আজ ২৩ জুলাই, বুধবার। ২০২৪ সালের এদিন ছিলো মঙ্গলবার। ইন্টারনেট অফ করে দিয়ে মানুষের মধ্যে যোগাযোগের রাস্তা বন্ধ রেখে কয়েকদিনের টানা ক্র্যাকডাউন আর কয়েক শত লাশ ফেলেও আন্দোলন দমাতে না পেরে ভিন্ন কৌশল নেয় সরকার। আন্দোলন-সহিংসতা পেরিয়ে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন দেয় সরকার। এদিন সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা পুনর্বিন্যস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার, যাতে সব গ্রেডের নিয়োগে কোটা থাকছে মোট ৭ শতাংশ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয় সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, অর্থাৎ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে নিম্নরূপভাবে কোটা নির্ধারণ করা হল। মেধাভিত্তিক ৯৩% মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫% ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১% শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১% প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ হবে। কোটা নিয়ে এর আগে জারি করা সকল প্রজ্ঞাপন, পরিপত্র, আদেশ, নির্দেশ, অনুশাসন রহিত করা হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গুলশানে এক ব্রিফিংয়ে কোটা নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানান। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতও উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। এই প্রজ্ঞাপন জারির প্রেক্ষাপট, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং সরকারের অবস্থান তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের কথা রেখেছি, এই প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। ২৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সার্কুলার জারি করলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের চার সংগঠক তা প্রত্যাখ্যান করেন।

টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর দেশে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। তবে শুরুতে সবাই ইন্টারনেট পাননি; জরুরি সেবা, আর্থিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমসহ কিছু খাতকে প্রাধান্য দিয়ে ইন্টারনেট চালু করা হয়। রাজধানীর বিটিআরসি ভবনে মঙ্গলবার বিকেলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক সাংবাদিকদের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ চালু হবে। প্রাথমিকভাবে ব্যাংক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ও কূটনৈতিক এলাকায় ইন্টারনেট চালু হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত, রপ্তানিমুখী শিল্প খাত, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও হাসপাতালের মতো জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান, রেলওয়ে, প্রবাসীকল্যাণ সেবা এবং এয়ারলাইনস সেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থাকা এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাবে। এরপর এলাকার পরিধি বাড়ানো হবে। খুব দ্রুত সার্বিকভাবে পুরো ইন্টারনেট সেবা চালু হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চালুর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়টি এখনো আমি নিশ্চিত বলতে পারছি না যে কতটুকু আমরা আসলে অ্যালাউ (অনুমোদন) করতে পারব। এ পর্যায়ে ইন্টারনেটকে আগে পুনঃস্থাপন করি। আগামীকাল (আজ বুধবার) বলি, পরের অবস্থান কী। কারও যদি অগ্রাধিকার এলাকার প্রস্তাব থাকে, তাহলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) জানালে এবং সেটা যৌক্তিক মনে হলে ইন্টারনেট দেওয়া হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ। মোবাইল ইন্টারনেট তখনো বন্ধ রাখা হয়। এটা চালুর বিষয়ে পরে জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।

কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হলে ১৭ জুলাই (বুধবার) রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেট এবং ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাত ৯টার দিকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ হিসেবে ১৮ জুলাই এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় একদল তরুণ মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন। আরেক অপারেটর রবির একটি গ্রাহক সেবা কেন্দ্র বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টার ভাঙচুর করা হয়। তখন অপারেটরদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইন্টারনেট চালুর ক্ষেত্রে সরকারের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা রয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষেত্রে সরকার ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত ডেটা সেন্টারে আগুন দেওয়ার বিষয়টি সামনে আনে। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, সারা দেশে চারটি ডেটা সেন্টার এবং ৪০টির মতো সার্ভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে কয়েকশ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ব্যাংক, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় ও কূটনৈতিক এলাকায় ইন্টারনেট চালু করা হয় অগ্রাধিকারভিত্তিতে।

