রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নির্মমভাবে খুন হওয়া ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অন্যতম আসামি নান্নুকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সোমবার রাত নারায়ণগঞ্জের বন্দর এলাকা থেকে র‌্যাব-১১-এর একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। নান্নু ইট ও সিমেন্টের ব্লক দিয়ে আঘাত করে সোহাগের মৃত্যু নিশ্চিত করা চারজনের একজন।

গত বুধবার হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে সোহাগকে মাথায় ইট দিয়ে থেঁতলে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, পরিকল্পিতভাবে ডেকে এনে সোহাগকে পিটিয়ে এবং মাথায় ইট-পাথর দিয়ে আঘাত করে শরীর থেঁতলে ফেলা হয়। হত্যার আগে তাকে বিবস্ত্র করা হয় এবং হামলাকারীদের কয়েকজন তার শরীরের ওপর লাফাতে থাকে-যা এলাকাবাসীকে শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ করে তোলে। পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সোহাগকে ওই দিন দুপুরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসেন তার সহযোগীরা। সন্ধ্যার দিকে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহত সোহাগ ভাঙারির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া পুরনো তামার তার, অ্যালুমিনিয়ামের শিটসহ বিভিন্ন ধাতব সামগ্রী কেনাবেচা করতেন।

পরিবার জানায়, একসময় সোহাগ যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। তার স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। ১৪ বছর বয়সী মেয়ে সোহানা ষষ্ঠ শ্রেণিতে এবং ১১ বছরের ছেলে সোহান চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। হত্যাকাণ্ডের পরদিন, বৃহস্পতিবার, নিহতের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সোহাগকে হত্যার নৃশংসতা ও জনবহুল স্থানে এই ধরনের ঘটনা রাজধানীজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

সূত্র আরও জানায়, সোহাগ ও মাহিন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। দুইজন একসঙ্গে ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মাহিনকে টাকাও দিতেন সোহাগ। মাসখানেক আগে সোহাগের কাছে দুই লাখ টাকা করে নির্ধারিত মাসোয়ারা চায় মাহিন। সোহাগ তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দুই বন্ধুর মধ্যে শুরু হয় শত্রুতা। এই টাকা চাওয়া নিয়েই হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে তাদের মধ্যে মারামারি হয়। ওইদিনই টিটন গাজীকে সঙ্গে নিয়ে সোহাগকে হত্যার পরিকল্পনা করে মাহিন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সোহাগ হত্যায় ১৯ জন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। এর মধ্যে ১১ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী।