গত ৫ আগস্টে প্রকাশিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্রে’ বাংলাদেশের ইতিহাসের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ও মানবিক বিপর্যয়, বিডিআর হত্যাকাণ্ড (২০০৯), শাপলা গণহত্যা (২০১৩), কোটা সংস্কার আন্দোলন (২০১৮), নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (২০১৮) অবিলম্বে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে-বাংলাদেশ গঠনতান্ত্রিক আন্দোলন নামে একটি সংগঠন। বক্তারা বলেন, ঘোষণাপত্র দেশনির্মাণ ও গণ-সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলেও এতে কয়েকটি বড় আন্দোলন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার অধ্যায় উপেক্ষিত হয়েছে, যা জাতীয় স্মৃতি ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তারা সতর্ক করে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রকে পূর্ণাঙ্গ ও নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে হলে এই পাঁচটি ঘটনাকে গণ-সংগ্রামের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। অন্যথায় এটি জনগণের নয়, শাসকের দলিল হয়ে থাকবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে যৌথভাবে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে-বিডিআর কল্যাণ পরিষদ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, সমন্বয়কারী সংগঠন বাংলাদেশ গঠনতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ গঠনতান্ত্রিক আন্দোলনের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ জাহিদ হাসান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, বিডিআর কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ফয়জুল আলম, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সভাপতি দীপ্ত প্রমুখ। বাংলাদেশ গঠনতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে সমন্বয়কারী মোহাম্মদ জাহিদ হাসান বলেন, আমরা ইতিহাসকে বিকৃত হতে দেব না। আমাদের লক্ষ্য সাম্য, ন্যায় ও মুক্তি একই লক্ষ্যে প্রতিফলিত হবে।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলাম বলেন, বর্তমান ঘোষণাপত্র দেশনির্মাণ ও গণ-সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হলেও তাতে জাতীয় স্মৃতি ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থীভাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার অধ্যায় উপেক্ষিত হয়েছে। তাদের দাবিকৃত অন্তর্ভুক্তির তালিকায় রয়েছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ ও তার মানবিক বিপর্যয়, ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড যা বক্তাদের মতে একটি পরিকল্পিত গণহত্যা, ২০১৩ সালের শাপলা গণহত্যা যেখানে রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নৃশংস অভিযান চালানো হয়, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রদের ন্যায়ের লড়াই ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ঘটনা এবং একই বছরের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে কিশোর আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো দমন-পীড়ন। সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, ঘোষণাপত্রে অতীত সংগ্রাম ও শহীদদের স্মৃতিচারণ থাকলেও এই পাঁচটি অধ্যায় উপেক্ষিত হয়েছে। পাশাপাশি, এতে নেই ভবিষ্যতের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ যেমন নির্বাচনের সময়সূচি, আইনি ও সাংবিধানিক সংস্কারের পরিকল্পনা, প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কারের প্রস্তাব, এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার সীমা ও জবাবদিহিতা বিষয়ক স্পষ্ট নির্দেশনা। বাংলাদেশ গঠনতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমরা ইতিহাসকে বিকৃত হতে দেব না। আমাদের লক্ষ্য সাম্য, ন্যায় ও মুক্তি একই নথিতে প্রতিফলিত হবে। বক্তারা সত্য উন্মোচন, ইতিহাস সংরক্ষণ এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।