দেশে প্রথমবারের মতো পাইপলাইনের মাধ্যমে জেট ফুয়েল সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করেছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। নতুন নির্মিত ৫.৭৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের মাধ্যমে এখন থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিএএফ জহুরুল হক ঘাঁটিতে সরাসরি জ্বালানি পৌঁছাবে।

গতকাল মঙ্গলবার জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি জহুরুল হকের এয়ার অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল হায়দার আবদুল্লাহ, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর প্রমুখ।পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান এবং প্রকল্প পরিচালক অনুপ কুমার বড়ুয়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে জ্বালানি সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিমানের জ্বালানি সরবরাহ করা প্রথম বিমানবন্দর এটি। প্রকল্পটি বিমানে আধুনিক, পরিবেশ বান্ধব ও দক্ষ জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে। তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপের ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে, পরিবহন খরচ কমবে এবং বিমান জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় কর্মদক্ষতা বাড়বে।

বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান জানান, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একই ধরনের পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। “সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রস্তাব ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি,” তিনি বলেন। প্রকল্প কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ২.৫ লাখ লিটার জেট ফুয়েল প্রয়োজন হয়, হজ মৌসুমে যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখ লিটারে। এর আগে ট্যাংকার ট্রাকের মাধ্যমে প্রতিবার ১৫–২০ বার যাতায়াত করে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় নিয়ে জ্বালানি সরবরাহ করা হতো। নতুন পাইপলাইন এখন একই পরিমাণ জ্বালানি মাত্র ৯০ মিনিটে সরবরাহ করতে পারবে এবং বছরে অন্তত আড়াই কোটি টাকা সাশ্রয় করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর শুরু হওয়া নির্মাণকাজে ৮ ইঞ্চি ব্যাসের আধুনিক মনিটরিং সিস্টেম সংযুক্ত পাইপলাইন বসানো হয়, যা ঘণ্টায় ১৪০ কিউবিক মিটার জেট ফুয়েল পরিবহন করতে সক্ষম। প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। এর আগে গত ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর এই পাইপলাইনের মাধ্যমে রীক্ষামূলকভাবে ৩.৫ লাখ লিটার জ্বালানি সফলভাবে সরবরাহ করা হয়। পাইপলাইন চালুর আগে জ্বালানি পরিবহনে ১০ থেকে ১৫ জন কর্মীর প্রয়োজন হতো, কিন্তু এখন কেবল একজন অপারেটর কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণে পুরো প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে পারবেন।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বছরে ২০ হাজারেরও বেশি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে, যেখানে কমপক্ষে ১৭ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন। বিমানবন্দরের সব জেট ফুয়েল সরবরাহ করে পদ্মা অয়েল, আর নতুন এই পাইপলাইন সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ, দ্রুত ও কার্যকর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।