জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিবেন এবং স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত থাকবেন। আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা ও উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা। জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এসময় কোনও প্রকার ড্রোন ওড়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই তথ্য জানায়।
প্রেস উইং বলছে, শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ সই অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ এলাকায় এসময় কোনও প্রকার ড্রোন ওড়ানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।
প্রায় আট মাস ধরে তিন ধাপে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শেষে অবশেষে স্বাক্ষরিত হয়ে চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’। এর আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। গত ১৪ অক্টোবর সনদের চূড়ান্ত কপি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কাছে তুলে দেওয়া হয়।
ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজনৈতিক দলগুলো এবং দেশের জনগণকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞতিতে এ তথ্য জানানো হয় ।
এতে বলা হয়, সম্মানিত নাগরিক, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪.০০ টায়, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আমরা ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনায় উপস্থিত থাকব-যেখানে স্বাক্ষরিত হবে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫। এতে আরো বলা হয়, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রণীত এই সনদটি জাতি হিসেবে আমাদের পুনর্জাগরণের অঙ্গীকার এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণের এক অনন্য দলিল। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হবার জন্য আপনি সাদরে আমন্ত্রিত।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা সবাই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিবে তবে স্বাক্ষর করার বিষয়টি গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ পরিষ্কার করেনি। এমন প্রেক্ষাপটে ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তৃতীয়বারের মতো। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের এ কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, যার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ১৫ আগস্ট। তবে কমিশনের কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় এর আগে দুই দফায় মেয়াদ এক মাস করে বাড়ানো হয়। এবার তৃতীয় দফায় আরও ১৫ দিন মেয়াদ বাড়িয়েছে সরকার।
অংশ নিবে জামায়াতে ইসলামী
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে। তবে সনদে স্বাক্ষর করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি জামায়াত, এমনটা জানিয়েছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে 'জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি, গণভোট ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন' শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। নভেম্বরই গণভোটের উপযুক্ত সময়। এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সকল প্রস্তাবই গণভোটের মধ্যে রাখার দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, সরকারের থাকা কিছু ব্যক্তি একটি দলের নির্দেশনায় প্রশাসনে বদলি করছে। সেখানে দলীয় ব্যক্তিদের পদায়ন করা হচ্ছে।
এনসিপির বক্তব্য
আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিকতা বলে উল্লেখ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলে সেটা মূল্যহীন হবে। এ কারণে শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যে প্রক্রিয়া, যে আলোচনা হবে, সেটির একটি আইনি ভিত্তি দিতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সব রাজনৈতিক দল একটা জায়গায় ঐকমত্যে এসেছে, কী কী পরিবর্তন হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে কিছু কিছু দলের বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে। তাদের ভিন্নমত থাকতেই পারে। গণভোটে সামগ্রিক বিষয়টিই যাবে। জনগণ যদি পক্ষে ভোট দেন, তাহলে জুলাই সনদ অনুমোদিত হবে এবং পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করবে। ফলে পুরো প্রক্রিয়ার মূল জায়গাটা হবে আদেশ, যে সাংবিধানিক আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পুরো প্রক্রিয়া এগোবে।
বিএনপির অবস্থান
জুলাই সনদে বিএনপি স্বাক্ষর করবে কি না সেজন্য অপেক্ষা করতে বললেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁয়ে রানীশংকৈলে কর্মসূচিতে তিনি এমনটা জানিয়েছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কিনা তার জন্য অপেক্ষা করেন। যেগুলো বলেছে বিএনপি, নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি, সেগুলো সনদে লিপিবদ্ধ করা হলে সিদ্ধান্ত নিবো। অপেক্ষা করুন সনদে বিএনপি স্বাক্ষর করবে কি না জানতে পারবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি সংস্কার ইস্যুতে অত্যন্ত ইতিবাচক। অবশ্যই সনদে স্বাক্ষর করবো যদি বিএনপির দেওয়া নোট অব ডিসেন্ট লিপিবদ্ধ হয় সনদে। গণভোট তো বিএনপি মেনে নিয়েছে। একটু অপেক্ষা করুন। অস্থির হয়েন না, টেনশন থাকা ভালো। অপেক্ষা করুন।
অন্যদিকে বিএনপি শুক্রবার জুলাই সনদে সই করতে প্রস্তুত আছে জানিয়ে আলোচনায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গণভোট আগে না পরে এটি জাতীয় সনদের কোনো বিষয় নয়। বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে। সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। যেভাবেই হোক দীর্ঘদিন অনির্বাচিত অবস্থায় একটা সরকার পরিচালিত হলে যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেটা এখানেও হয়েছে। এ জন্য বিএনপি শুরু থেকে বলছে, যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন।