের ইরানে হামলা যে সহিংসতার ঘূর্ণি তৈরি করেছে, তা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং এই অঞ্চল আরেকটি যুদ্ধ বহন করার মতো অবস্থায় নেই।”

এরদোয়ান সংঘাত নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক বিরোধ নিরসনের চাবিকাঠি হলো পুনরায় আলোচনায় ফেরা। তিনি সতর্ক করে দেন, চলমান পরিস্থিতি যেন গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকটকে ছাপিয়ে না যায়, কারণ তা হলে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমও ইসরাইলীদের দখলের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরাইলী হামলার ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হতে পারে: কাতার

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরাইলী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতার। দেশটি এই হামলাকে অবিবেচক পদক্ষেপ যা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে বলেও মন্তব্য করেছে।

মঙ্গলবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মজেদ আল-আনসারি বলেন, এই হামলা এমন এক সময় চালানো হয়েছে, যখন ইরান ওয়াশিংটনের সঙ্গে “একটি ইতিবাচক কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায়” অগ্রসর হচ্ছিল, যার সঙ্গে বহু আঞ্চলিক দেশও যুক্ত ছিল। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাতার এখনো সক্রিয় রয়েছে এবং “আমরা বিশ্বাস করি, একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আমেরিকার আগ্রহ রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাব।”

ইসরাইলের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে ব্যবহার হবে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র: ইরান

ইসরাইলের শাসন ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ইরান। সেইসঙ্গে দেশটির বিরুদ্ধে পাল্টা বিধ্বংসী অভিযান চালিয়ে যাবে। এমনকি ব্যবহার করবে নতুন ক্ষেপণাস্ত্রও। গতকাল মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজা তালায়ী-নিক এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের জাতি একটি আরোপিত যুদ্ধে পড়েছে এবং শত্রু আমাদের জনগণের প্রতিটি স্তরের শক্তি ও সহনশীলতাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে।

ইরানের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানকে জোর দিয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইরান নিজেকে রক্ষার জন্য সব ধরনের সামর্থ্য ব্যবহার করছে। তালায়ী-নিক বলেন, আমরা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে থাকলেও আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক সব সামর্থ্যই কাজে লাগাচ্ছি। আমাদের প্রতিরক্ষা ফ্রন্টের খাত প্রশস্ত এবং সব শ্রেণির মানুষ এতে যুক্ত।

তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে তেহরানের উত্তরে একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় ৬০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২০ জন শিশু ছিল এবং কিছু শিশু এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ইসরাইলীদের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা নেই।