পাঁচ দিন ইন্টারনেট না থাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, অনলাইনে টাকা লেনদেন, মুঠোফোনে টাকা ভরা, অনলাইনে কেনাবেচা, ফ্রিল্যান্সিং, বিমানের টিকিট কেনা, অনলাইনভিত্তিক বিনোদনের মাধ্যম (ওটিটি, ইউটিউব প্রভৃতি) ও পড়াশোনাÑসব সেবাই হয় বন্ধ হয়ে যায় কিংবা বিঘিœত হয়। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাতে সমস্যায় পড়ে।

টানা পাঁচ দিন দেশকে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন রেখে ২৩ জুলাই ধীরে ধীরে তা সচল করে বিগত সরকার। যদিও সে ইন্টারনেট ছিল কচ্ছপগতির। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ বিভিন্ন বার্তা আদান-প্রদানের প্ল্যাটফর্ম বন্ধ রাখা হয়। অন্যদের ওপর বিধিনিষেধ দিয়েও প্রতিমন্ত্রী পলক কিন্তু নিজে ফেসবুকে সক্রিয় থেকে ঠিকই নিয়মিত পোস্ট দিচ্ছিলেন। টানা ১০ দিন পর চালু হয় মোবাইল ইন্টারনেট। আর ১৪ দিন পর আবার চালু করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানায়, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে পাঁচ দিনে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে। টানা পাঁচ দিন ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে বলে জানিয়ে দেন এখাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়ে দেন আইসিটি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার বিষয়টি বিবেচনায় আসবে। অনেক ব্যবসায়ী গ্রাহকের আস্থা হারাবেন। মহাখালীতে ডেটা সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে বলা হয়, দেশের ইন্টারনেট অবকাঠামো একটি জায়গাকেন্দ্রিক কেন হবে এবং কেন এর বিকল্প ব্যবস্থা থাকবে না।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষেত্রে মহাখালীতে ক্ষয়ক্ষতির যে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কারণ গত বছর মহাখালীর খাজা টাওয়ার পুড়ে যাওয়ার পরও দেশজুড়ে ইন্টারনেট সচল ছিল। যদিও কিছুটা বিঘœ ঘটেছে। খাজা টাওয়ার স্থাপনা থেকে দেশজুড়ে মোট চাহিদার ২০ শতাংশের মতো ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করা হয়।

এদিন শেখ হাসিনা আন্দোলনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিটিভি ভবনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়। সেখানেও আগুন দেওয়া হয়েছে। সেতু ভবনে দুবার আগুন দেওয়া হয়। সেখানে ৫০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশন ভাঙচুর। দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ডিপোতে হামলা। শনির আখড়ায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন ও ভাঙচুর। বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে হামলা ও আগুন। ধানমন্ডির পিটিআইয়ের অফিসে হামলা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিসে হামলা-ভাঙচুর ও শতাধিক গাড়িতে আগুন। মহাখালীর ডাটা সেন্টারে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সাবমেরিন কেবল নষ্ট করা হয়। মহাখালী করোনা হাসপাতাল, পুষ্টি ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিআরটিএ ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে। আফতাবনগর ওয়াসা শোধনাগারে হামলা। বাড্ডা, নিউমার্কেট ও নীলক্ষেতে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ। রায়পুর পুলিশ কেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিসংযোগ। রামপুরা থানা পুলিশে অগ্নিসংযোগ। মেরাদিয়া পিবিআই কার্যালয় ভাঙচুর। উত্তরায় রেললাইন উপড়ে ফেলা। মৌচাক পুলিশ বক্স; বসিলায় সিটি হাসপাতালে হামলা। কদমতলী, মোহাম্মদপুর থানায় হামলা; বরিশালে র‌্যাবের কার্যালয়ে হামলা। গাড়ির ভেতরে র‌্যাব সদস্যকে হত্যা করা; পুলিশকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ভাঙচুর করা হয় ফকিরাপুল পুলিশ বক্স, উত্তরা পুলিশের ডিসির কার্যালয় ও টিএসটির আঞ্চলিক অফিস, টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের কার্যালয় এবং মধুপুর ও কালিহাতি উপজেলায় দলের কার্যালয়। গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে আহত করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও ১১টি মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়। গাইবান্ধায় রেললাইন উপড়ে ফেলা ও অগ্নি-সংযোগ, বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। জাসদ কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, সাংস্কৃতিক জোটের কার্যালয়, পুলিশবক্স, সদর ভূমি অফিস, রেল স্টেশন, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ, সদর থানা, সিটি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকে ভাঙচুর করা হয়। কোনাবাড়ি থানা এবং ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। কোনাবাড়ি পুলিশ থানা, বাসন থানার চৌরাস্তা পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। গাছায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আগুন দিয়ে ২০টি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। টঙ্গীতে ডেসকোর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ, বেক্সিমকো গার্মেন্টসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, টঙ্গী পূর্ব থানায় হামলা করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা হাসপাতালে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অফিসে হামলা, নারায়ণগঞ্জে আগুন দিয়ে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিকে পুড়িয়ে দেয়া হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রথম আলোর প্রকাশিত তথ্যের হিসাবে, কোটা আন্দোলন শুরুর পর ১৬ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে ১৯৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট করে হতাহতের সংখ্যা জানানো হয়নি। তবে সপ্তাহব্যাপী সহিংসতায় আন্দোলনকারী কিংবা সাধারণ মানুষ কত জন মারা গেছেন, এর তথ্য সরকারের কাছে নেই বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

২৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কারের সার্কুলার জারি করলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনের চার সংগঠক তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারফিউর মধ্যেও বিরোধী নেতা ও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গ্রেপ্তার ও অভিযান অব্যাহত রাখা হয়। সেদিনও বহু মানুষ নিহত হয়। বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রাখে সরকার। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাগুলি ধীরে ধীরে অগ্রাধিকার দিয়ে পুনরায় চালু করা হয়। পরের দিন সম্পূর্ণ চালু করা হয়।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে কয়েকটি কথা জনপ্রিয় হয়, তার মধ্যে একটি ছিল ‘নাটক কম করো পিও’। এমনই এক ‘নাটক’ করতে ২৩ জুলাই মহাখালীতে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী পলক। তিনি ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ ডেটা সেন্টার দেখতে যাবেন। বড় এক বহর নিয়ে পলক মহাখালী যান। ইন্টারনেট বন্ধ করা নিয়ে একেক সময় একেক কথা বলতে থাকেন তিনি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়েন।

দেশে গত সপ্তাহে সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টের জেরে সারাদেশে কারফিউ জারি করে সরকার। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। শুক্র ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির পর রবি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন দিন নির্বাহী আদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে এই করিফিউ শুরু হয়। পরদিন শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে রবিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বলবৎ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ফের দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারিফউ শুরু হয়; যা সোমবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবার বিরতি দেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলায় আলাদা আলাদাভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। এদিন রাজধানী ঢাকায় দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। এরপর ঢাকাসহ চার জেলায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফের কারফিউ শিথিলের ঘোষণা আসে।

এদিন বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন তিনদিন পর অফিস খোলার কথা জানান, তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সময়সূচি বাংলাদেশ ব্যাংক নেবে বলে জানান তিনি।এদিকে, রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়। এছাড়া অন্যান্য জেলায় কারফিউ শিথিলের সময় জেলা প্রশাসকরা নির্ধারণ করেন। দেশে সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টের জেরে সরকার সারাদেশে কারফিউ জারি করে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।

আগের শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে এই করিফিউ শুরু হয়। পরদিন শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি দিয়ে রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বলবৎ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ফের দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারিফউ শুরু হয়; যা সোমবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আবার বিরতি দেওয়া হয়। এরপর মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলায় আলাদা আলাদাভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। এদিন রাজধানী ঢাকায় দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়। কারফিউ পরিস্থিতে সারাদেশে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। জরুরি পরিষেবাসহ গণমাধ্যম কারফিউয়ের আওতামুক্ত রাখা হয়। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট কারফিউয়ের আওতামুক্ত রাখা হয়। এসব যাত্রীকে বিমানের টিকেট সঙ্গে রাখতে বলা হয়।