ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
গতকাল বৃহস্পতিবার নবম কমিশন সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান। গতকালের সভা থেকে দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। অপরদিকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটার অর্ন্তভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এদিন নবম কমিশন সভা হয়। বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আইন সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলে। পরে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোট করতে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পৌঁছেছে। তবে কমিশন সভায় সেই চিঠি নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে আমরা অতি শিগগির আলোচনা করব। আর মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার আপনাদেরকে যেটা বলেছেন, আমাদের পক্ষ থেকে ঘোষণাটা আসবে দুই মাস আগে। আপনারা ধরেই নিতে পারেন, এই শিডিউল ঘোষণার কাজটা আমাদের ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে (করব)।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, যেদিন নির্বাচন হবে, আনুমানিক তার ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। রোজার আগে নির্বাচন, রোজা যদি হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি, তার আগে দুই চার দিন সময় দেবেন ফর নিউ গভার্নমেন্ট টু টেক ওভার, শপথ গ্রহণ ইত্যাদি। তার আগে নির্বাচন হবে। নির্বাচনের যে ডেটটা হবে, টেন্টেটিভলি তার থেকে ৬০ দিন আগে আপনারা হিসাব করবেন।
নির্বাচন প্রক্রিয়াকে এআই ও ড্রোন প্রভাবিত করতে পারবে না উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্য এবং বিদ্বেষ ছড়াতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এআইয়ের অপব্যবহার রোধ করতে আচরণবিধিতে নির্দিষ্ট বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি শুধুমাত্র প্রার্থী ও দলের জন্য প্রযোজ্য হলেও, অন্যান্য পক্ষকেও মোকাবিলা করার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনে কোনো প্রার্থী বা তার এজেন্ট ড্রোন বা কোয়াডকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন হলে নিজেরা ড্রোন ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
ভোটের সময় সিসিটিভি ব্যবহার এখনো অনিশ্চিত উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আসন্ন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করছে নির্বাচন কমিশন। তবে এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেশের ৪৫ হাজার কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন করা একটি ব্যয়বহুল ও জটিল প্রক্রিয়া। এত সংখ্যক ক্যামেরা কেনা বা ভাড়া করা কঠিন। এ বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে এবং তারা বিকল্প উপায় খুঁজছে। এর মধ্যে বিদ্যমান সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো ব্যবহার করা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়ার মতো প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে।
ভোটার হওয়ার প্রসঙ্গে মো. সানাউল্লাহ বলেন, আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হবে। অর্থাৎ তারা আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, ভোটার তালিকা আইনে সামান্য সংশোধন করেছিলাম। এজন্য বছরের মাঝামাঝিতে ভোটার করে নিতে পারব। এতে ১৮ থেকে ২০ লাখের তরুণ ভোটার যোগ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের কাছে সিম্বল ব্যালট (প্রতীক সম্বলিত) যাবে৷ যাতে সময় কম লাগে। প্রার্থী চূড়ান্ত দেওয়ার পরে সিম্বল ব্যালটে ভোট দেবেন। ইসিতে এসে পোস্ট অফিস ব্যালট নিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে নিবন্ধন করে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর তারা অনলাইনে প্রার্থীর তালিকা দেখতে পারবেন। সেই অনুযায়ী তারা পছন্দের প্রার্থী দেখে ব্যালটে থাকা সেই প্রার্থীর সিম্বলে ভোট দেবেন।
প্রবাসীদের ব্যালটে শুধু প্রতীক রাখার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবচেয়ে কাছের দেশেও ব্যালট পেপারে পাঠাতে সময় লাগবে ১৮ দিন। দূরের দেশগুলোতে ২৮ দিন। তাই প্রার্থীর নামসহ ব্যালট পাঠাতে হলে যে সময়ের প্রয়োজন হবে তা প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর থাকবে না।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিত করতে চাই। মাধ্যমটা হবে পোস্টাল ব্যালট। অতীতে এই বিধান থাকলে সময়ের কার্যকর করা যেত না। এবার তিনভাবে পোস্টাল ব্যালটে ভোট হবে। যারা প্রবাসে থাকেন, কারাগারে থাকেন ও ভোটের দায়িত্বে থাকেন। তাদের জন্য এই ব্যবস্থা থাকবে। এজন্য আগেই নিবন্ধন করতে হবে। পোস্টাল ব্যালটের ক্ষেত্রে সেপ্টেম্বর থেকে প্রচার ও ভোটারশিক্ষণের কাজ চলবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শেষ মুহূর্তে প্রার্থী পরিবর্তন হলে আদালতের আদেশে তবে সেখানে পোস্টাল ব্যালট হবে না। তবে আইনি কার্যক্রম যেন দ্রুত হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
আবুল ফজল জানান, এটা ব্যয় সাপেক্ষ প্রসেস। আনা-নেওয়া করতে ব্যালট প্রতি ৫০০ টাকা থাকবে। এরপর ছাপানোর খরচও আছে। আবার নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য ৪৮ টাকার প্রকল্প নেওয়া হবে। প্রতি এক লাখ ভোটারের জন্য সবমিলিয়ে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা লাগবে।